পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ সেই বিভীষিকাময় রাতের বর্ণনা দিয়েছেন। গতকাল বেলা দেড়টার দিকে সিলেট মহানগর হাকিম তৃতীয় আদালতের বিচারক শারমিন খানম নিলার কাছে উপস্থিত হয়ে তিনি ২২ ধারায় ঘটনার জবানবন্দি দেন। এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়াশি অভিযানে গতকাল পর্যন্ত অভিযুক্ত ২ আসামিকে আটক করা হয়েছে। কোন আসামি যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য সীমান্তে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন বিজিবি।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা সোয়া তিনটার দিকে গৃহবধূর জবানবন্দি দেওয়া শেষ হয়। জবানবন্দিতে সেদিনের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন নির্যাতিত গৃহবধূ। এ সময় ওই তরুণীর সঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য ও তার স্বামী উপস্থিত ছিলেন। সকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য নির্যাতিত গৃহবধূকে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টার থেকে আদালতে নিয়ে যান। পরে ২২ ধারায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন আদালত। বিষয়টি জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।
গণধর্ষণকারী ২ হোতা আটক
এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণকারী ২ হোতাকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল পৃথকভাবে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন, প্রধান আসামি সাইফুর রহমানকে (২৮) ও অর্জুন লস্কর (২৫)। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাতে ধর্ষণের ঘটনার পর এমসি কলেজ ছাত্রাবাস থেকে পালিয়ে জকিগঞ্জে নিজের বাড়িতে যান অর্জুন। পরের দিন বিকেলে জকিগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জের মাধবপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করেন। সেখান থেকে তিনি জকিগঞ্জের বাড়িতে এক ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। ভাইয়ের সঙ্গে একাধিকার তার যোগাযোগ করার তথ্য পায় গোয়েন্দা পুলিশ। সকালে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল মাধবপুরের মনতলা এলাকায় পৌঁছায়। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অর্জুনের অবস্থান শনাক্ত করে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মনতলা গ্রামে অর্জুনের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়।
মাধবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম দস্তগীর বলেন, অর্জুনকে আটকের বিষয়টি মাধবপুর থানাকে গোয়েন্দা বিভাগ থেকে শুধু অবহিত করা হয়েছে। পুরো অভিযানটি পরিচালনা করেছে গোয়েন্দারা। অর্জুনকে আটকের পর সেখান থেকে সরাসরি সিলেটে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেলে সিলেট জেলা গোয়েন্দা শাখার কর্তব্যরত একজন কর্মকর্তা বলেন, অর্জুন লস্করকে সিলেট এনে সিলেট মহানগর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমানকে (২৮) সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার সীমান্ত হয়ে ভারতে পালানোর সময় ভোর ছয়টার দিকে আটক করা হয়। সুনামগঞ্জের ছাতক থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ভোর ছয়টার দিকে সাইফুরকে আটক করে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। এরপর পরিচয় নিশ্চিত হয়ে সাইফুরকে আটক দেখানো হয়। দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে ছাতক থানা থেকে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
গ্রেফতার এড়াতে ছদ্মবেশে সাইফুর
সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে গণধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগকর্মী সাইফুর রহমান গ্রেফতার এড়াতে দাড়ি কামিয়ে ছদ্মবেশ ধরেছিলেন। তার মুখভর্তি দেড় ইঞ্চি পরিমাণ লম্বা দাড়ি ছিল। গতকাল পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর দেখা যায় সাইফুরের মুখে দাড়ি নেই। দুদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানোর পর রোববার সকালে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে সাইফুরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার এড়াতে নিজের চেহারায় পরিবর্তন এনেছিলেন তিনি। ধরেন ছদ্মবেশ। তার মুখে দাড়ি না থাকায় অবাক হন অনেক পুলিশ কর্মকর্তা। পুলিশ জানায়, সাইফুরের মুখে লম্বা দাড়ি থাকলেও গ্রেফতার এড়াতে দাড়ি কেটে ফেলেন। চুলও ছোট করে করেন তিনি। তবে ছদ্মবেশ ধরেও রক্ষা পাননি সাইফুর। গ্রেফতারের পর মহানগর পুলিশের শাহপরান থানায় সাইফুরকে হস্তান্তর করা হয়।
নজরদারিতে সীমান্ত
গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের ধরতে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সীমান্ত এলাকায় সর্তকবার্তা পাঠানোর পাশাপাশি সিলেট রেঞ্জের পুলিশ ও মহানগর পুলিশের সব থানায় ধর্ষকদের ছবি পাঠিয়ে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ধর্ষণ মামলার আসামিদের গ্রামের বাড়িতেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশের একাধিক দল। ধর্ষকদের গ্রেফতারে ইতোমধ্যে মহানগর পুলিশের সাতটি দল বিভিন্ন ধাপে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া সিলেট বিভাগের সবগুলো থানা পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারে সোর্সের মাধ্যমে নজরদারি বাড়িয়েছে।
তদন্ত কমিটিতে সেই ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক
সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে দুই নিরাপত্তা কর্মীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক মো. জামাল উদ্দিন। তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাকেই তদন্ত কমিটির সদস্য করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় আলোচনা-সমলোচনা চলছে। অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক মো. জামাল উদ্দিনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের কয়েকটি ব্লক দখল করে রেখেছিল ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী। ২০১২ সালেও তিনি ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক থাকাকালে অন্য ছাত্রদের কক্ষ থেকে তাড়াতে গিয়ে ছাত্রাবাসটি পুড়িয়ে দেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তখনকার সময়েও ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক মো. জামাল উদ্দিনের দায়িত্ব পালনে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল। এরপরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।