গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
স্টাফ রিপোর্টার : বর্তমান সরকার আগামীতে ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশকে শুধু ক্যান্সারমুক্তই নয়, রোগমুক্ত করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে মহাখালীস্থ জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটে আন্তর্জাতিক ক্যান্সার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এসময় বিত্তশালীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা বলুন, প্রতিটি জেলায় একটি ক্যান্সার ইনস্টিটিউট করে দেবেন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করবেন, গরিব মানুষদের বাঁচান। পাঁচতারকা-খ্যাত হাসপাতাল মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা ক্যান্সার-কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যয়ভার কমান, গরিবদের কাছ থেকে কম নেন। আপনারা যদি সহযোগিতা না করেন তবে কীভাবে আমরা ক্যান্সারে জয় হবো। মন্ত্রী বলেন, প্রতি ডিসেম্বরে নারীদের ফ্রি ক্যান্সার নির্ণয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে। এটা গত বিজয় দিবস থেকে চালু হয়েছে। ওই সময় ৪৯৯ জনের মধ্যে ৪১০ জনের মধ্যে ব্রেস্ট ও জরায়ু ক্যান্সারের জীবাণু পাওয়া গেছে। ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা সবচেয়ে বড় ওষুধ উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এর বিকল্প নেই। সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে আমরা সফল হলেও ক্যান্সার-হƒদরোগসহ অন্য অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে আমরা পিছিয়ে আছি। এসব রোগ প্রতিরোধে প্রথম প্রয়োজন সচেতনতা। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ও অনকোলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. শেখ গোলাম মোস্তফা বলেন, বর্তমানে দেশে ১২ লাখ ক্যান্সার রোগী আছে। দেশের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা সদর হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যবস্থা চালুু করা দরকার বলে মনে করেন তিনি। অনুষ্ঠানে জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ডা. মোয়াররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. দীন মো. নূরুল হক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) প্রফেসর ডা. শামিউল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে জানানো হয় Ñ ২০১৪ সালে এ হাসপাতালে ১৮ হাজার ৫৫৬ নতুন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারে ২৭ দশমিক ৫, লসিকাগ্রন্থির ক্যান্সারে ১৩ দশমিক ২, খাদ্যনালির ক্যান্সারে ৫ দশমিক ২, পাকস্থলির ক্যান্সারে ৪ দশমিক ৯, যকৃতের ক্যান্সারে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ আক্রান্ত। অন্যদিকে, স্তন ক্যান্সারে ২৭ দশমিক ৪, জরায়ু ক্যান্সারে ১৭ দশমিক ৯, লসিকাগ্রন্থির ক্যান্সারে ৬ দশমিক ১, ফুসফুসের ক্যান্সারে ৬ ও পিত্তথলীর ক্যান্সারে ২ দশমিক ৮ শতাংশ নারী আক্রান্ত।
বিএসএমএমইউতে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস উদযাপন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘বিশ্ব ক্যান্সার দিবস ২০১৬’ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে র্যালি ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনকোলজি বিভাগ, শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগ, ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফিশিয়াল সার্জারি বিভাগ এবং গাইনি অনকোলজি উইংয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বর্ণাঢ্য র্যালির বেলুন উড়িয়ে শুভ উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. কামরুল হাসান খান। র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশ প্রদক্ষিণ করে আবার বটতলায় এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
রোশ-এর গোলটেবিল বৈঠক
‘আমরা পারি, আমি পারি’ স্লোগানকে প্রতিপাদ্য রেখে বিশ্বখ্যাত ক্যান্সার ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রোশ বাংলাদেশ এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের এলিগেন্ট হলে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মোফাজ্জেল হোসোইন, প্রফেসর সেলিম রেজা, সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার, জন কবির, এলিটা করিম, ক্যান্সার সারভাইবার ও তাদের পরিবার, বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন ব্যক্তি ও রোশ বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশে ক্যান্সারের প্রকোপ বৃদ্ধি ও তার প্রতিকার এবং ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে তা উত্তরণের উপায় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হয়।
প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার নির্ণয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা। আলোচনায় উঠে আসে বেশিরভাগ সময়ই প্রথম অবস্থায় ক্যান্সার রোগীরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হওয়ার কারণে ক্যান্সারের পূর্বলক্ষণগুলো সম্পর্কে অবগত থাকেন না। বৈঠকে ক্যান্সারের ৭টি পূর্বলক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
নর্থইস্ট ক্যান্সার হাসপাতাল
দেশে ক্যান্সার রোগীদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়লেও সেই তুলনায় এর চিকিৎসা সুবিধা একেবারেই অপ্রতুল। এই বাস্তবতার মাঝেই ঢাকার বাইরে সিলেটে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে একটি বিশ্বমানের ক্যান্সার হাসপাতাল। সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় গড়ে ওঠা আধুনিক এই ক্যান্সার হাসপাতালের নাম নর্থইস্ট ক্যান্সার হাসপাতাল। গতকাল বিশ্ব ক্যান্সার দিবসে এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এটি মূলত নর্থইস্ট মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের একটি নতুন উদ্যোগ। এর আগে নর্থইস্ট মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল কার্ডিয়াক ও অন্যান্য রোগের চিকিৎসায় সিলেট অঞ্চলে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে।
২০১৪ সালের জুন থেকে ক্যান্সার হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবা অনানুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবসে হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু। বাংলাদেশে ঢাকার বাইরে এটিই প্রথম স্পেশালাইজড কোনো ক্যান্সার হাসপাতাল। হাসপাতালটিতে স্থাপন করা হয়েছে কেমোথেরাপির জন্য আধুনিক ইনফিউশন পাম্প। এ ছাড়া ব্রাকিথেরাপি এবং আধুনিক সিটি সিমুলেটরও স্থাপন করা হয়েছে।
নর্থইস্ট ক্যান্সার হাসপাতালে রয়েছে দেশের অন্যতম সেরা অনকোলজিস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনকলোজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ডাক্তার সৈয়দ আকরাম হোসেনের নেতৃত্বে একটি অভিজ্ঞ ও চৌকস চিকিৎসক দল। হাসপাতালটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নর্থইস্ট ইউনিভার্সিটির ভিসি ডা. মো. খলিলুর রহমান, নর্থ ইস্ট মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাক্তার নুরুল আম্বিয়া চৌধুরি, নর্থইস্ট মেডিক্যাল প্রাইভেট লিমিটডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মো. আফজাল মিয়া এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রফেসর ডাক্তার শাহরিয়ার হসেন চৌধুরী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।