Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দায় স্বীকার করে আদালতে ৩ ধর্ষকের জবানবন্দি

সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ

ফয়সাল আমীন | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৫ এএম

সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূ গণধর্ষণ ঘটনায় দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে প্রধান আসামি সাইফুর রহমানসহ তিন ধর্ষক। অন্যরা হলেন মামলার চার নাম্বার আসামি অর্জুন ও পাঁচ নাম্বার রবিউল ইসলাম। গতকাল বিকাল ও সন্ধ্যার পর পৃথকভাবে সিলেটের অতিরিক্ত মূখ্য মহানগর হাকিম মো. জিয়াদুর রহমানের আদালতে সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর ও সিলেট মহানগর হাকিম-২ সাইফুর রহমানের আদালতে রবিউল ইসলাম ধর্ষণের ঘটনায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। এদিকে, গণধর্ষণ ঘটনার তদন্ত শেষে গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি। এছাড়া সরকার দলীয় গণধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে সিলেটে উলামা মাশায়েখ পরিষদ বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
দায় স্বীকার করে জবানবন্দি : সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে এই মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমানসহ আরও দুজন। জবানবন্দি দেওয়া অন্যরা হলো; অর্জুন লস্কর ও রবিউল ইসলাম। জবানবন্দিতে মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। ঘটনার মূল হোতা ছাত্রলীগ নেতা সোহাগে নেতৃত্বে ওই গৃহবধূকে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে পৃথক জবানবন্দিতে তারা আদালতকে জানায়।
সূত্র জানায়, পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে গতকাল দুপুরে আদালতে তোলা হয় সাইফুর, অর্জুন ও রবিউলকে। দুপুরে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে দিয়ে তাদেরকে আদালত প্রাঙ্গণে হাজির করে শাহপরান থানা পুলিশ। তিন আসামির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার তথ্য জানান এই আদালতের এপিপি মাহফুজুর রহমান।
এর আগে গত রোববার সকাল ৬টার দিকে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার মনতলা এলাকা থেকে গণধর্ষণ মামলার চার নম্বর আসামি অর্জুন লস্করকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। আর ওই দিন সকালেই ছাতক খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেফতার করা হয় মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমানকে। এছাড়া ৫ নম্বর আসামি রবিউল হাসানকে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জের নিজগ্রাম থেকে রোববার রাতে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। আটকের পর এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি সাইফুর রহমান ও আসামি অর্জুন লস্কর গত সোমবার দুপুরে এবং একইদিন বিকেলে মামলার ৫নং আসামি রবিউল ইসলামকে পাঁচদিনের রিমান্ড দেয় সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান। এছাড়া রবিউলের পরিবার এ ঘটনার পর জড়িতদের কঠিন শাস্তি দাবি করেছেন।
অপরদিকে সন্দেহভাজন আসামি রাজন আহমদ, আইনুদ্দিন ও শাহ মাহবুবর রহমান রনির রিমান্ডের মেয়াদ আজ (শনিবার) হবে শেষ। রিমান্ড শেষে তাদেরও আদালতে তোলার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সূত্র। অন্যদিনে পুলিশের রিমান্ডে থাকা গণধর্ষণ মামলার অপর আসামি তারেক ও মাহফুজুর রহমান মাসুমের রিমান্ডের মেয়াদ কাল (রোববার) হবে শেষ।
৬ দফা সুপারিশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির : এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষের তদারকিতে ঘাটতি পেয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। এ জন্য কলেজ ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আরও কর্মতৎপর ও দায়িত্বশীল হওয়া এবং ক্যাম্পাসকে নিরাপদ রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপনসহ ছয় দফা সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনার পর কলেজ প্রশাসনের ভ‚মিকা খতিয়ে দেখতে গত সোমবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) মো. শাহেদুল খবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠন করা হয় ৩ সদস্যেও কমিটি। কমিটি এমসি কলেজ ক্যাম্পাস পরিদর্শন করে তৈরি করে এই প্রতিবেদন। কমিটি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় ঘাটতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণ ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে কলেজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেনি কমিটি। তবে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়। তদন্ত কমিটি অন্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুরো ক্যাম্পাসে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতাদের সহযোগিতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়মিত পরিদর্শন করা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাতি স্থাপন ও জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করা।
উলামা মাশায়েখ এর বিক্ষোভ মিছিল : গণধর্ষণের প্রতিবাদে ও ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে উলামা মাশায়েখ পরিষদ সিলেট। গতকাল বাদ জুমআ নগরীর ঐতিহাসিক কোর্ট পয়েন্ট থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট প্রদক্ষিণ করে সুরমা মার্কেট পয়েন্টে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়। মিছিলে উলামা মাশায়েখ পরিষদ সিলেটের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন মসজিদ থেকে অংশগ্রহণ করেন বিপুল সংখ্যক মুসল্লি। বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল হালিমের সভাপতিত্বে ও প্রিন্সিপাল মাওলানা ড. এ.এইচ.এম সোলায়মানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী খ্যাত হযরত শাহজালাল (র.) ও হযরত শাহপরান (র.) সহ ৩৬০ আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত পূণ্যভূমি সিলেটের মাটিতে এমসি কলেজের মতো শতবর্ষের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাসে স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে ছিনিয়ে নিয়ে পালাক্রমে গণধর্ষণ আইয়্যামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। অবিলম্বে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান বক্তারা। মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করেন, আলেমে দ্বীন মুফতি মাওলানা আলী হায়দার, মাওলানা আলা উদ্দীন, মাওলানা মুশাহিদ আহমদ, মাওলানা ওলিউর রহমান সিরাজী, মুহাদ্দিস মাওলানা হাবীবুল্লাহ, প্রমূখ।
টিলাগড়বাসীর মানববন্ধন আজ : সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় টিলাগড় এলাকাবাসী আজ সকাল ১১টায় এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে। মানববন্ধনে অংশ নেয়ার আহবান জানিয়ে গতকাল বাদ জুম’আ মসজিদে মসজিদে প্রদান করা হয়েছে দাওয়াত। এব্যাপারে টিলাগড় কেন্দ্রিয় জামে মসজিদের মোতওয়াল্লী ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ অধ্যাপক (অব:) মকসুদ আলী বলেন, ব্যাপকভাবে দাওয়াত প্রদান করা হয়েছে। একটি সফল মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের মধ্যে দিয়ে গণধর্ষণকারীদের বিচার ও বহিরাগত অপরাধিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শুরু করব আমরা।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হন এক তরুণী। রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্বামীর কাছ থেকে ওই তরুণীকে জোর করে তুলে নিয়ে ছাত্রাবাসে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় কলেজের সামনে তার স্বামীকে বেঁধে রাখা হয়। এ ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা করেন। মামলায় ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করা হয়। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, এমসি কলেজ ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমান, কলেজের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাছুম, অর্জুন লস্কর, বহিরাগত ছাত্রলীগ কর্মী রবিউল এবং তারেক আহমদ। মামলার অপর তিন আসামি অজ্ঞাত। এজাহারভূক্ত ছয় আসামিসহ মোট ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে পাঁচদিন করে প্রত্যেককে রিমান্ডে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।



 

Show all comments
  • Sharmin Sultana ৩ অক্টোবর, ২০২০, ৫:৫৬ এএম says : 0
    কোনো কথা হবে না, আওয়াজও হবে না, শুধু হাতুড়ি দিয়ে জায়গামতো উরাধুরা বারি দিতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Shiful Islam ৩ অক্টোবর, ২০২০, ৫:৫৬ এএম says : 0
    " তোরা যা ইচ্ছা তাই কর, কোন ঝামেলা হলে শুধু ভাইকে বলবি ভাই সব সামলায় নিব" এই মহান বাণী দিয়ে বড় ভাই নামে গুন্ডা ছোট গুন্ডাদের উজ্জ্বীবিত করে।
    Total Reply(0) Reply
  • Zaifa Shahaba Hania ৩ অক্টোবর, ২০২০, ৫:৫৭ এএম says : 0
    ????????দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে আওমীলীগের লোকেরা ভয়ংকর হয়ে উঠছে দিন দিন, তাই আওমীলীগের বিরুদ্ধে ;;;;ঘোষণা করা হউক
    Total Reply(0) Reply
  • Mujibur Rahman ৩ অক্টোবর, ২০২০, ৫:৫৮ এএম says : 0
    আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল । আশা করছি যথাযথ কতৃপক্ষ জরুরী ব্যাবস্থা নেবেন । এই কলঙ্ক ভুক্তভোগী পরিবার আজীবন কাঁধে নিয়ে বেঁচে থাকবে । কিছু সময়ের জন্য তাদের দুঃখের কথা স্মরণ করে আমরা সবাই মিলে সঠিক বিচারের প্রত্যাশা করছি । পরে হয়তো বা সকলে ভূলে যাবো। আল্লাহপাক পাকের দরবারে আশা করছি সঠিক বিচার পাবো : ইনশাআল্লাহ । আল্লাহ পাক সকলকে হেফাজত করুন ।
    Total Reply(0) Reply
  • Hangsha Kumar Hangsha Kumar ৩ অক্টোবর, ২০২০, ৫:৫৯ এএম says : 0
    একটা বিষয় কিছুতেই সমাধা করতে পারছি না, মানুষ দিন,দিন সচেতন হচ্ছে নাকি অচেতন হচ্ছে, লেখাপড়া শিখে এরা কি মানুষ হচ্ছে নাকি গোল্লায় যাচ্ছে, এরা কি শিখতে ভুল করছে নাকি শিক্ষকরা শেখাতে ভুল করছে? যারা এই কাজটি করেছে, তাদেরও তো মা, বোন, বউ আছে। এত কিছুর সমাধান কবে হবে? কয়েক দিন পর,পর একটা করে ঘটনা ঘটবে আর নির্যাতিতা মামলা করে, বিচারের জন্য পথে, পথে ঘুরবে। এটাই কি সমাধান?
    Total Reply(0) Reply
  • এমএম আকাশ ৪ অক্টোবর, ২০২০, ৮:২৩ এএম says : 0
    কিসের আদালত, আর কিসের তদন্ত, যে লীগেরই হউক না কেন, আসামি যখন হাতে নাতে ধরা পরেছে, বিচার সাথে সাথে ঐ কলেজ মাঠেই জনগনের সামনেই হওয়া উচিত। আর ভবিষ্যতে প্রত্যেক রাজনৈতিক পার্টির তাদের কর্মীদের জন্য ভাড়া করা কিছু ললনা রাখা উচিৎ, যাতে করে নিরীহ মেয়েদের উপরে কুদ্রীষ্টি না পরে। এখন না সামলাতে পারলেন, পরে তাদের পালা, যারা তাদের সারা জীবন পোষে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গণধর্ষণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ