Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাউফলে মারা যাওয়ার ২৪ দিন পর এক নারীকে জীবিত দেখিয়ে দলিল নিবন্ধন

বাউফল উপজেলা (পটুয়াখালী )সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:২৩ পিএম

মারা যাওয়ার ২৪ দিন পর এক নারীকে জীবিত ও স্বশরীরে সাব-রেজিষ্ট্রারের সামনে উপস্থিত দেখিয়ে হলফনামা করানোর পরে জমির দলিল নিবন্ধনের মত অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
আর এমন ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রারের কার্যালয়ে। ওই দলিল বাতিল চেয়ে পটুয়াখালী আদালতে মামলা করেছেন মারা যাওয়া ওই নারীর এক ওয়ারিশ চাচাতো ভাই মো. মামুন হোসেন।
ওই নারীর নাম মোসা. রেহেনা বেগম (৫৭)। দুরারোগ্য ব্যাধিতে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর মারা যান। অথচ তিনি ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর দলিল দিয়েছেন বলে সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি দাবি করছেন।
রেহেনা বেগম ছিলেন উপজেলার মদনপুরা ইউনিয়নের চন্দ্রপারা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর কোনো সন্তান নাই। তাঁর স্বামীর নাম আলতাফ হোসেন। তিনিও ২০১১ সালে মারা যান। ওয়ারিশ সনদ অনুযায়ী তিন চাচাতো ভাই জীবিত আছেন। মো. ফজলুল হক সিকদারের তিন ছেলে মো. আবুল হোসেন, একেএম শফিউল আলম, মো. মামুন হোসেন।
মদনপুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মৃত্যু রেজিষ্ট্রার ও মৃত্যু সনদ অনুযায়ী তিনি ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর মারা গেছেন। জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় বাসিন্দা ও তাঁর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেও এর সত্যতা যাছাই করা হয়েছে।
উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মোসা. রেহেনা বেগম নামের ওই নারী ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর একই উপজেলার ভরিপাশা গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে দুটি অছিয়াতনামা দলিলে ৭৪ শতাংশ জমি নিবন্ধন করে দেন। এর মধ্যে ওই তারিখের ৬৯/২০১৯ নম্বরে দলিলে চন্দ্রপাড়া মেীজার ৫০ শতাংশ জমি ও ৭০/২০১৯ নম্বর দলিলে ভরিপাশার ২৪ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সাইফুলের বাবার নাম মো. আলমগীর হোসেন। তিনি ওই নারীর কোনো ওয়ারিশ না।
জমির দলিল নিবন্ধনের নিয়মানুযায়ী দলিল দাতাকে সাব-রেজিষ্ট্রারের সামনে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে হলফনামা দেওয়ার পরে জমি নিবন্ধন হয়। এমনকি দলিলেও ছবিযুক্ত স্বাক্ষর থাকতে হয়।
সংশ্লিষ্ট মদনপুরা ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল কালাম বলেন,‘রেহেনা বেগম ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর মারা গেছেন যা এলাকার সবাই জানে। সে অনুযায়ী তাঁর স্বজনদের মৃত্যু সনদ দেওয়া হয়েছে। মারা যাওয়ার ২৪ দিন পর কিভাবে তিনি দলিল দিলেন তা আমার বোধগম্য নয়। এমন জাল-জালিয়াতির দৃষ্টামূলক শাস্তি দাবি করছি।’ তিনি আরও বলেন,ওই নারীর কোনো সন্তান নাই। স্বামীও মারা গেছেন। ওয়ালিশ বলতে তিন চাচাতো ভাই মো. আবুল হোসেন, একেএম শফিউল আলম, মো. মামুন হোসেন জীবিত আছেন।
মো. মামুন হোসেন বলেন,‘তিনি মারা যাওয়ার আগে আমরাই দেখভাল করতাম। তাঁর জমি আমারই ভোগ করতাম। সম্প্রতি জানতে পারি ওই জমি তিনি সাইফুল নামে অন্য এক ব্যক্তিকে অছিয়াতনাম দলিল দিয়েছেন। পরে খোঁজ নিয়ে দেখি মারা যাওয়ার ২৪ দিন পর দলিল দিয়েছেন। সাব-রেজিষ্ট্রারের কার্যালয় থেকে ওই দলিলের সইমোহর (নকলকপি) উঠিয়ে দলিল বাতিল চেয়ে চলতি বছরের ২০ আগষ্ট পটুয়াখালীর বাউফল সহকারী জজ আদালতে মামলা করেছি।’
এ বিষয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন,‘রেহেনা বেগম জীবিত থাকাকালীন তাঁকে অছিয়াতনামা দলিল দিয়েছেন। তিনি ৩ নভেম্বর মারা যাননি। মারা গেছেন ৫ ডিসেম্বর।’ এ সংক্রান্ত কাগজ তাঁর কাছে আছে বলেও দাবি করেন।
সাব-রেজিষ্ট্রার কাজী নজরুল ইসলাম বলেন,‘বিষয়টি আমার জানা নাই। আমি চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে দলিল নিবন্ধনের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। জমি দাতাকে অবশ্যই সাব-রেজিষ্ট্রারের সামনে উপস্থিত হতে হবে। তাই কোনোভাবেই মৃত্যু ব্যক্তির নামে দলিল নিবন্ধন করা যাবে না।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লিল নিবন্ধন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ