Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব

প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) থেকে

সীতাকুন্ডের ৩টি খালে স্ক্র্যাপ জাহাজ থেকে পাওয়া লাইফ বোটের জমজমাট ব্যবসা চলছে। স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী খালের উপর অবৈধভাবে বোটগুলো ফেলে রেখে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন। বলা বাহুল্য এসব বাজারে বোটের বেচাকেনাও বেশ ভালো। আর দীর্ঘকাল ধরে এখানে এভাবে লাইফ বোট বেচাকেনার কারণে অঘোষিতভাবে খালগুলো বোটের বাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও প্রকৃত পক্ষে এ বাজারগুলোর কোন বৈধতা নেই। ফলে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার বোট বেচাকেনা হলেও সরকার হারাচ্ছে বিপুল অংকের রাজস্ব। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকু-ে অবস্থিত দেশের একমাত্র জাহাজ ভাঙা শিল্পে আমদানিকৃত স্ক্র্যাপ জাহাজে পাওয়া লাইফ বোটগুলো ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য খালের উপর ৩টি ভ্রাম্যমাণ বাজার রয়েছে। এসব বাজারগুলো সোনাইছড়ি ইউনিয়নের মদনহাট খাল, মাদামবিবিরহাট ইছামতি খাল ও সোনারগাঁও খালে অবস্থিত। এলাকার বোট ব্যবসায়ীরা শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের স্ক্র্যাপ জাহাজ থেকে নিলামে বোটগুলো ক্রয় করে খালে ভাসিয়ে রাখেন। পরে প্রতিটি বোট প্রকার ভেদে ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়। মৎস্য প্রকল্পের মালিক, জেলে, পার্ক ও লেক কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন লোকজন এসব বোটের ক্রেতা। আবার ক্ষেত্র বিশেষে বিদেশেও বিক্রি হয়, রপ্তানি হয় বোটগুলো। সরেজমিন বোটের এসব বাজারে ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কয়েক যুগ ধরে খালগুলোতে এভাবে বোর্ট বেচাকেনা চলে আসছে। ইছামতি খালের এক বোট ব্যবসায়ী মোঃ জসীম উদ্দিন বোট ব্যবসা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে জানান, গত ১৫ বছর ধরে তিনি এখানে বোট বেচাকেনা করে আসছেন। এখানে বেচাকেনাও খারাপ নয়। তবে এসব বাজারগুলো সরকারিকরণ হয়নি। এ কারণে ব্যবসায় শৃঙ্খলা নেই বলে জানিয়েছেন মদনহাট খালের ব্যবসায়ী রহিম উল্লাহ। তিনি বলেন, খালে এভাবে ভাসিয়ে বোট বিক্রির করার উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ীরা যার যার ইচ্ছেমত রাখার কারণে অনেক সময় নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি হয়। সরকার যদি এ ৩টি খালকে নিয়মের আওতায় এনে ইজারা দিত তাহলে বাজারগুলো যেমন প্রতিষ্ঠিত হতো তেমনি সরকার এখান থেকে বিপুল রাজস্ব আয় করত। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সুদীর্ঘ সময়েও কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপই নেয়নি। অথচ এসব বোট বাজারে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার বোট বিক্রি হচ্ছে বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান। পরিদর্শনকালে কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে আসা এক বোট ক্রেতা মোঃ আবদুল্লাহ বলেন, তিনি একজন মৎস্য খামারি। তার মাছ চাষ এলাকা নিয়মিত ঘুরে দেখার জন্য একটি বোটের দরকার হওয়ায় তিনি সীতাকু-ে বোট কিনতে এসেছেন। ৫০ হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত দামের বোট আছে। পছন্দমত যেকোন একটি কিনে নিয়ে যাবেন তিনি। ক্রেতা ও বোট ব্যবসায়ীরা আরো জানান, সীতাকু- থেকে এসব বোট দেশের বিভিন্ন স্থানে পর্যটন স্পটগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়। সুদৃশ্য বোটগুলোর ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিক্রেতারাও বেশ উপভোগ করেন এই ব্যবসা। তবে সরকারি নজরদারি না থাকায় বাজারগুলো সেভাবে প্রচারের আলোয় আসছে না বলে জানান তারা। এদিকে সুদীর্ঘকাল প্রাচীন এই বোট বাজারের এতদিন কোন বৈধতা না থাকলেও এগুলোকে সরকারি বাজার করা যায় কিনা তা নিয়ে কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। এ বিষয়ে সীতাকু- উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, এই তিনটি খালে বোটের বৈধ বাজার সৃষ্টি করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে সেখানে সার্ভেয়ার পাঠানো হয়েছে। সার্ভেয়ার জানাবেন এসব হাটে মোট কতজন ব্যবসায়ী আছেন, বছরে কতগুলো বোট বিক্রি হয় সেখান থেকে, প্রতিটি বোট কত দামে বিক্রি হয় ইত্যাদি। এ প্রতিবেদন হাতে আসার পর সেখানে বৈধ বাজার সৃষ্টির চেষ্টা করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ