পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পেশায় তিনি একজন গাড়িচালক। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের (শিক্ষা) গাড়ি চালানোর দায়িত্ব ছিল তার। কিন্তু দীর্ঘদিন তিনি গাড়িটি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে একাধিক বাড়ি-গাড়িসহ শত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে তার। দীর্ঘদিন ধরে অধিদফতরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন তিনি। বিশেষ করে অধিদফতরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য তার প্রধান কাজ। কোনো কর্মকর্তা যদি তার সুপারিশ না শোনতেন তাহলে তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করাসহ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটিয়েছেন একাধিকবার। একটি সংস্থার প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য। স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালক আব্দুল মালেকের (৬৩) কাছে থেকে অস্ত্র ও জাল নোট উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা পৃথক মামলায় ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম এ আদেশ দেন। তুরাগ থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রুবেল শেখ আসামিকে আদালতে হাজির করে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পৃথক দুই মামলায় ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গাড়ি চালক মালেককে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
মামলার শুনানীর সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি বলেন, প্রভাব খাটিয়ে অধিদফতরকে দুনীতির আখড়ায় পরিনত করেছিলেন মালেক। আসামি অনেক প্রভাবশালী। সে সরকারি ড্রাইভার এসোসিয়েশনের সভাপতি। এই সভাপতি থাকাকালিন সময়ে প্রচুর টাকার মালিক হয়েছেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসবে তার ক্ষমতার উৎস।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, পাজেরো গাড়িটি দিয়ে মালেক নিজের ডেইরি ফার্মের দুধ নিয়ে আসতো। অফিসে ঢুকানোর আগে গাড়ি থেকে মালামাল নামিয়ে পরে অফিসে আসতো সে। এই ঘটনা অফিসের প্রায় সবাই জানে। কিন্তু কেউ মুখ খোলে না। কারণ বড় কর্মকর্তাদের খুব কাছের মানুষ মালেক।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধুমাত্র মহাপরিচালকের গাড়িই নয়, আবদুল মালেক স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি পিকআপ (ঢাকা মেট্রো- ঠ- ১৩-৭০০১) নিজের গরুর খামারের দুধ বিক্রির কাজে ব্যবহার করে থাকেন। এই গাড়িটি চালায় মাহবুব নামে একজন চালক। এছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি মাইক্রো (ঢাকা মেট্রো-চ-৫৩-৬৭৪১) পরিবারের সদস্যদের জন্য ব্যবহার করতেন আবদুল মালেক। এই গাড়িটিও কামরুল নামে একজন চালককে দিয়ে ব্যবহার করাতেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, এই ক্ষমতা নিয়েই তিনি অধিদফতরের চিকিৎসকদের বদলি, পদোন্নতি ও তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত ছিল আবদুল মালেক। একজন পরিচালক তার বিরুদ্ধে অডিটের চেষ্টা করলে সেটিও তিনি করতে পারেননি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কারণে। যে কারণে আবদুল মালেক কোন গাড়ি ব্যবহার করতো, কীভাবে তেল খরচ করতো তা নিয়ে খুব একটা বেশি ভাবার অবকাশ ছিল না।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকদের একটা বিশাল অংশ যারা এই স্বাস্থ্য অধিদফতরে কাজ করেন, তারা মূলত এই আবদুল মালেকদের সমীহ করেই চলে। কারণ শুধু শুধু ভেজালে পড়ার কোনো মানে হয় না। উনাদের কারো সঙ্গে যদি কোনো সমস্যা হয় তবে দেখা যায় যে, কিছুদিনের মধ্যে চিকিৎসকের বদলির আদেশ চলে আসে। এজন্যেই এই স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিকিৎসকদের মাঝে একটা মজার গল্প প্রচলিত আছে। সেখানে আমরা বলি-চিকিৎসক না হয়ে হলাম না কেন মালেক! কারণ এখানে আসলে তাদেরই ক্ষমতাতেই সব চলে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, শুধুমাত্র একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালকই না, যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমনকি সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও যদি রাজধানীতে একাধিক বাড়িসহ অঢেল সম্পদের মালিক হতে দেখা যায় তবে সেটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। এই সম্পদ বৈধ কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেয়া যায় যে, বৈধ আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই এসব ক্ষেত্রে। এখানে দুটি বিষয় আছে। প্রথমটি হলো- বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্য সম্পদ আহরণ হলে সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। এই কাজটি দুর্নীতি দমন কমিশন খুব সহজভাবেই করতে পারে। ব্যক্তির আয়ের সঙ্গে সম্পদের হিসেব নিলেই পরিষ্কারভাবে বের হয়ে আসবে যে, তিনি কীভাবে এই সম্পদের মালিক হয়েছেন। যদি সেক্ষেত্রে অবৈধ কিছু পাওয়া যায় তবে তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
র্যাব-১’র অধিনায়ক (সিও) লে, কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, স¤প্রতি র্যাবের প্রাথমিক গোয়েন্দা অনুসন্ধানে রাজধানীর তুরাগ এলাকায় আব্দুল মালেক ওরফে ড্রাইভার মালেকের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র ও জাল টাকার ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি তার এলাকায় সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শক্তির মহড়া ও দাপট দেখিয়ে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছেন এবং জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। তার ভয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের মনে সর্বদা আতঙ্ক বিরাজ করে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা এবং জাল টাকার ব্যবসা করে আসছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র ও জালনোট ব্যবসাসহ অস্ত্রের মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শনপূর্বক সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।
ঢাকায় ৭টি প্লাটে ৪টি বাড়ি পেয়েছে দুদকঃ দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে মালেকের ঢাকায় ৭টি প্লটে ৪টি বাড়ির সন্ধান পেয়েছে। আর সেই কারণে গত ১৬ সেপ্টেম্বর মালেক ও তার স্ত্রীর সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য দুদক থেকে নোটিশ দেয়া হয়েছে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলোচনায় দুদক সচিব দিলোয়ার বখত বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়ি চালক মালেকসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সাল থেকে দুদকের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে দুদক ইতোমধ্যে মামলা করেছে। বিশেষ করে মালেকের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আায় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি অনুসন্ধান শেষে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করেছে অনুসন্ধান কর্মকর্তা। গত ১৬ সেপ্টেম্বর কমিশন থেকে মালেক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য গত রোববার ২০ সেপ্টেম্বর ভোরে রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে অবৈধ অস্ত্র, জালনোটের ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাব-১’র একটি দল আব্দুল মালেককে গ্রেফতার করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।