বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
কুষ্টিয়ায় নানা কায়দায় সরকারি-বেসরকারি খাল-বিল, নদী, জলাশয়, ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি, মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনা দখলে নিচ্ছে একটি চক্র। কুষ্টিয়া শহরের প্রায় ৭শ’ কোটি টাকার সরকারি-বেসরকারি জমি দখলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে চক্রের বিরুদ্ধে। আর এর পেছনে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা।
জানা যায়, একটি সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে নিজেরাই ক্রেতা-বিক্রেতা সেজে অন্যের জায়গা-জমি রেজিস্ট্রি করে জোরপূর্বক দখল করে আসছিল। তারা কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর মৌজার প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের ২২ শতক জমির ভুয়া মালিক সেজে মাত্র ৭৭ লাখ টাকায় মহিবুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে রেজিস্ট্রি করে দেয়। একইভাবে চক্রটি প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের বাড়িসহ ভ‚সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করেছিল। এ ঘটনায় জমির প্রকৃত মালিক শহরের থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা এমএম ওয়াদুদ ওরফে সেলিম চক্রের ১৮ জনের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী মহিবুল ইসলাম স্বীকারেক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছেন। জালিয়াত চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড এর সভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম।
মহিবুল আরও জানান, জমি আত্মসাতের পরিকল্পনায় চক্রের সদস্যরা কয়েক দফা বৈঠক করে। কুষ্টিয়া পৌরসভার পুকুর পাড়ে এ বৈঠক করেন। এর মধ্যে দুটি বৈঠকে হাজী রবিউল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে হাজী রবিউল আমাকে এ মর্মে নিশ্চিত করেন যে, জমি রেজিস্ট্রির পর ৭৭ লাখ ২০ হাজার টাকা ফেরত দেয়ার পাশাপাশি আরও ১ কোটি টাকা দেয়া হবে। এই লোভে আমি অর্থ বিনিয়োগ করি। হাজী রবিউল ইসলামকে ৩০ লাখ টাকা দেওয়া হয় বলেও জানায়।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক স্বল্প আয়ের পেশাজীবীদের জন্য বরাদ্দ করা ২১২টি হাউজিং প্লট বিধিবহির্ভূতভাবে দখল করেন বলে অভিযোগ রয়েছে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে জেলা পরিষদের নামে একটি মিলনায়তন তৈরি করছে যা জমি বরাদ্ধ ছাড়াই জেলা প্রসাসন সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া কুষ্টিয়াতে সর্বমহলে আলোচনা সমালোচনার বিষয়ে উঠে আসছে এশিয়া মহাদেশের বৃহৎ বস্ত্রকল মোহিনী মিল ধ্বংসের বিষয়ে। কুষ্টিয়ার ৫ পান্ডব ওই মোহিনী মিল ধ্বংস করেছে বলে স্থানীয় অভিযোগ করেন। যার ফলপ্রসূ কুষ্টিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা পঙ্গু হয়ে পরে। বর্তমানে বিআরবি গ্রুপের ৪টি কারখানা কুষ্টিয়ার অর্থনীতিকে পুনরায় চাঙ্গা করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরে জমি জালিয়াতির ঘটনায় কুষ্টিয়া সদর মডেল থানায় ১৮ জনকে আসামি করে যে মামলা হয়েছে, তাতে যুবলীগ নেতা আশরাফুজ্জামান সুজনকে মূল হোতা হিসেবে আসামি করা হয়। সুজনকে যুবলীগের রাজনীতিতে আনার পেছনে বড় ভ‚মিকা ছিল হাজি রবিউল ইসলামের। এনআইডি জালিয়াতি করে জমি বিক্রির মামলায় সুজন গ্রেফতার হওয়ার পর হাজি রবিউল ইসলামের সম্পৃক্ততা নিয়ে শহরে নানা আলোচনা হতে থাকে। ১৩ কোটি টাকার জমি জালিয়াতি করে ৭৭ লাখ টাকায় কেনা হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী মহিবুল ইসলাম গ্রেফতারের পর তার জবানবন্দিতে হাজি রবিউল ইসলামের সম্পৃক্ততার বিষয়ে প্রশাসনও নড়েচড়ে বসেছে। এদিকে জমি জালিয়াতি নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ভূমি সম্পত্তি বিষয়ক জেলা কমিটির এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন তাঁর কার্যালয়ে এই সভা করেন। সভায় জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের নির্দেশে এই জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন জমি জালিয়াতির বিষয়ে জেলায় যত অভিযোগ আছে, তা যেন গ্রহণ করা হয় এবং সবগুলোর ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সভায় জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেনকে প্রধান করে পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত ও সরকারি কৌঁসুলি অনুপ কুমার নন্দীকে সদস্য করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। জমি জালিয়াতির কোনো অভিযোগ পেলে এই কমিটি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন. দূর্নীতিবাজ সে যেই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। ভুমি দখলকারীদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
এ বিষয়ে হাজী রবিউল ইসলাম বলেন, আমি বিন্দুমাত্র এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। আমি নিরপরাধ। আমার বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।