Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তিস্তা ধরলাসহ পাঁচ নদী ফের বিপদসীমার ওপরে

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

ভারতে অতিবৃষ্টিতে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, সুরমা-কুশিয়ারাসহ প্রধান নদ-নদীতে পানি বাড়ছেই : তিস্তায় গজলডোবা বাঁধসহ অনেক বাঁধ-ব্যারাজ খুলে দিয়েছে
বৃষ্টিবাহী মৌসুমী বায়ু আরও সক্রিয় হয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর-পূর্ব ভারতে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। অতিবৃষ্টিতে ভারতের উজান থেকে আসছে ঢল। এরফলে দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার উজানের ঢলে উত্তরাঞ্চলে তিস্তা, ধরলা, সিংড়ায় গুড় নদী এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সুনামগঞ্জের লরেলগড়ে জাদুকাটা নদী ও শেরপুর জেলার নাকুয়াগাঁওয়ে ভুগাই নদীসহ ৫টি নদীর পানি আবারও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

নিজেদের বন্যামুক্ত রাখতে ভারত অতীতের মতো এবারও তিস্তার উজানে গজলডোবা বাঁধ খুলে পানি ছেড়ে দিয়েছে। তাছাড়া অনেক বাঁধ-ব্যারেজ খুলে দেয়ায় হু হু করে নামছে উজানের ঢলের পানি। এরফলে উত্তরাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সুরমা-কুশিয়ারাসহ প্রধান নদ-নদীসমূহে পানি বাড়ছেই।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লাগোয়া উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, অরুণাচল, সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন হিমালয় পাদদেশীয় অঞ্চলসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গতকাল উত্তর-পূর্ব ভারতের উজানে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে চেরাপুঞ্জিতে ২৭৫ মিলিমিটার। এছাড়া জলপাইগুড়িতে ১৩৭ মি.মি., পাসিঘাটে ৯১ মি.মি., শীলংয়ে ৭৮ মি.মি.সহ বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়েছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের উপর সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গতকাল ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বর্ষণ হয় পঞ্চগড় জেলায় ১৭৬ মি.মি.। এছাড়া গাইবান্ধায় ১৬৫, বরগুনায় ১৩২, জাফলংয়ে ১১৬, রংপুর ও চিলমারীতে ৯৫, লরেলগড়ে ৯০, দিনাজপুরে ৮৮, জারিয়াজঞ্জাইলে ৮৬, বরিশালে ৮৩, ভাগ্যকুলে ৭৮, মহেশখোলায় ৭৪ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভ‚ঁইয়া গতকাল জানান, ব্রহ্মপুত্র নদে পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে যমুনা নদে পানির সমতল স্থিতিশীল বা অপরিবর্তিত রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা উভয় নদে পানির সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র আরও জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও এর সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয়, দার্জিলিং অঞ্চলসমূহে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এরফলে দেশের উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবক’টি প্রধান নদ-নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।

ধরলা, তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপরে অবস্থান করছে। কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, সুনামগঞ্জ, শেরপুরসহ বিভিন্ন জেলা পঞ্চম ও চতুর্থ দফায় বন্যার কবলে পড়েছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত কুড়িগ্রাম জেলায় ধরলা নদীর পানি আরও বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ঊর্ধ্বে, তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১২ সে.মি. উপরে, সিংড়ায় গুড় নদীর পানি ৫০ সে.মি উপরে, সুনামগঞ্জ জেলার লরেলগড়ে জাদুকাটা নদীর পানি ১৮ সে.মি. উপরে এবং শেরপুর জেলার নাকুয়াগাঁওয়ে ভুগাই নদীর পানি ৩৫ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

অন্যদিকে ভারতের উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি পেয়ে নুনখাওয়া ও চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার যথাক্রমে ৭৪ ও ৩৪ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদের পানি বেড়ে সারিয়াকান্দিতে বিপদসীমার ৮ ও কাজীপুরে ১৬ সে.মি. নিচে রয়েছে। গাইবান্ধায় ঘাগট নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ১৯ সে.মি. নিচে রয়েছে। সুরমা নদীর পানি বেড়ে সুনামগঞ্জে বিপদসীমার ৪১ সে.মি. নিচে এসেছে।

গতকাল দেশের নদ-নদীর ১০১টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৫৫টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৪৪টি পয়েন্টে হ্রাস পায়। দু’টি পয়েন্টে পানি অপরিবর্তিত থাকে। চারটি নদীর ৪টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হয়। আগের দিন বুধবার ৪৮টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৫৩ পয়েন্টে হ্রাস পায়। গত মঙ্গলবার নদ-নদীর ৫৮টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৪০টিতে হ্রাস পায়। গত সোমবার ৩৭টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৬০টি পয়েন্টে হ্রাস পায়।
বৃষ্টিবাহী মৌসুমী বায়ু জোরদার দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের উজানে ভারতে অতিবৃষ্টি হচ্ছে। ২২ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে এবং ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, অরুণাচলে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। অতি বর্ষণে প্রধান নদ-নদীসমূহের উজানের অববাহিকায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢলে পানি নামছে বাংলাদেশের ভাটিতে। আশি^নের দ্বিতীয় সপ্তাহে অকালের ঢল-বানে ফুঁসে উঠেছে অধিকাংশ নদ-নদী। বন্যার সঙ্গে নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে এবং তা আবারও ভয়াবহ আকার ধারণের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আবহাওয়া বিভাগ জানায়, ভারতের মধ্যপ্রদেশ এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি কেটে গেছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় রয়েছে এবং গভীর সঞ্চারনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন বাংলাদেশের উপক‚লীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপক‚লের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে জোরালো অবস্থায় রয়েছে।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তিস্তা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ