বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বিশ্বের ইতিহাসে সফল শাসকদের অন্যতম ছিলেন খলীফা ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ। শাসনকাল ৯৯ হতে ১০১ হিজরি। তিনি উমাইয়া শাসকদের একজন। মাত্র ২ বছরে মুসলিম বিশ্বে নবুওয়তী ধারার খেলাফতি রাষ্ট্র ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত করেন। মুসলিম জাহানে শান্তি ও সমৃদ্ধির উৎকর্ষ সধিত হয়।
আটলান্টিক থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত কোনো দরিদ্র নাগরিক খুঁজে পাওয়া যেত না। যাকাত নেয়ার লোক না থাকায় সেই তহবিল দিয়ে ক্রীতদাস কিনে আজাদ করে দেয়া হতো। নাগরিকদের সুখ শান্তির প্রতি খেয়াল থেকে তিনি ব্যক্তিগত নিরাপত্তার চিন্তা করতেন না বললেই চলে। প্রহরীদের জন নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত করেন।
নিজের নিরাপত্তার জন্য উপদেষ্টারা জোর দিলে বলতেন, ‘আমার পাহারায় মৃত্যুকেই নিয়োজিত করেছি। তার নির্ধারিত সময়ের আগে আর কেউ আমাকে মারতে পারবে না। আর যখন নির্ধারিত সময়ে মৃত্যু আসবে, তখন সারা সৃষ্টিজগত মিলেও আমাকে বাঁচাতে পারবে না।’
পূর্বেকার শাসকদের লুটপাট, বিলাসিতা ও জনগণের সম্পদগ্রাস তিনি পছন্দ করতেন না। ক্ষমতায় বসেই তাদের সব অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রের অনুক‚লে বাজেয়াপ্ত করেন। দুর্নীতি, অপচয়, শোষণ সর্বাংশে বন্ধ করেন। শাসক ও অভিজাত শ্রেণি তার শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। নিজ গোষ্ঠীর লোকেরাও তার প্রাণহানীর চেষ্টা শুরু করে। অবশেষে তাকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করে তারা।
অবশ্য বিষজনিত কারণে তিনি মারা গিয়েছিলেন, একথা প্রমাণিত নয়। তার স্ত্রী বাদশা আব্দুল মালিকের মেয়ে ফাতিমা বলেন, আল্লাহতায়ালার সীমাহীন ভয় এবং জাতির কল্যাণে তার কল্পনাতীত কষ্ট সাধনা ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের মৃত্যুর কারণ। বিষ প্রয়োগে তার ক্ষতি হয়েছিল বটে, তবে এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি মারা যাননি। তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন এবং পরে সাধারণ স্বাস্থ্যহানীতে বিশেষ করে আল্লাহর ভয়ে অধিক সাধনা ও জনকল্যাণে অকল্পনীয় পরিশ্রমে তার মৃত্যু হয়।
তার পানাহার দায়িত্বে নিয়োজিত খাদেমকে তার বংশের লোকেরাই খাদ্যে বিষ মেশানোর কাজে ব্যবহার করে। সে রাজী না হলে এক হাজার দিনার প্রদান করে। এতেও রাজী না হলে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। শেষ পর্যন্ত খাদেম পানির সাথে বিষ মিশিয়ে দেয়। পানি পানের পর ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ বিষক্রিয়া টের পান। তাবেয়ী মুজাহিদ রহ. বলেন, ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, জনগণ আমার ব্যাপারে কি বলাবলি করে? মুজাহিদ জবাব দেন, লোকেরা বলে, আপনাকে জাদু করা হয়েছে। খলীফা বলেন, আসলে আমাকে বিষ পান করানো হয়েছে।
তিনি পানাহারের দায়িত্বে থাকা খাদেমকে ডেকে বললেন, কেন তুমি আমাকে বিষ দিলে? সে বলল, এক হাজার দিনার ও মুক্ত হওয়ার লোভে। খলীফা বললেন, দিনারগুলো নিয়ে আসো। এসব তিনি জনগণের তহবিলে রেখে দিলেন। বললেন, যারা এসব দিয়েছে, তারা নিজেদের টাকা দেয়নি। জনগণ থেকে চুরি করা টাকা থেকেই আমাকে হত্যার জন্য দিয়েছে। আর তুমি এখন মুক্ত। রাষ্ট্রের কোনো দায়িত্বশীলের সামনে কখনো পড়বে না। সাম্রাজ্যের যে কোনো অঞ্চলে জীবন কাটিয়ে দাও।
উপদেষ্টারা বললেন, তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হোক। খলীফা জবাব দিলেন, সে তো আমাকে হত্যা করেনি। চেষ্টা করেছে মাত্র। আমার মৃত্যু হলে সে অপরাধী হয়ে যাবে। তাই তাকে ক্ষমা করে দিচ্ছি। এর বিনিময় আমি আল্লাহর কাছে পাব। আখেরাতে এই বিনিময় হবে অনেক দামী। দেরি করে তাকে মৃত্যুদন্ড দিলে কিসাস গ্রহণ করা যাবে।
তবে, ক্ষমা করে দেয়ার অফুরন্ত মর্যাদা ও কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হতে হবে। পাশাপাশি আমি যড়যন্ত্রের সঙ্গে বাকি সবাইকেও ক্ষমা করে দিলাম। সব বিনিময় আমি পরকালেই পেতে চাই। এর কিছুদিন পর খলীফা ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ ইন্তেকাল করেন। ইতিহাসে তাকে দ্বিতীয় ওমর বলা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।