পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আবার অঘটন ঘটালো সিলেট ছাত্রলীগ। এবার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে তার সম্মুখেই স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আর নৃশংস এ ঘটনায় জড়িত ছিল ছাত্রলীগের সক্রিয় ৬ কর্মী। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। পরে এসএমপির শাহপরাণ থানা পুলিশ রাত ১০টার দিকে ছাত্রাবাস থেকে স্বামীসহ ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টায় গৃহবধূর স্বামী মাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে শাহপরান থানায় ৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত এসব কর্মীরা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রণজিৎ সরকারের অনুসারী। মামলায় বিষয়ে শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইয়ুম বলেন, মামলায় ৬ জনকে সরাসরি জড়িত বলে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অন্য ৩ জনের বিরুদ্ধের অভিযোগ আনা হয়েছে সহযোগিতার। তবে পুলিশ এখনো কাউকে আটক করা যায়নি। মামলার আসামিরা হলেন, এমসি কলেজ ছাত্রলীগের নেতা ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সে শিক্ষার্থী শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), কলেজ ছাত্রলীগ নেতা এম সাইফুর রহমান (২৮), ছাত্রলীগ নেতা তারেক (২৮), অর্জুন লস্কর (২৫), রবিউল ইসলাম (২৫) ও মাহফুজুর রহমান মাছুম (২৫)। তাদের মধ্যে সাইফুর রহমানের গ্রামের বাড়ি বালাগঞ্জে, রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলায়, মাহফুজুর রহমান মাছুমের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়, অর্জুনের বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জে, রনির বাড়ি হবিগঞ্জে এবং তারেক সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বাসিন্দা।
মামলা ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে যান ওই গৃহবধূ। এক পর্যায়ে রাত ৮টার দিকে তরুণীর স্বামী সিগারেট খাওয়ার জন্য এমসি কলেজের মূল গেটের বাইরে বের হন। এ সময় কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী গৃহবধূকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যেতে চায়। এতে তার স্বামী প্রতিবাদ করলে তাকে মারপিট শুরু করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এক পর্যায়ে গৃহবধূ ও তার স্বামীকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। সেখানে স্বামীকে বেঁধে ছাত্রলীগের তিন-চারজন নেতাকর্মী গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহা. সোহেল রেজা পিপিএম বলেন, রাত ৯টার দিকে স্বামীকে ধরে নিয়ে কিছু ছেলে মারপিট করে। গৃহবধূকে ছাত্রাবাসে ভেতরে নিয়ে তিন-চারজন মিলে গণধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
অস্ত্র উদ্ধার : মামলা
গণধর্ষণে জড়িত ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমানের রুম থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে নগরীর শাহপরাণ থানা পুলিশ এমসি কলেজের নতুন ছাত্রাবাসে অভিযান চালায়। এ সময় সাইফুরের রুম থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, চারটি লম্বা দা, একটি ছুরি ও দুটি জিআই পাইপ উদ্ধার করা হয়। গতকাল সকালে পুলিশ বাদী হয়ে সাইফুরকে আসামি করে অস্ত্র আইনে এ মামলা দায়ের করে।
গ্রেফতার অভিযান
গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম ছাত্রলীগ নেতা রবিউল ইসলামকে গ্রেফতার করতে তার গ্রামে অভিযান চালিয়েছে দিরাই থানা পুলিশ। অভিযুক্ত রবিউল গ্রামের বাড়িতে এসেছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল দুপুরে রবিউলের গ্রামের বাড়ি দিরাই থানার জগদল ইউনিয়নের বড় নগদীপুর গ্রামে একটি সাড়াশি অভিযান চালানো হয়। দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম জানান, ধর্ষণে অভিযুক্ত রবিউলের ন্যাক্কারজনক বিষয়টি আমলে নিয়ে তাকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।
উত্তাল সিলেট : সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
সিলেটের এ ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের ১২৮ বছরের এই ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে গণধর্ষণের খবরে সিলেটসহ দেশজুড়ে বইছে নিন্দা ও ক্ষোভ। সাধারণ শিক্ষার্থীসহ সচেতন নাগরিকদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এর আগে এমসি কলেজ এ ছাত্রাবাসেই আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছিল ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে দিয়ে ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠকে কলঙ্কিত করলো মহানগর ছাত্রলীগের বিপথগামী কতিপয় নেতাকর্মী।
এ ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সংগঠন ছাড়াও খোদ ছাত্রলীগ, যুবলীগ নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি তুলেছে। সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চালিয়েছে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এমসি ও সরকারি কলেজের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে টিলাগড়-শাহপরান রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, করোনা পরিস্থিতিতে কলেজ বন্ধ থাকার পরেও ছাত্রাবাস কিভাবে খোলা রাখেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। এসব অপরাধ কর্মকান্ডের বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের অবগত থাকার পরেও কেন ছাত্রাবাস বন্ধ করে দেওয়া হলো না। আমাদের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠে কলঙ্কের দাগ লেগেছে। এসময় শিক্ষার্থীরা ধর্ষণের ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রæত গ্রেফতারের দাবি জানান। অনথ্যায় তারা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানান।
সাধারণ শিক্ষার্থীর পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িত নিজ দলীয় নেতাদের দ্রুত গ্রেফতার ও তাদের শাস্তির দাবিতে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। গতকাল সকালে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের টিলাগড় এলাকায় অবস্থিত এমসি কলেজের মূল ফটকের সামনে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের একাংশকে এ বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেখা গেছে। এসময় আন্দোলনরত নেতা-কর্মীরা এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে। গণধর্ষণের নিন্দা ও ধর্ষকের ফাঁসির দাবি করেছে সিলেট মহানগর যুবলীগ। এক বিবৃতিতে মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীদার এ দাবি জানান। গণধর্ষণের প্রতিবাদে সিলেটে মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। কলেজের ছাত্রাবাসে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন, সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারাও। এমসি কলেজের প্রাক্তন কৃতী শিক্ষার্থী ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, অপরাধীদের যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন তাদের সম্পর্কেও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে আমরা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে অবগত করবো। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, কেউ অপরাধ করলে তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।
তদন্ত কমিটি গঠন
গণধর্ষণ ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এমসি কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজের গনিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও হোস্টল সুপার প্রফেসর আনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়। গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে এ তথ্য জানান এমসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সালেহ আহমদ। তিনি বলেন, হোস্টেলের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য গঠন করা হয়েছে এ কমিটি। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ছাত্রবাস ছাড়ার নির্দেশ
গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় সবাইকে ছাত্রাবাস ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। গতকাল দুপুর ১২টার মধ্যে ছাত্রাবাস ছাড়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন। তিনি জানান, এমসি কলেজের প্রিন্সিপাল গতকাল দুপুরে জরুরি বৈঠকের আহ্বান করেছেন। করোনার সময়ে হোস্টেল বন্ধ থাকলেও ছাত্ররা কিভাবে থাকছে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কলেজ বন্ধ হোস্টেলও বন্ধ রয়েছে। তবে কিছু শিক্ষার্থীরা টিউশনি করানোর কারণে অনেকে ছিলেন ছাত্রাবাসে। যারা এখন হল ছাড়বেনা তাদের বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।