বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আত্মহত্যা করা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে মহাপাপ, মৃত্যুর পর যার পরিণাম হয় জাহান্নাম। এ আত্মহত্যা কত রকমের ও কি কি তা অনির্ধারিত। বিভিন্ন হাদীস হতে যা জানা যায় তা নিম্নরূপ:
১। রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের মধ্যে এক ব্যক্তি আহত হয়েছিল, তীব্র ব্যথায় বিচলিত হয়ে সে ছুরি দ্বারা নিজের হাত কর্তণ করে ফেলে, ফলে এত রক্ত বেয়ে পড়ে যে সে মারা যায়। আল্লাহতাআলা বলেন যে, আমার বান্দা নিজেকে ধ্বংস করতে জলদি করেছে, তাই তার প্রতি আমি জান্নাত হারাম করে দিয়েছি।’ (বোখারী ও মুসলিম) এ হাদীস হতে জানা যায়, প্রাচীনকালে আত্মহত্যার যে সব পদ্ধতি চালু ছিল তার মধ্যে এটি একটি। লোকটির শরীরের একটিমাত্র অংশ হাত জখম হয়ে যায়, তার যন্ত্রণা তার সহ্য শক্তির বাইরে চলে যায় বলে সে তার হাতটি কেটে ফেলে এবং তাতে তার মৃত্যু হয়। আল্লাহতাআলা লোকটির এ কর্মকে আত্মহত্যা বলেছেন এবং তার ঠিকানা হয় জাহান্নাম। পূর্ণ দেহ নয়, দেহের অংশ বিশেষ কেটে ফেলে আল্লাহর কুদরতের ওপর হস্তক্ষেপ করে লোক পাপ করে যা আল্লাহর নিকট কঠিন শাস্তিযোগ্য, আর তা হচ্ছে জাহান্নাম।
২। রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি নিজেকে পর্বত হতে লাফ দিয়ে হত্যা করেছে, তাকে জাহান্নামে পতিত করা হবে এবং সে সর্বদা তাতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছে, জাহান্নামে তার হাতে সে বিষ থাকবে এবং তা তার পেটে বিষক্রিয়া ছড়াতে থাকবে এবং সর্বদা সে জাহান্নামে থাকবে।’ (মুসলিম)
হাদীসটি হজরত আবু হোরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত। এর ব্যাখ্যা এই যে, মানুষ নিজের প্রাণেরও মালিক নয়, বরং সে অপরের ন্যায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সৃষ্ট ও অধীনস্ত। তাই যেমনিভাবে সে অপরের প্রাণ ধ্বংস করতে পারে না এবং তার হেফাজত করা জরুরি, তেমনি সে নিজের প্রাণও ধ্বংস করতে পারে না এবং তার হেফাজত করাও জরুরি।
মানুষ যে সব মাধ্যম বা উপকরণ দ্বারা আত্মহত্যা করে, সেগুলো অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ও কষ্টকর হয়ে থাকে, তথাপি আত্মহত্যার পদক্ষেপ এই ধারণার বশবর্তী হয়ে গ্রহণ করে যে, সাময়িক কষ্ট ও যন্ত্রণা ভোগ করার পর মুক্তি পেয়ে যাবে। অথচ প্রকৃতপক্ষে সাময়িক কষ্ট নয়, বরং তা অত্যন্ত দীর্ঘ যন্ত্রণাদায়ক ও কষ্টকর। সেটা আজাব বা শাস্তির অব্যাহত ধারা, যা সারাক্ষণ প্রাণের ওপর সোওয়ার থাকে এবং তা থেকে কখনো রেহাই পাওয়া যায় না। আত্মহত্যাকারী যে উপায়েই আত্মহত্যা করুক না কেন, প্রাণ বের হয়ে যাওয়ার পর সে উপায় বা মাধ্যমটাই জাহান্নামে তার ওপর অধিষ্ঠিত হয়ে থাকবে এবং যত সময় পর্যন্তই সে জাহান্নামে থাকবে, আজাব হতে নিস্তার নেই।
৩। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের গলা নিজে চিপে প্রাণ হরণ করে, সে জাহান্নামেও নিজের গলা নিজে চিপে ধরবে। আর যে বর্ম দ্বারা আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামেও নিজেকে বর্ম দ্বারা আঘাত করতে থাকবে।’ (বোখারী)
আত্মহত্যাকারীর জাহান্নামী হওয়া নিশ্চিত। সে যে বস্তু বা অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করবে, তাই হবে তার শাস্তি, সেই বস্তু বা অস্ত্র দ্বারা নিজেই নিজেকে আঘাত করতে থাকবে।
৪। আত্মহত্যার একটি শিক্ষণীয় ঘটনা: হজরত জাবের (রা.) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (সা.) যখন হিজরত করে মদীনায় গমন করেন, তখন তোফাইল ইবনে আমর এবং তাঁর সম্প্রদায়ের অপর এক ব্যক্তি হিজরত করেন। তোফাইলের সঙ্গী মদীনায় অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং যন্ত্রণা-কষ্টে সে অস্থির হয়ে যায়। সে তীরের একটি ফলা দিয়ে নিজের আঙ্গুলগুলোর জোর কেটে ফেলে। এতে তার হস্তদ্বয়ের রক্ত বন্ধ না হওয়ায় সে মারা যায়। (তার কাফন দাফন হয়ে যায়) অতঃপর তোফাইল ইবনে আমর তাকে স্বপ্নে দেখেন যে, লোকটির অবয়ব চেহারা ঠিক আছে, তবে সে নিজের হস্তদ্বয় ঢেকে রেখেছে।
তোফাইল ইবনে আমর তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার সাথে রাব্বুল আলামীন কেমন আচরণ করেছেন?’ লোকটি বলল, ‘খোদা আমাকে এই জন্য ক্ষমা করে দিয়েছেন যে, আমি রসূলুল্লাহ (সা.)-এর দিকে হিজরত করেছিলাম। ফের তোফাইল জিজ্ঞেস করলেন, তুমি হস্তদ্বয় কেন ঢেকে রেখেছ? সে বলল, খোদাতাআলা বলেছেন, তুমি যে বস্তুকে নিজেই খারাপ করেছো তা আমি ভালো করব না। তোফাইল স্বপ্নের এ ঘটনা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট বর্ণনা করেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করেন- হে আল্লাহ তার হস্তদ্বয়কেও ক্ষমা করুন।’ (মুসলিম)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।