বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলামপূর্ব জাহেলী যুগে বর্বর হত্যাযজ্ঞের মধ্যে দূত হত্যা করা ছিল সাধারণ ব্যাপার, কিন্তু ইসলামে দূত হত্যা নিষিদ্ধ করা হয়। রাসূলুল্লাহ (সা:) মদীনায় হিজরতের প্রাথমিক বছরগুলোতে এ বর্বর প্রথা নিষিদ্ধ করলেও বিভিন্ন দেশে প্রেরিত মুসলিম দূত হত্যা থেমে যায়নি এবং এরূপ রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর প্রেরিত বিভিন্ন দূত বিভিন্ন স্থানে হত্যার শিকার হয়েছেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা:) কখনো কোনো দূত হত্যা করেননি, বরং দূত হত্যা সর্বপ্রথম তিনিই নিষিদ্ধ করেন। এমনকি একজন দূতের ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর সাথে হত্যার যোগ্য হলেও তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন। ঘটনাটি বিভিন্ন সীরাতগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। সংক্ষেপে তা এইরূপ: বর্ণনা অনুযায়ী, বানু হানাফিয়া প্রতিনিধি দলের বর্ণনা প্রসঙ্গে মোসায়লামার চিঠির উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলা হয়, হুজুর (সা:) তার চিঠির জবাব দেন। এ পত্র বিনিময় হিজরি ১০ সালের শেষ দিকে হয়। জবাবী চিঠিখানা উদ্ধৃত করার পর বলা হয়: আবু দাউদ তায়ালিসি একটি বর্ণনা লিখেছেন যে, মোসায়লামার চিঠি এনেছিল দুই ব্যক্তি- ইবনুল নাওয়াহ ও ইবনে আনাল। রাসূলুল্লাহ (সা:) তাদেরকে বলেন: ‘বল, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ, বল।’ তারা বলল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোসায়লামাতু রাসূলুল্লাহ’। ইবনে ইসহাক বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) তাদের জিজ্ঞাসা করেন: ‘তোমরাও কি তাই বল যা সে বলে?’ তারা দু’জনেই বলল, ‘হ্যাঁ’। রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন: ‘যদি এটি রীতি না হতো যে, ‘কাসেদ’ (দূত) হত্যা করা যাবে না, তাহলে আমি তোমাকে হত্যা করতাম।
অন্য বর্ণনা মতে, রাসূলুল্লাহ (সা:) নির্দেশ দিয়েছেন যে, ‘দূত কখনো হত্যা করা যাবে না’। মোসায়লামা যখন ‘কাসেদ’ (দূত) প্রেরণ করে এবং সে গোস্তখানা (বেআদবি) আচরণ করে তখন তিনি বলেন: ‘দূত হত্যা করার রীতি নেই, নতুবা তোমাকে হত্যা করা হতো।’
অতঃপর বলা হয়, ঐতিহাসিকগণ এ ঘটনার উল্লেখ করে বলেন: ‘এই দিন হতে এটি একটি রীতি হয়ে যায় যে, দূত হত্যা করা যাবে না। এ সম্পর্কে একটি ঘটনার উল্লেখ করা হয়ে থাকে যে, হোদাইবিয়ার সন্ধির পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সা:) কোরেশদের নিকট যে দূত প্রেরণ করেছিলেন, কোরেশরা তার সোওয়ারির উট হত্যা করেছিল এবং দূতকেও হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল, কিন্তু বাইরের লোকেরা তাকে রক্ষা করে।
‘দূত হত্যা করা যাবে না’, রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর এ নির্দেশ মুসলমান এবং চুক্তিবদ্ধ কাফেরদের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য ছিল। আরো একটি ঘটনা। আবু রাফে বর্ণনা করেন যে, ‘আমাকে কোরেশরা রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর নিকট প্রেরণ করে। আমি যখন রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর সাথে দেখা করি, আমার অন্তরে ইসলামের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়।’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি কাফেরদের কাছে কখনো ফিরে যাব না।’ রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন, ‘আমি চুক্তি ভঙ্গ করতে পারি না এবং কাসেদদেরকে রাখতে পারি না, বরং তুমি ফেরত চলে যাও, আবার যখন তোমার অন্তরে সেই প্রভাব বিদ্যমান থাকে, যা বর্তমানে তোমার মধ্যে রয়েছে, তখন চলে আসবে।’ সুতরাং, সে চলে যায়। অতপর পুনরায় এসে ইসলাম গ্রহণ করে।
হোদায়বিয়ার সন্ধির পর আবু জান্দালের ঘটনার বিবরণ সকল সীরাত গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। বোখারীর বর্ণনা অনুযায়ী, আবু জান্দাল পায়ে শিকল পরা অবস্থায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর খেদমতে উপস্থিত হন এবং তার অবস্থা বর্ণনা করেন। তিনি বললেন, ‘মক্কাবাসীদের সাথে যে চুক্তি হয়েছে, তাতে একটি শর্ত হচ্ছে, মক্কা হতে যারা আসবে তাদেরকে ফেরত যেতে হবে। সুতরাং, তোমাকে মক্কায় ফেরত যেতে হবে। তবে কোনো নারী যদি মক্কা হতে আসে তাহলে তাকে ফেরত দেয়া হবে না।’
আবু জান্দালের দীর্ঘ কাহিনী রয়েছে। এ সম্পর্কে কোরআনে আয়াত নাজেল হয়। উল্লেখ্য, কাফেরদের পক্ষে চুক্তির প্রধান স্বাক্ষরকারী সোহেল ইবনে আমর ছিলেন আবু জান্দালের পিতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।