Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সরকারি প্রণোদনা বঞ্চিত

সিপিডির ভার্চুয়াল নীতি সংলাপে বক্তারা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০২ এএম

নীতিমালায় নানা জটিলতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তারা সরকারি সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দ্রুত প্রণোদনার অর্থছাড়ের জন্য ব্যাংকিং নীতিমালা সংস্কার জরুরি। এজন্য করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় শিল্পখাতের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য জরুরিভিত্তিতে একটি সমন্বিত ডাটাবেজ গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তারা। তারা বলেন, ইলেক্ট্রনিক প্রক্রিয়ায় ছাড়কৃত ঋণের তথ্য সংযুক্ত করে এ ডাটাবেজকে সমৃদ্ধ করা সম্ভব। একই সঙ্গে কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) জন্য একটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং এ খাতে প্রণোদনার অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে কোন্ডলেটারেলের বাধ্যবাধকতা রদ করে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির পরামর্শ দেন তারা। 

গতকাল সিটিজেন্স প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজিস, বাংলাদেশ এবং বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘করোনা-পরবর্তী কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অবস্থা এবং প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যকারিতা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল নীতি সংলাপে অংশ নিয়ে বক্তারা এ দাবি জানান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়‚ন।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিল্ডের চেয়ারপারসন আবুল কাশেম খান। ভার্চুয়াল আলোচনায় সিপিডির ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান, এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি সৈয়দ আসিফ ইব্রাহীম, প্রফেসর ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, বগুড়ার হালকা প্রকৌশল উদ্যোক্তা হারুনুর রশিদ, নারী উদ্যোক্তা হুমায়রা চৌধুরী, রংপুর উইম্যান্স চেম্বারের সভাপতি আনোয়ারা ফেরদৌসি, আইটি উদ্যোক্তা সৈয়দ আলমাস কবির, ব্র্যাক ব্যাংকের এসএমই বিভাগের প্রধান সৈয়দ আব্দুল মোমেনসহ কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা।
বক্তারা বলেন, দেশের প্রায় ৭৮ লাখ কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) রয়েছে, যার ৯৯ শতাংশ বেসরকারি খাতে গড়ে উঠেছে। এসব শিল্প-কারখানা জিডিপিতে ২৫ শতাংশ, রফতানি ৮০ শতাংশ এবং কর্মসংস্থানে প্রায় ৫০ শতাংশ অবদান রাখছে। করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের সিএমএসএমই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ খাতের জন্য সরকার থেকে বিভিন্ন প্যাকেজের আওতায় ৫৯ হাজার ২৯২ কোটি টাকা আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা
প্রণোদনার ৯৪ শতাংশই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ছাড় করা হলেও এখন পর্যন্ত চার হাজার ১২০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। করোনায় নানা জটিলতার কারণে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তারা সরকারি সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা দ্রæত প্রণোদনার অর্থছাড়ের জন্য ব্যাংকিং নীতিমালা সংস্কারের দাবি জানান।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও তাদেরকে ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায় আনার সুযোগ নেই জানিয়ে জাতীয় অর্থনীতি চাঙ্গা করতে বিকল্প উপায়ে ক্ষতিগ্রস্ত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার দাবি জানান বক্তারা।
বক্তারা বলেন, সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে জন্য ভ্যাট ও ট্যাক্সে ছাড় দেয়ার পাশাপাশি বাড়িভাড়া, ইউটিলিটি বিলের একটি অংশ ঘোষিত প্রণোদনা থেকে বহন করতে হবে। ব্যাংকগুলোকে সম্পদভিত্তিক অর্থায়নের পরিবর্তে তারল্যভিত্তিক অর্থায়ন, ভ্যাট ও ট্যাক্স আদায় ও অডিট প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং বিসিক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে উদ্যোক্তাবান্ধব ঋণ কর্মসূচি গ্রহণের পরামর্শ দেন তারা।
করোনার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্প উদ্যোক্তাদের সমস্যা মোকাবিলায় একটি সমন্বিত নীতিমালা গ্রহণ করা হবে জানিয়ে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, এর আলোকে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। এ নীতিমালা প্রণয়নে তিনি বেসরকারি খাত ও থিংক-ট্যাংকের সক্রিয় অংশগ্রহণ কামনা করেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের চাকা সচল রেখে জাতীয় অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতেই বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এর কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য তিনি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের পরামর্শ দেন। এ ছাড়া বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে কোন্ডলেটারেলের বাধ্যবাধকতা তুলে দিয়ে সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বিবেচনায় প্রণোদনার অর্থ মঞ্জুরের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য একটি সমন্বিত সংজ্ঞা নির্ধারণ করার দাবিকে অত্যন্ত যৌক্তিক বলে উল্লেখ শিল্পমন্ত্রী। তিনি বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশন এ ধরনের একটি সমন্বিত ডাটাবেজ তৈরি করবে। এর মাধ্যমে দেশে প্রকৃত শিল্প উদ্যোক্তার সংখ্যা নির্ধারণ এবং প্রণোদনার অর্থছাড় সহজ হবে।
তবে কুটির, অতিক্ষুদ্র ওক্ষুদ্র শিল্পের জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও বিশেষ সহায়তা নিশ্চিত করতে একটি আলাদা সংজ্ঞা নির্ধারণ ফলপ্রসূ হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিপিডি

২৭ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ