Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধুনট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ঘুষ দুর্নীতির আখড়া

অভিযোগ করেও প্রতিকার মিলছে না

প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বগুড়া অফিস : ঘুষ দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে ধুনট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিলিং এরিয়া অফিস। ঘুষ ছাড়া কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ মিলছে না এ অফিসে। আবাসিক ও বাণিজ্যিক সংযোগের জন্য ২ থেকে ৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে।  
জানা গেছে, ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ধুনট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে আবাসিক ও বাণিজ্যিকসহ বিভিন্ন সংযোগের জন্য আবেদন করেন ৭ হাজার ২৮ জন গ্রাহক। তন্মধ্যে ২০১৪ সালের আবেদনে ৩০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগ পেলেও ২০১৫ সালের আবেদনের ৫০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছেন ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে। আবেদনের ৩ মাসের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও এজিএম শামসুল হক ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে ২০১৪ সালের আবেদন বাদ রেখে ২০১৫ সালের আবেদনে দ্রুত সংযোগ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে সাধারণ গ্রাহকরা দীর্ঘ অপেক্ষা করেও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চৌকিবাড়ী গ্রামের মোখলেছুর রহমান বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে আবেদন করে ১শ’ টাকা সমীক্ষা ফি জমা দেওয়ার পর এজিএম শামসুল হককে ৩ হাজার টাকা ঘুষ না দেওয়ায় গত এক বছরেও বিদ্যুৎ সংযোগ মেলেনি। অথচ ধুনট সদরপাড়ার শাহীন নামের এক ব্যক্তি আগেরদিন আবেদন করে পরের দিন বিদ্যুৎ পেয়েছেন বলে তিনি জানান। কৈইগাঁতি গ্রামের শামিম ইসলাম লিটন বলেন, একটি সেচ পাম্পের সংযোগ পেতে আমাকে বাধ্য করে এজিএম শামছুল হক ৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। বেলকুচি গ্রামের আব্দুল বারিক জানান, ২০১৪ সালে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করার পর এজিএম শামসুল হকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ৩ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। বিদ্যুৎ কর্মকর্তাকে ঘুষের টাকা দিতে না পারায় এখনো পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ পাইনি। কাশিয়াহাটা গ্রামের আব্দুল মান্নান, হারুনুর রশিদ ও সেলিম মিয়া বলেন, আমরা তিনজন আবাসিক সংযোগ পরিবর্তন করে শিল্প সংযোগের আবেদন করি। দীর্ঘদিন অফিসে ঘোরাঘুরি করার পর এজিএম শামসুল হক আমাদের নিকট থেকে ৬৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন। কিন্তু আমাদের কাজ না করেই তিনি বিভিন্ন অজুহাতে তাল-বাহানা করতে থাকেন। আমরা এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়ে এক বছরেও কোনো প্রতিকার পাইনি।    
সরেজমিনে ধুনট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ধুনট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহ-জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) শামসুল হক প্রতিটি এলাকায় কিছু সংখ্যক দালাল নিয়োগ করে আবাসিক ও বাণিজ্যিকসহ বিভিন্ন সংযোগের জন্য মিটার প্রতি ২ থেকে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ঘুষের টাকা না দিলে মিটার ও তার সংকটের অজুহাত দেখিয়ে সময় পার করছেন মাসের পর মাস। ভুক্তভোগীরা জানান, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও ট্রান্সফর্মার পরিবর্তন করতেও তাকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ বাণিজ্যের বিষয় নিয়ে সাধারণ গ্রাহকের সাথে তার মাঝে মধ্যেই বাকবিত-ার ঘটনাও ঘটে। গত ২০ জানুয়ারি ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর দোয়াতপাড়া গ্রামে পল্লী বিদ্যুতের নতুন সংযোগ লাইন নির্মাণের ঘুষ বাণিজ্যের বিরোধিতা করায় মমতাজুর রহমান নামের সাবেক এক ইউপি সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করেছে পল্লী বিদ্যুতের কিছু সংখ্যক দালালরা। এ ঘটনায় ধুনট থানায় ১৭ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ধুনট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম শামসুল হক তার বিরুদ্ধে ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিদ্যুতের মিটার ও তার না থাকায় সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব হচ্ছে। সাধারণ গ্রাহকরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করতেই পারে। তবে বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার শামস্উদ্দিন জানান, এ বিষয়ে কেউ তাকে অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধুনট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ঘুষ দুর্নীতির আখড়া
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ