পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
লাখো মানুষের ঢল। মুখে কালেমা শাহাদাতের ধ্বনি। চোখে অশ্রু, কান্না, আহাজারি। শোকের সাগর হাটহাজারী। স্মরণকালের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ নামাজে জানাজা। এরপর মাদরাসা প্রাঙ্গণে চিরনিদ্রায় শায়িত হন হেফাজতে ইসলামের আমির শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী। গতকাল শনিবার বাদ জোহর (বেলা ২টায়) হাটহাজারী মাদরাসা মাঠে তার নামাজে জানাজা পরিণত হয় জনসমুদ্রে।
লাখ লাখ মানুষের বুকফাটা কান্না, করুণ আহাজারিতে পুরো হাটহাজারীজুড়ে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা অগণিত মানুষের পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সর্বজন শ্রদ্ধেয় শতবর্ষী এ আলেমেদ্বীনকে শোক সাগরে শেষ বিদায় জানানো হয়। টানা অর্ধশত বছর যে মাদরাসায় ছিলেন সেখানেই তাকে দাফন করা হলো। দেশের হাজার হাজার আলেমের শিক্ষক আলেমেদ্বীন আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে শেষ বিদায় জানাতে আসা মানুষের ঢলে উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা সদর জনসমুদ্রে পরিণত হয়। প্রায় আট বর্গ কিলোমিটার এলাকায় নামাজে জানাজায় শরিক হন লাখ লাখ মানুষ। মরহুমের বড় পুত্র মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন। তার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি তার পরিবারের পক্ষ থেকে পিতা আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জন্য দোয়া চান। এ সময় জানাজায় শরিক লাখো জনতা কান্নায় ভেঙে পড়ে। আল্লামা শফীর অগণিত ছাত্র চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, এদেশে মাদরাসা শিক্ষা তথা কওমি ধারার শিক্ষা বিস্তার ও প্রসারে আল্লামা শাহ আহমদ শফী গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছেন। তার একান্ত প্রচেষ্টায় এদেশের কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি পাওয়া গেছে। নামাজে জানাজা শেষে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর স্মৃতি বিজড়িত দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বায়তুল আতিক জামে মসজিদের সামনের কবরস্থানে তার কফিন নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
সকাল ৯টায় তার কফিন ঢাকা থেকে হাটহাজারী মাদরাসায় আনা হয়। দীর্ঘ সড়কপথে হাজার হাজার মানুষ রাস্তার দুইপাশে দাঁড়িয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তার কফিন হাটহাজারীতে প্রবেশ করতেই মাদরাসা ছাত্রদের কান্না-আহাজারিতে আকাশ ভারী হয়ে উঠে। মানুষের ভিড় ঠেলে কফিনবাহী অ্যাম্বুলেন্স এগিয়ে যায় হাটহাজারী মাদরাসায়। মাদরাসার একটি শ্রেণিকক্ষে কফিন সকলের দেখার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লাখো জনতা সারিবদ্ধভাবে শেষবারের মতো তাকে শ্রদ্ধা জানান। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আল্লামা শফীর ছাত্র, অনুসারী এবং স্থানীয় জনতা তাকে একনজর দেখতে ছুটে আসেন মাদরাসায়। মাদরাসা ময়দান, সড়ক, ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আল্লামা শফীর অনেক ছাত্রকে তার স্মৃতি উল্লেখ করে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। তাদের মধ্যে তরুণরাও যেমন ছিলেন, ছিলেন বয়োবৃদ্ধরাও।
মাদরসা শুরা কমিটির সিদ্ধান্ত এবং আল্লামা শফীর অছিয়ত অনুযায়ী হাটহাজারী মাদরাসায় জানাযা ও দাফন সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয় শুরা কমিটি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়া হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে হাটহাজারী সদরের সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। আল্লামা শফীর ইন্তেকালের খবরে মাদরাসার সাবেক ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে সারাদেশ থেকে তৌহিদী জনতা হাটহাজারীতে আসতে শুরু করে। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে র্যাব-পুলিশ ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়। হাটহাজারীসহ চারটি উপজেলায় নিয়োগ করা হয় বিজিবি। মাদরাসার শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেন।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, র্যাব-৭ চট্টগ্রামের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক হাটহাজারীতে উপস্থিত থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও জানাজা-দাফনের প্রস্তুতি তদারক করেন। সকাল থেকে হাটহাজারীমুখী মানুষের স্রোত বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে উপজেলা সদরে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। লাখো মানুষ হেঁটে মাদরাসা এলাকায় সমবেত হন। জোহরের আগে হাটহাজারী মাদরাসাকে ঘিরে আশপাশের ৮ থেকে ১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় মানুষের ঢল নামে। যখন জানাজা শুরু হয় তখন মানুষের ভিড় হাটহাজারী সদরের কয়েক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। স্থানীয়রা বলছেন, এতো বিশাল জনসমাগম অতীতে কখনও দেখেননি তারা। ইতিহাসের সর্ববৃহৎ নামাজে জানাজার সাক্ষী হয়েছেন হাটহাজারীর মানুষ।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাকে চমেক হাসপাতালে নেয়া হয়। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার বিকেলে তাকে হেলিকপ্টারে নেয়া হয় ঢাকায়। নাস্তিক মুরতাদ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা দেশের কওমি শিক্ষার কিংবদন্তি এ আলেমের ইন্তেকালে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাটহাজারী বড় মাদরাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি নেয়ার ২০ ঘণ্টার মধ্যেই দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের মাধ্যমে ৯২ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত এ দেশের তৌহিদী জনতার ঈমান, আক্বিদা রক্ষার আন্দোলনে ঐতিহাসিক ভ‚মিকা রাখেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। কওমি ধারার ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের পথিকৃৎ, বিশ্ববরেণ্য এ আলেম সাদাসিধে জীবনযাপন করেন। রাঙ্গুনিয়ায় তার নিজ বাড়ি হলেও তার ধ্যান-জ্ঞান সবকিছুই ছিল হাটহাজারী মাদরাসাকে ঘিরে। জীবনের অর্ধশত বছর হাটহাজারী মাদরাসাতেই কাটিয়েছেন। সেখানেই তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হলো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।