বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সেন্টমার্টিনদ্বীপে পর্যটক সীমিতকরণ এবং রাত্রিযাপন নিষিদ্ধকরণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে পর্যটনশিল্প, স্থানীয় জনগণ এবং ব্যবসায়ীদের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এতে জীবিকা হারাবে স্থানীয় বাসিন্দারা এবং ঝুঁকিতে পড়বে বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। কর্মসংস্থান হারা হবে পর্যটনশিল্পে নিয়োজিত লক্ষাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারি।
তাই পর্যটন বিরোধী এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবী জানিয়েছে ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার-টুয়াক। এসব বিবেচনায় সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছে পর্যটন ভিত্তিক এই সংগঠনটি।
শুক্রবার (২ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজার শহরের একটি কনফারেন্স হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে টুয়াক বলেছে- বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করার জন্য অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে প্রতিদিন ১২৫০ জন পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলে বিদেশী পর্যটক বাংলাদেশ ভ্রমণে না আসার পাশাপাশি দেশীয় পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে বিমুখ হবে।
এতে সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণ ব্যবসা ক্ষতি হওয়ার সাথে সাথে হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে গড়ে উঠা কক্সবাজার পর্যটন ব্যবসাও ক্ষতি সাধিত হবে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপকে ঘিরে পর্যটক ভ্রমণ সেবা প্রদানের মাধ্যমে দুইশতাধিক ট্যুর অপারেটর ও পাঁচ শতাধিক গাইড এবং লক্ষাধিক পর্যটকসেবি কর্মকর্তা-কর্মচারি তাদের কর্মসংস্থান হারাবে।
স্থানীয় জনগণ সেন্টমার্টিনদ্বীপে পর্যটন শিল্প বিকশিত হওয়ার পূর্বের অবস্থায় গিয়ে সমুদ্র হতে মাছ আহরণ, প্রবাল উত্তোলন, প্রবাল পাথরকে নির্মাণ কাজে ব্যবহার, মাছের অভয়ারণ্য ধ্বংস, শামুক-ঝিনুক সংগ্রহ করে নানা উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করবে। এতে দ্বীপের পরিবেশ মারাত্মক হুমকীর সম্মুখিন হবে।
গত ৭ মাস করোনার প্রভাবে পর্যটন স্পট বন্ধ থাকার ফলে পর্যটন ব্যবসায়িরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। অন্যদিকে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িরা সরকারী কোন সহায়তা পায় নি। এমতাবস্থায়, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলে পর্যটনশিল্পে ধ্বস নামবে।
এসব বিবেচনায় সেন্টমার্টিন দ্বীপকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ৩টি দাবি দিয়েছেন টুয়াকের সভাপতি তোফায়েল আহম্মেদ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত দাবিসমূহ হলো-
০১. চলমান অবস্থায় আগামী পাঁচ বছর পর্যটকদের সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমনের সুযোগ অব্যহত রাখতে হবে।
০২. স্বদেশী পর্যটকদের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় অর্ন্তভুক্ত না করা এবং কোন প্রকার সেবা/ভ্রমণ চার্জ আরোপ না করা। শুধুমাত্র বিদেশী পর্যটকদের নিবন্ধনের আওতায় আনা ও বিদেশী পর্যটকদের ক্ষেত্রে সেবা/ভ্রমণ চার্জ আরোপ করা যেতে পারে।
০৩. টুয়াকের গৃহীত ‘প্লাস্টিক ফ্রি ইকো ট্যুরিজম, কক্সবাজার’ নামক প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়িত করার অনুমোদন ও সহায়তা প্রদান করা।
পর্যটন ও পরিবেশের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে রেসপন্সিবল ইকো ট্যুরিজম বাস্তবায়ণের মাধ্যমে সেন্টমার্টিনদ্বীপ নিয়ে সৃষ্ট সংকট নিরসনে টুয়াকের ১২ টি প্রস্তাবনার কথা সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। এগুলো যতাক্রমে-
১) সেন্টমার্টিনদ্বীপে পরিবেশ রক্ষার জন্য ক্ষতিকারক সকল ধরণের প্লাস্টিকজাত পণ্য ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্যের ব্যবহার ও সরবরাহ নিশ্চিতকরণ।
২) দ্বীপের ভাঙ্গনরোধে মূল ভূখন্ড থেকে ৫০০ মিটার দীর্ঘ আধুনিক জেটি তৈরির মাধ্যমে ভারসাম্য রক্ষা করা।
৩) পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ইকো হোটেল, মোটেল এবং হোম স্টে মডেল তৈরী ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করা।
৪) দ্বীপে উৎপাদিত সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা এবং জেনারেটর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।
৫) দ্বীপের একটি অংশকে পর্যটকদের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে জীব বৈচিত্র্যের জন্য অভয়ারুণ্য ঘোষনা করা।
৬) পর্যটক এবং স্থানীয়দের ময়লা-আবর্জনা একটি নির্ধারিত স্থানে সংগ্রহ করে অপচনশীল আর্বজনাগুলোকে দেশের মূল ভূখন্ডে নিয়ে আসা এবং প্লাস্টিক ফ্রি সেন্টমার্টিন ঘোষনার প্রকল্প গ্রহণ করা।
৭) সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভাঙ্গনরোধে জিও ব্যাগের পরিবর্তে চারপাশে বেশি বেশি কেয়াবন তৈরি, নারিকেল গাছ ও ঝাউগাছের বেষ্টনী তৈরী করে বালিয়াড়ি রক্ষা করা।
৮) সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভূগর্ভস্থ ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক সেন্ট্রাল এসটিপি বাস্তবায়নের প্রকল্প গ্রহণ করা।
৯) দ্বীপের ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমাতে সমুদ্রের পানিকে শোধন করে ব্যবহার উপযোগী করার প্রকল্প গ্রহণ করা।
১০) প্রবাল প্রাচীরের সুরক্ষা এবং প্রবাল পাথরের স্তর বৃদ্ধিতে দেশি-বিদেশি বৈজ্ঞানিকদের নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা।
১১) আন্ডারওয়াটার ন্যাচার সংরক্ষণে পদক্ষেপ গ্রহণ, সমুদ্র তলদেশের প্রবাল উত্তোলণ ও মৎস্য প্রজননে ব্যঘাত ঘটে এমন কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করা এবং সচেতনতা সৃষ্টি করা।
১২) ব্লু ইকোনমিতে মেরিন ট্যুরিজম বিকশিত করতে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে রেসপন্সিবল ইকো ট্যুরিজম মডেল হিসেবে গড়ে তোলা।
গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন টুয়াকের প্রধান উপদেষ্টা ও জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান মুফিজ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- টুয়াকের সিনিয়র সহ-সভাপতি আনোয়ার কামাল, সহসভাপতি হোসাইন ইসলাম বাহাদুর, সাধারণ সম্পাদক আসাফ উদ দৌলা আশেক, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আজম, যুগ্ম সম্পাদক আল আমীন বিশ্বাস, এসএ কাজল, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সম্পাদক মোঃ তোহা ইসলাম, শহিদুল্লাহ নাঈম, মোহাম্মদ ইউছুপ, মোহাম্মদ শিবলি সাদেক, মুহাম্মদ মুসা, জিল্লুর রহমান চৌধুরী, আবদুস সাত্তার, সাইম রহমান অভি প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।