Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটের আবাসন খাত এখন যন্ত্রণা!

ফয়সাল আমীন, সিলেট থেকে | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

হাওর-বিল-পাহাড়-টিলাসহ কৃষি জমি অপরিকল্পিতভাবে ভরাট বা কেটে সিলেটে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য আবাসন প্রকল্প। বিনিয়োগ ও ক্রেতা হিসেবে টার্গেটে ছিলেন প্রবাসীরাই। স্থানীয় উদ্যোক্তারা চটকদার প্রলোভন দেখিয়ে আবাসন ব্যবসা চাঙা করে তোলেন প্রবাসীদের সম্পৃক্ততায়। কিন্তু শুরুর সেই ভালো এখন মহামন্দার কবলে পড়েছে। সেই মন্দা কেবল বৈশি^ক নয়, উদ্যোক্তাদের প্রতারণা ও অদূরদর্শীতাও দায়ী।

বিশেষ করে এ খাতে বিনিয়োগ ও ক্রেতা হিসেবে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ এখন তলানীতে। বরং প্রবাসীরা দেশের বিনিয়োগ বা লগ্নিকৃত অর্থ গুটিয়ে নিচ্ছেন চুপিসারে। যুক্তরাজ্যের ক্যানরি ওয়ার্ফের বাসিন্দা আইনজীবি কামরুল ইসলাম নাজমুল বলেন, প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি, আবাসন, এয়ার লাইন্স ব্যবসা, মার্কেট নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে। কিন্তু আফসোস ছাড়া কিছুই জুটেনি কপালে। সেই আফসোসে জর্জরিত আমাদের তৃতীয় প্রজন্মও। বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশের বদলে পদে পদে প্রতারিত হচ্ছি আমরা। সেকারণে দেশে এসেছি যেভাবে পারি বিনিয়োগ ফেরত নিতে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে কেবল হাহাকার দেখা যাবে দেশে বিনিয়োগের কারণে। অথচ আমরা নিজ উদ্যোগেই দেশে বিনিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু দিন শেষে ফলাফল নিরাপত্তা ও প্রত্যাশার গুড়ে বালি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেটের আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন সিলেট এপার্টমেন্ট এন্ড রিয়েল এস্টেট গ্রæপ (সারেগ) ২০১০ সালে এই সংগঠনটির সদস্য ছিলো ১১০ টি প্রতিষ্ঠান। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে টিকতে না পেরে ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে গেছে। এখন সারেগ’র সদস্য রয়েছে প্রায় ৫০টি। তবে করোনার লোকসানে এ বছর আরও অনেক প্রতিষ্ঠানই ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার আশঙ্কা করছেন সারেগ’র নেতারা।
অপর একাধিক সূত্র জানায়, বেআইনী ভাবে জলাধারসহ নিম্নভূমি ভরাট করেই আবাসন ব্যবসার শুরু হয় সিলেটে। এছাড়া ভূমি খেকো আবাসন ব্যবসায়ীরা চক্র স্থানীয় লোকজনের জমিজমা দখল করে নিজস্ব ভাবে ম্যাপ তৈরী করে দেদারছে প্লট বিক্রি করে। এ নিয়ে আইনী জটিলতার সৃষ্টি হয়। এমনকি পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করার ঘটনায় একাধিক আবাসন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিধ সমিতি (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক অ্যাডডভোকেট সাহেদা আক্তার বলেন, বিল, জলাধার, নিচু ভূমি বেআইনীভাবে ভরাট করে পরিবেশ বিপর্যয়ের অভিযোগ সিলেটের বৃহৎ আবাসন প্রকল্প রয়েল সিটি ও সোনারগাঁও আবাসিক প্রকল্পের বিরুদ্ধে দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া তিনি বলেন, সিলেটে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা পরিবেশ অধিদফতরের অবস্থানগত ছাড়পত্র নেয়নি। এতে করে অনেক বিনিয়োগকারী ও ক্রেতা আর্থিক ক্ষতিতে পড়ছে। পাশাপাশি মুখ থুবড়ে পড়ছে আবাসন খাতও।
সারেগ’র সভাপতি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, আবাসন খাতের ক্রেতারা হলেন প্রবাসীরা। করোনায় প্রবাসীর সঙ্কটে আছেন। ফলে আমাদের নতুন বিক্রি তো বন্ধ আছেই। এমনকি আগে যারা কিনেছিলেন তারাও কিস্তি পরিশোধ করছেন না। এ অবস্থা চলতে থাকলে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিলেট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ