পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
খাঁটি মুসলমান হওয়ার জন্য তাকওয়ার গুণ অর্জন করা আবশ্যক। সর্ব অবস্থায় আল্লাহকে হাজির নাজির মনে করতে হবে। সুতরাং আল্লাহর চোখ থেকে ফাঁকি দেয়ার মতো ক্ষমতা কারো নেই। এই অনুভূতি একজন মুসলমান যখন ধারণ করতে পারবেন তখন তার দ্বারা পাপকাজ থেকে বিরত থাকা সহজ হবে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমামরা এসব কথা বলেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। নগরীর মহাখালিস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতী মাওলানা এহসানুল হক জিলানী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, খাঁটি মুসলমান হওয়ার জন্য তাকওয়ার গুণ অর্জন করা আবশ্যক। আল্লাহ তা’য়ালা এ প্রসঙ্গে বলেন, হে মুমিনরা তোমরা যথাযথভাবে আমাকে ভয় করো। আর পূর্ণাঙ্গ মুসলমান না হয়ে তোমরা মৃত্যুবরণ করো না। এ আয়াতের মাধ্যমে বুঝায় খাঁটি মুসলমান হওয়ার জন্য অবশ্যই তাকওয়া অর্জন করতে হবে। পেশ ইমাম বলেন, সর্ব অবস্থায় আল্লাহকে হাজির নাজির মনে করতে হবে। সুতরাং আল্লাহর চোখ থেকে ফাঁকি দেয়ার মতো ক্ষমতা কারো নেই। এ অনুভ‚তি একজন মুসলমান যখন ধারণ করতে পারবেন তখন তার দ্বারা পাপকাজ থেকে বিরত থাকা সহজ হবে। আল্লাহ তা‘আলা সবাইকে তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন !
ঢাকার ডেমরার দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জুমার বয়ানে বলেন, মহান আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেছেন, হে মানুষ! তোমাদের ওপর যে সকল মসিবত আপতিত হয় তা তোমাদের নিজ হাতের উপার্জন। মানুষ যত পাপ করে প্রত্যেক পাপের একটি প্রতিক্রিয়া আছে। ওলামায়ে কেরাম গুনাহের ৭০টি ক্ষতি সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। গুনাহের কতিপয় ক্ষতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, গুনাহের কারণে মানুষের অন্তর বিনষ্ট হয়, কলবে কাল দাগ পড়ে যায়, নেক আমলের তৌফিক উঠে যায়, যার কারণে কুরআন তেলাওয়াত করতে ইচ্ছা করে না, যিকর করতে, মসজিদে যেতে ইচ্ছা করে না, বরকত থেকে মাহরুম হবে, ইলম, রিজিক ও হায়াতের বরকত উঠে যাবে, আল্লাহর সাথে তার সম্পর্কে ঘাটতি হবে, নেক কাজে কোন মজা পাবে না, হায়াত কমে যাবে, আল্লাহর রহমতের নজর থেকে দূরে সরে যাবে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অভিশাপের পাত্র হবে।
পেশ ইমাম আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করে বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, তোমরা সাতটি ধংসাত্মক পাপ থেকে বিরত থাক। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ঐ সাতটি গুনাহ কী কী? উত্তরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তা হচ্ছে, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা, যাদু করা, কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, এতিমের মাল ভক্ষণ করা এবং আত্মসাৎ করা, জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা এবং ঈমানদার সতী নারীদেরকে মিথ্যা অপবাদ দেয়া।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড মৌচাকস্থ বাইতুল আমান জামে মসজিদের খতীব প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ জুমার বয়ানে সূরা ফালাকের ওপর বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা করেন। তিনি বলেন, আলো আঁধারের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা’য়ালা। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, সর্ববিধ প্রশংসা আল্লাহরই জন্য যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং অন্ধকার ও আলোর উদ্ভব করেছেন। [ সুরা আন’আম ৬:১ ] দিনের মধ্যে রাতের প্রবেশ ও রাতের মধ্যে দিনের প্রবেশ কয়েকটি কারণে হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আর তিনিই তোমাদের জন্য রাতকে আবরণ ও নিদ্রাকে আরামপ্রদ করেছেন। সুরা ফুরকান, আয়াত: ৪৭।
আল্লাহর নবী (সা.) এশার নামাজের পর অহেতুক সময় নষ্ট করা পছন্দ করতেন না। দ্রুত বিছানায় যাওয়া পছন্দ করতেন। আবার তাহাজ্জুদের সময় উঠে পড়তেন। বর্তমান বিশে^র মানবগোষ্ঠী রাত জাগাকে একটি বদঅভ্যাসে পরিণত করেছে। যা ইসলামি আদর্শের পরিপন্থী।
নগরীর চকবাজার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতীব সাইখুল হাদীস মাওলানা মন্জুরুল ইসলাম আফেন্দী জুমার বয়ানে বলেছেন, সম্পদপাগল মানুষ যেমন তার সম্পদ হারাতে চায় না, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদনকারী যেমন তার ক্ষমতা হারাতে চায় না, ঠিক তেমনি ঈমানের স্বাদ আস্বাদনকারী প্রকৃত মুমিনও কোন অবস্থাতেই তার ঈমান হারাতে চায় না। ঈমানের ওপর অবিচল থেকে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারাই মুমিনের সবচেয়ে বড় সফলতা। হ্যাঁ সাহাবায়ে কেরাম রাযিআল্লাহু আনহুম আজ্বমাঈন এ পর্যায়েরই ঈমানদার ছিলেন। যার কারণে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা তাঁদেরকে হক্ব ও সত্যের মানদন্ড বানিয়েছেন।
মাওলানা আফেন্দী বলেন, ঈমানের মত ঈমান কারো নসীব হবে অথচ তাকে কোন ঈমানী পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে না এটা কল্পনাও করা যায় না। সকল প্রকার ঝুঁকি ও প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে আমাদেরকে পর্বতসম দৃঢ়তা দেখাতে হবে। মহান আল্লাহ কুরআনে কারীমে এরশাদ করেন, মানুষেরা কী মনে করেছে যে তারা ঈমানদার হওয়ার দাবি করবে অথচ তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? এ পরীক্ষা আমি পূর্ববর্তীদের থেকেও নিয়েছি, ঈমানের দাবিতে কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী তা অবশ্যই অবশ্যই আমি জানবো।
গুলিস্তানস্থ পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী জুমার খুতবা পূর্ব বয়ানে বলেন, লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। লজ্জা মানবজাতির স্বভাবগত গুণ। লজ্জা মানুষের অন্তরে ঈমানের সকল প্রকার গুনাহ ও খারাপ কাজের প্রতি ঘৃণাবোধ সৃষ্টি করে। পবিত্র কুরআনে মিথ্যাবাদীদেরকে অভিশাপ দেয়া হয়েছে। এরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর আমরা মিথ্যাবাদীদেরকে আল্লাহর লা’নত দিই’। ( সুরা আল ইমরান, আয়াত নং ৬১)। পেশ ইমাম বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন বান্দা মিথ্যা কথা বলে তখন মিথ্যা কথার দুর্গন্ধে রহমতের ফেরেশতা তার থেকে এক মাইল দূরে চলে যায়। (তিরমিজি শরীফ,খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১৮)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।