পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এক সময় পদ্মা নদী ছিল মাদারীপুরের শিবচর, জাজিরা এলাকার মানুষের চিরাচরিত দুঃখের কারণ। বর্ষা এলেই ডুবে যেতো রাস্তাঘাট। কখনও নৌকা, কখনও ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে চলতে হতো। দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য বলে তেমন কিছুই ছিল না। জীবিকার তাগিদে মানুষ পদ্মা পাড়ি দিয়ে চলে আসতো ঢাকায়। সময়ের আবর্তনে সেই পদ্মায় বদলে গেছে মানুষের জীবন। পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প এবং ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের কারণে অবিশ্বাস্য দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে পদ্মার এপাড়-ওপাড়। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের কারণে ঢাকা থেকে মাওয়ার দূরত্ব যেমন কমে গেছে, একইভাবে জাজিরা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের বিশাল কর্মযজ্ঞে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন উন্নত বিশ্বের মতোই সহজ ও আরামদায়ক। পদ্মার ওপাড়ে ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই দৃষ্টিনন্দন এক্সপ্রেসওয়ের চার লেনের সাথে রয়েছে সার্ভিস লেন। যেটা দিয়ে ঝুঁকিমুক্তভাবে চলছে ধীরগতির যানবাহন। সরেজমিনে জাজিরা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে ঘুরে দেখা গেছে, দৃষ্টিনন্দন এবং আধুনিক ট্রাফিক ডিজাইন সমন্বিত এক্সপ্রেসওয়ে উন্নত বিশ্বের সড়কের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্মিত। সার্ভিস লেনের দু’পাশে সবুজ বনায়ন। আর চার লেনের মাঝখানে ফুটে আছে রঙবেরঙের ফুল। সড়কের দুপাশে সবুজ গাছগাছালি তো আছেই। যা ইউরোপ-আমেরিকার সড়কের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
আগামী বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা যেতে সড়কপথে সময় লাগবে মাত্র ৪৫ মিনিট। এখন ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে সড়কযানে মাওয়া যেতে সময় লাগছে মাত্র ৩০ মিনিট। এই মহাসড়ক ব্যবহারের আগে যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া যেতে লাগতো গড়ে দুই ঘণ্টার বেশি। এরপর পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে লাগতো প্রায় আড়াই ঘণ্টা। সেখান থেকে ভাঙ্গা যেতে লাগতো আরও প্রায় দুই ঘণ্টা। পদ্মা সেতু চালু হলে এই ৬ ঘণ্টা সময় কমে হবে ৪৫ মিনিট।
এদিকে, এক্সপ্রেসওয়ের সমান্তরালে নির্মিত হচ্ছে রেল লাইন। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের অধীনে নির্মণাধীন ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেললাইন জাজিরা থেকে ভাঙ্গা হয়ে যশোর পর্যন্ত যাবে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন সরেজমিনে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করেন। রেললাইনের কাজ দেখার জন্য মন্ত্রীর গাড়ি সেদিন এক্সপ্রেসওয়ের পরিবর্তে সার্ভিস লেন দিয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত যায়। রেল লাইনের বিভিন্ন অংশে দেখা যায় মাটি ফেলানোর কাজ প্রায় শেষের দিকে। এই পথে বেশ কয়েকটি রেল সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। আবার কোনোটার কাজ শেষের দিকে। ফরিদপুরের ভাঙ্গায় দেখা গেছে, রেল জংশন স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। রেলমন্ত্রী ওই স্থান পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, করোনার মধ্যে একদিনের জন্যই রেল প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়নি। রাতদিন কাজ চলেছে, এখনও চলছে। তিনি বলেন, ২০২১ সালে যেদিন পদ্মা সেতু চালু হবে ওই দিন থেকেই রেলও চালু হবে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন ভাঙ্গা পর্যন্ত আসবে। বাকি রেলপথ নির্মাণ সম্পন্ন হবে ২০২৪ সালের মধ্যেই।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের মার্চে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশাপাশি তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ (সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় ৬ লেনবিশিষ্ট ৮ কিলোমিটার কর্ণফুলী (শাহ আমানত শাহ সেতু) সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক এবং ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় খুলনা, বরিশাল ও গোপালগঞ্জ সড়ক জোনে নির্মিত ২৫টি সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন হয়েছে। এত দ্রæত গন্তব্যে পৌঁছে অবাক হচ্ছেন যাত্রীরা। সেই সঙ্গে তারা বলছেন; পদ্মা সেতু চালু হলে সকালে ঢাকায় এসে বিকেলে বাড়ি ফিরবেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এক্সপ্রেসওয়েটি এশিয়ান হাইওয়ে করিডর-১-এর অংশ। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এর পুরোপুরি সুফল মিলবে। তখন দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২ জেলার মানুষ সরাসরি এক্সপ্রেসওয়ে থেকে উপকৃত হবেন।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে মাদারীপুর শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে এসে আসলাম নামে এক যাত্রী এক্সপ্রেসওয়ে সম্পর্কে বলেন, এটা তো সড়ক নয়, যেন আকাশপথে বিমানে ভ্রমণ করলাম। গাড়িতে ওঠার ২০ মিনিটের মধ্যে ফেরিঘাটে চলে এলাম। সড়ক এতই মসৃণ যে একটুও কাঁপেনি বাস। সড়কে নেই কোনো ধুলাবালু। বরং সড়কজুড়ে চোখ জুড়ানো ফুলের সমারোহ। দেখে বিদেশের সড়ক মনে হয়। কোথাও কোনো স্টপেজ নেই। সড়কপথে এর চেয়ে আরামদায়ক যাতায়াত ভাবাই যায় না। ঢাকা থেকে বরিশালগামী যাত্রী সজিব হোসেনের ভাষ্য, এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বাসে ঢাকা থেকে মাওয়ায় আসলাম। অবিশ্বাস্য, সত্যি অবিশ্বাস্য ব্যাপার। শিবচরের বাসিন্দা আশরাফুল বলেন, পদ্মা এক সময় আমাদের দুঃখের কারণ ছিল। এখন পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে এখানকার মানুষের জীবন বদলে গেছে। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে মানুষের জীবনেও। পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের জন্য যে সব জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, সেই সব জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন। এতে করে তাদের জীবনযাত্রার মানও পাল্টে গেছে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত ৭ হাজার ৭০৫ জনের মধ্যে ইতোমধ্যে ৩ হাজার ৯৮৯ জনকে পূনর্বাসনের জন্য অতিরিক্ত অনুদান হিসেবে ১০৭ কোটি ৪১ লাখ ৪ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর রেলমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত ২৮জন ব্যক্তির হাতে ১ কোটি ১২ লাখ টাকার চেক প্রদান করেন। ওই দিন চেক প্রদান অনুষ্ঠানে শিবচর উপজেলার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ উপলক্ষে বিশাল কর্মযজ্ঞ এই অঞ্চলের মানুষের জীবনটাই পাল্টে দিয়েছে। শরীফ নামে একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, রেল প্রকল্পের জন্য প্রতি শতক জমির জন্য প্রথমে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা করে পেয়েছি। এবার তৃতীয় দফায় একই পরিমান জমির জন্য শতক প্রতি আড়াই লাখ টাকা করে পেলাম। তিনি জানান, ক্ষতিপূরণের টাকায় ব্যবসা বাণিজ্য করে এখন চর এলাকার অনেকেই স্বাবলম্বি। কেউ কেউ নতুন করে পাকা বাড়ি করেছেন। কেউবা গাড়ি কিনে রাস্তায় নামিয়েছেন। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে বড় বড় দালান, কলকারখানা। সে কারণেও কর্মসংস্থান বাড়ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।