বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সৃষ্টি জগতের শ্রেষ্ঠত্ব যাদেরকে মহান আল্লাহপাক প্রদান করেছেন, তারা হলেন মানুষ। এই মানুষ নামের সম্প্রদায় দু’ভাগে বিভক্ত। একদল মুমিন বা বিশ্বাসী এবং অপর দল কাফির বা অবিশ্বাসী। এই উভয় শ্রেণির মানুষের জীবন পরিক্রমার রয়েছে চারটি বিশাল জগত। প্রথমত : রূহানী জগত। সে জগতে মানুষের প্রাণ শক্তিগুলো মিলে মিশে একাকার হয়ে কত শত কোটি বছর অতিবাহিত করেছে, তার হিসাব কারো জানা নেই। তা কেবল আল্লাহ পাকই ভালো জানেন। দ্বিতীয়ত : আদম সন্তান রূপে জন্ম গ্রহণ করার পর মৃত্যু পর্যন্ত দুনিয়ার জগত।
এ জগতে মানব গোষ্ঠি দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে জীবন অতিবাহিত করে। এদের একদল মুমিন এবং অপর দল কাফির। এই উভয় দলকেই মহান আল্লাহ পাক প্রতিপালন করেন। রাবুবিয়াতের শামিয়ানার নিচে উভয় দলকেই তিনি স্থান দান করেন। তৃতীয়ত : বারযাখের জগত। সে জগত প্রতিটি মানুষের মৃত্যু বরণ হতে শুরু করে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত প্রলম্বিত। এই জগতে মুমিন ও কাফির উভয় শ্রেণির মানুষই দুনিয়ার জীবনের কর্মফল অনুসারে পুরস্কৃত ও তিরস্কৃত হয়ে থাকে। যারা পুরস্কৃত হয়, তাদের জীবন বারযাখ জগতে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভে ধন্য হয়।
আর যারা তিরস্কৃত হয়, এ জগতে তারা শাস্তি ও নির্যাতনের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হতে থাকে। চতুর্থত : পরকাল জগত। এ জগতে মুমিনগণ নেকী, পুণ্য ও দয়া এবং ক্ষমা লাভে ধন্য হয় এবং চিরমুক্তি ও নিষ্কৃতি পেয়ে জান্নাতে প্রবেশাধিকার পাবে। পক্ষান্তরে কাফির ও অবিশ্বাসীরা নিজেদের পাপ ও গোনাহের কারণে চিরকালের জন্য জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। অনন্তকাল তারা সেখানে অবস্থান করবে। সে কালের লয়-ক্ষয় বলতে কিছুই নেই।
উল্লিখিত চারটি জগতের মধ্যে দ্বিতীয় জগতটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিরমুক্তি ও সফলতা লাভের যাবতীয় উপকরণ এখান থেকেই মুমিনগণ আহরণ করে থাকেন। তারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে দুনিয়ার জগতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের আনুগত্য ও অনুসরণই হলো মুক্তি ও নিষ্কৃতি লাভের প্রধান উপায়। এখানেই রয়েছে পরকালিন জীবনে সফলতা অর্জনের সকল উপাদান। তাই, তারা আল্লাহর নির্দেশাবলি প্রতিপালনে যতœবান হয়।
আল্লাহর ফরমাবরদার বান্দাহ হিসেবে দুনিয়ার জীবনকে অতিবাহিত করে। যার দিক নির্দেশনা আল কোরআনে এভাবে প্রদান করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : (ক) এই দুনিয়ার জীবনে তোমাদেরকে যা কিছু প্রদান করা হয়েছে, তা অতি তুচ্ছ সামগ্রী মাত্র। আর (পরকালীন জীবনের জন্য) আল্লাহর কাছে যা কিছু রয়েছে তা অতি উত্তম ও চিরস্থায়ী। (সূরা আশ শুরা : আয়াত ৩৬)।
উল্লিখিত আয়াতে কারীমার অর্থ ও মর্মের প্রতি গভীরভাবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে যে সার নির্যাস লাভ করা যায়, তা হলো এই : (১) এই দুনিয়া আমাদের জন্য স্থায়ী ঠিকানা বা বাসস্থান নয়। এই দুনিয়ার জীবন যেমন অস্থায়ী, তেমনি এই পৃথিবীর জীবনটাই সব কিছু নয়। এমন কি মৃত্যুও শেষ প্রান্ত নয়। তারপরও দুটি জগত রয়েছে। বারযাখের জগত ও পরকালিন জগত। বারযাখের জগত অতিক্রম করার পর চিরস্থায়ী পরকালিন জগতে প্রবেশ করা যায়। সে জগতের জীবনই চিরস্থায়ী ও অবিনশ্বর। (২) সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ হিসেবে সফলতা ও ব্যর্থতার মাপকাঠি এই পৃথিবীতে পার্থিবভাবে সফল হওয়ার ওপর নির্ভরশীল নয়। এমন কি দুনিয়ার জীবন ধন সম্পদ, ক্ষমতা ও প্রতিপন্তির অধিকারী হওয়া না হওয়াও নয়। বরং প্রকৃত সফলতা ও ব্যর্থতা হলো আখেরাত বা পরকালের ব্যর্থতা ও সফলতা। মুমিন বান্দাহগণ এই সফলতা লাভের জন্যই উদগ্রীব ও লালায়িত থাকে না। ফলে, তারা কামিয়াবী হাসিল করত: আল্লাহ পাকের কুরব ও মানজেলাতের আলা হতে আলা দারাজাত লাভে ধন্যহন। কৃতার্থ হন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।