বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হাদীসে আল্লাহর রাসুল (সা.) দু’টি বড় নিয়ামতের কথা বলেছেন। যার একটি সুস্থতা আরেকটি হলো অবকাশ। মানুষের জীবনে অবকাশ আল্লাহর অনেক বড় অনুগ্রহ। আল্লাহ তাআলা যখন কারো জীবন চলার মতো হালাল জীবিকার ব্যবস্থা করে দিলেন তখন আর পেরেশানি থাকার কথা নয়। শোকরগোযারি ও অল্পেতুষ্টির যে শিক্ষা ইসলাম দিয়েছে সেই শিক্ষার আলোকে মনমানসিকতা গঠিত হলে এ পরিমাণ জীবিকাই প্রশান্তির জন্য যথেষ্ট। হাদীস শরীফে এসেছে- ‘সম্পদের প্রাচুর্য থেকে অমুখাপেক্ষিতা আসে না। এটা আসে হৃদয়ের প্রাচুর্য থেকে।’
পার্থিব ধন-সম্পদ সম্পর্কে যখন সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হয়, অর্থাৎ এ সত্যটুকু অনুধাবনের যোগ্যতা অর্জিত হয় যে, এই ধন-সম্পদ জীবনের পরম লক্ষ্য নয়, জীবনধারণের উপকরণ মাত্র; তখন মানুষের চিন্তাভাবনা ও মনমানসে ভারসাম্য আসে। আর তা প্রভাব ফেলে তার কাজ-কর্মে। মানুষ তখন সম্পদের পিছনে ধাবিত হয় না; বরং সম্পদ ব্যবহার করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হয়। বস্তুত জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে অভ্রান্ত ধারণা মানুষকে চিত্তশালী করে। তখনই মানুষের পক্ষে প্রশান্তমনে আল্লাহর তাআলার ইবাদত-বন্দেগি ও ইতাআত-আনুগত্যে নিবেদিত হওয়া সম্ভব হয়।
এই যে আত্মনিবেদনের সুযোগ এরই নাম অবকাশ। এই অবকাশ আল্লাহ তাআলার অতি বড় নিয়ামত। একে কাজে লাগিয়ে মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথে অনেক দূর অগ্রসর হতে পারে। তবে আশঙ্কা থাকে, মানুষ যদি অসচেতন হয় কিংবা অবহেলা প্রদর্শন করে তাহলে এই মূল্যবান সুযোগও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই হযরত রাসূল কারীম (সা.) তাঁর উম্মতকে সাবধান করেছেন।
দুনিয়ার জীবনে অবকাশের নিয়ামত কাজে লাগানোই হলো সফলতার পথ। প্রশ্ন হলো, কীভাবে তা কাজে লাগানো যায়? এখানে এসে চিন্তা ও দৃষ্টির পরিচ্ছন্নতা প্রয়োজন হয়। কেননা, ভ্রান্ত চিন্তা জীবনের সকল কর্ম ও সাধনাকে অর্থহীন করে তুলতে পারে। হয়তো সারাজীবন সে মরিচিকার পিছনেই ছুটল। তার এই ছোটাটা অর্থহীন হলো। যারা তাদের জীবন নাচ-গান করে কাটিয়ে দেয় তারা তো এ কাজটিকে খুব গুরুত্বের সাথেই গ্রহণ করে। গালভরা কথা আর তত্ত্ব ও বুলির ফুলঝুড়ি দিয়ে এর অর্থবহতা প্রমাণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব তো এক শ্রেণির দর্শক-শ্রোতার মনোরঞ্জন ছাড়া আর কিছুই নয়। এ সবের জন্য কি একজন মানুষের গোটা জীবন নিবেদিত হতে পারে?
তাই চিন্তার পরিচ্ছন্নতা প্রয়োজন। মানুষের জীবনের সর্বোচ্চ লক্ষ্য একটিই হতে পারে। তা হলো, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন আর অনন্ত জীবনের সফলতা লাভ। এই এক লক্ষ্যে সফল হওয়ার প্রেরণা জাগ্রত হলে জীবনের সকল মহৎ কর্ম সুচারুরূপে সম্পাদিত হয়। কেননা, ইসলাম বলে আল্লাহর পথে চলেই তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে। এককথায় সে পথটি হলো ইসলাম।
ইসলামের সঠিক ও ব্যাপক মর্ম কর্মে ও বিশ্বাসে ধারণ করে মুসলিম হতে পারাটাই হলো মানব-জীবনের পরম লক্ষ্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি জ্বিন ও ইনসানকে সৃজন করেছি শুধু আমার ইবাদতের জন্য।’ (সূরা যারিয়াত : ৫৬)।
কোরআনের এই একটি আয়াতই মানুষের চিন্তার মোড়, অতঃপর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম। আর আল্লাহমুখী ও আল্লাহনিবেদিত মানুষের মাধ্যমেই রচিত হতে পারে একটি সুন্দর সমাজ, নিরাপদ পৃথিবী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।