Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তিন বছরেও রুবেল হত্যার বিচার হয়নি

গোপালগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:২১ পিএম

৩ বছর পার হলেও গোপালগঞ্জের দিনমজুর রুবেল সরদার (২৮) হত্যার বিচার হয়নি। পুলিশ এখনো এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। ফলে নিহতের দরিদ্র পরিবারের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছেন স্বজনরা। এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে হত্যাকান্ডের মূল হোতারা।

দিন মজুর রুবেল সরদার মুকসুদপুর উপজেলার সালিনাবক্সা গ্রামের কওসার সরদারের ছেলে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম রুবলেকে হারিয়ে দিশেহারা বাবা কওছার সরদার। তার দুটি কিডনী অকেজো হয়ে গেছে। তিনি অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। তিনি মৃত্যুর আগে সন্তান হত্যার বিচার দেখে যেতে চাইছেন।

মামলার বিবরণে জানাগেছে, ২০১৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মুকসুদপুর উপজেলার দাসেরহাট গ্রাম থেকে রুবেলকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। পরের দিন বিকলে বাড়ির পাশের একটি মেহগনি বাগান থেকে পুলিশ রুবেলের লাশ উদ্ধার করে। ঘটনার দু’দিন পর ২৪ সেপ্টেম্বর নিহত রুবেলের পিতা কওছার সরদার ২১ জনকে আসামী করে মুকসুদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে ২০১৮ সালে সিআইডি মামলার তদন্ত ভার গ্রহন করে।

নিহত রুবেলের বৃদ্ধ পিতা কওছার সরদার বলেন, ‘ আমরা সোহরাবের সমর্থক। আমার ছেলে কোন মারামারি বা হাঙ্গামায় যেত না। দিন মজুরে কাজ করে খেত। এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ফাঁয়দা লুটতে শিক্ষক আবুল খায়ের সোহরাব বিশ‌্বাস আমার ছেলে রুবেলকে তার লোকজন দিয়ে হত্যা করায়। পরে সোহরাব আমাকে দিয়ে থানায় তার প্রতিপক্ষের ২১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করায়। হত্যাকান্ডের পর সোহরাবের নেতৃত্বে প্রতিপক্ষের বেশ কয়েকটি বাড়ির গরু-ছাগল, টিভি-ফ্রিজ ও আসবাবপত্র লুটপাট করা হয়। এ মামলার সব খরচ সোহরাব আমকে দিত। কিছুদিন পর আমি বুঝতে পারি আসামীরা আমার ছেলেকে হত্যা করেনি। তাই আমি আদালতে একটি নারাজি পিটিশন দেই। পুনরায় আদালতে একটি হত্যা মামলা করি। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। ৩ বছর ধরে ছেলে হত্যার বিচারের অপেক্ষায় আছি। আজও বিচার পাইনি। মৃত্যুর আগে আমি ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চাই।’

নিহত রুবেলের প্রতিবেশি মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী সরদার বলেন, ‘ দীর্ঘদিন ধরে এলাকার আধিপত্য নিয়ে পারুল বেগম ও আবুল খায়ের ওরফে সোহরাব গ্রæপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। দু’গ্রুপের মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে। আমার ধারনা দিন মজুর নিরীহ রুবেলকে বলির পাঠা বানিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে একটি মহল। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত খুনিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
অভিযুক্ত আবুল খায়ের সোহরাব বিশ্বাস সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করি। এলাকার আধিপত্য নিয়ে একটি মহল আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তাই তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।’ তবে সরকারি চাকরি করে এলাকায় গ্রাম্য রাজনীতির নেতৃত্ব দেয়া যায় কি না?-এমন প্রশ্নের সদুত্তোর তিনি দিতে পারেননি ।

গোপালগঞ্জ সিআইডির এএসপি মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘মামলাটি এখনও চলমান রয়েছে। মামলার তদন্ত একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু বাদী পুনরায় আরেকটি মামলা করায় তদন্তের ধারাবাহিকতা পরিবর্তিত হয়েছে। এ কারণে প্রতিবেদন দাখিল করতে কিছুটা সময় লেগেছে। তবে তদন্তে যথাযথ তথ্য-উপাত্ত আমরা সংগ্রহ করেছি। এক দু’মাসের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিচার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ