পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কুড়িগ্রামে ভয়াবহ ভাঙন চলছে উলিপুরের বজরা ইউনিয়ন এলাকায়। এই এলাকায় গাইবান্ধা জেলার নদী বিচ্ছিন্ন অংশ কাশিমবাজারেও চলছে তান্ডব। তিস্তা নদীর প্রবল স্রোতে গত দু’সপ্তাহে দুই জেলার তিন শতাধিক বাড়িঘরসহ স্কুল ও মসজিদ নদীগর্ভে চলে গেছে। একমাত্র পাকা সড়ক পথের দুশ’ মিটার ভাঙনে বিলীন হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এলাকাটি। দুই জেলার সীমানা হওয়ায় রশি টানাটানি, জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নজরদারীর অভাবে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে মানুষ। এনিয়ে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করলেও বরাদ্দ না পাওয়ার অজুহাতে হাত গুটিয়ে বসে আছে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ।
অন্যদিকে, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় কুমার নদের অব্যাহত ভাঙনে বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট বিলীন হয়ে গেছে। নানা অজুহাতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, স্রোত ও ট্রলার চলাচলে ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙছে কুমার নদের পাড়। গৃহহারা হয়ে কাঁদছেন নদের পাড়ের মানুষ। এ বর্ষা মৌসুমে এরই মধ্যে দুটি গ্রামের ১২টি বাড়ি ভেঙে নদে বিলীন হয়ে গেছে।
এছাড়া দুটি রাস্তা কুমার নদে বিলীন হয়ে যাওয়ায় মানুষের যোগাযোগে মানুষের চলাচল সমস্যা হচ্ছে। আরও শতাধিক বাড়িঘর রয়েছে ঝুঁকির মুখে। আতঙ্কে দিন কাঁটাচ্ছেন রাজৈর উপজেলার কুমার নদের পাড়ে বসবাসকারী চারটি ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের ২ শতাধিক পরিবার।
কুড়িগ্রামের উলিপুর বজরা ইউনিয়ন ভাঙন কবলিত এলাকার গফুর মিয়া জানান, তিনবার বাড়ি ভাঙছি। এরপর শ্বশুরের ভিটায় আশ্রয় নিছি। সেটাও ভাঙি গেইছে। হামরা এ্যালা কোটে যামো। জরিমন নামে এক বিধবা মহিলা জানান, প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়া অনেক কষ্ট করি বাঁচি আছি। এপাকে বাড়ি ভাঙবের নাগছে। কাঁইয়ো জাগা দিবার নাগছে না। খাবারও নাই। গাছের ডাল কাটি বিক্রি করি কোনমতে বাঁচি আছি। তোমরা নদীটা বান্ধি দেও।
কৃষক মোজাম্মেল হক জানান, বাহে ১২ একর জমি আছিল। ৭ বার বাড়ি ভাঙছি। সম্পদ সউগ নদী খায়া গেইছে। এ্যালা বাড়িভিটাসহ ৩০শতক জমি আছে। সেটাও যাবার নাগছে। এটা গেইলে নিঃস্ব হয়া যামো।
সরেজমিনে দেখা যায়. কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার চর বজরা এবং গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের নদী বিচ্ছিন্ন ও কুড়িগ্রামের সাথে লাগোয়া লখিয়ার পাড়া, পাড়া সাদুয়া, মাদারীপাড়া ও ঐতিহ্যবাহি কাশিমবাজার হাট, কাশিমবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নাজিমাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, কাশিমবাজার সিনিয়র মাদরাসা এবং ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও এই এলাকায় একমাত্র চলাচলের পথ চিলমারী, কাশিমমবাজার টু উলিপুর সড়কের প্রায় ২শ’ মিটার সড়কপথ নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এলাকার মানুষজন। যেভাবে ভাঙছে তাতে কয়েক দিনে উলিপুরের বজরা ও হরিপুরের কাশিমবাজার এলাকার দু’হাজার পরিবারের ভিটেমাটি তিস্তার পেটে চলে যাবে।
কাশিমবাজার এলাকার অধিবাসী ফরহাদ আলী সরকার, শিমুল, আতিয়ার মাস্টার, আবু তালেব, আশরাফ মাস্টারসহ স্থানীয়রা জানান, নদী বিচ্ছিন্ন গাইবান্ধা জেলার এই অংশটুকু কুড়িগ্রামের অংশে পড়ায় এলাকার মানুষ সব সময় বৈষম্যের শিকার হয়েছে। এই করোনায় আমরা কোন বরাদ্দ পাই নাই। এলাকার তিনভাগের দুইভাগ অঞ্চল নদীগর্ভে চলে গেলেও স্থায়ী কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে এলাকার সুধিজন মোস্তাফিজার রহমান বাবুল, আব্দুস সবুর ও মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, ভাঙন ঠেকাতে আমরা দু’জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ছোটাছুটি করেছি। গাইবন্ধা বলে আপনারা কুড়িগ্রামের সাথে যোগাযোগ করুন। এখান থেকে নদী পেরিয়ে কাজ করতে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এদিকে কুড়িগ্রাম থেকে তীব্র নদী ভাঙনে জিও ব্যাগ ফেলানো হলেও তা কাজে লাগছে না। শুকনো মৌসুমে কাজের কথা বললেও তারা শোনে না। এখন শুধু ঠিকাদার দিয়ে অর্থের অপচয় হচ্ছে। তারা দ্রুত তিস্তা নদীর ভাঙন থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষার দাবি জানিয়েয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, বরাদ্দ ও বাজেট না পাওয়ায় কাজে বিঘ্ন ঘটছে। বরাদ্দ পেলে ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।
বর্তমানে জেলার ৯টি উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, তিস্তা, ধরলা নদীর ৬৭টি পয়েন্টে প্রায় ৮ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এরমধ্যে ৫৩টি পয়েন্টে ৬ কিলোমিটার জায়গায় জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলছে।
অপরদিকে মাদারীপুরে সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার গাংকান্দি শাখারপাড় এলাকার রাস্তাটি ভেঙে কুমার নদে চলে গেছে। এ ছাড়াও লুৎফর হাওলাদার, ছানোয়ার মল্লিক, শাহ আলম মল্লিকের, ইশিবপুর এলাকার জাহেদা বেগম, বিকাশ রায়, সিরাজ মল্লিকের এবং বদরপাশা গ্রামের রেজাউল ফকিরের বসতঘর নদে বিলীন হয়ে গেছে। টেকেরহাট-কালীবাড়ী ফিডার সড়কের গোয়ালবাথান নামক স্থানে পাকা রাস্তাটি নদে বিলীন হয়ে গেছে। পাশে জমির ভেতর রাস্তা করে কোনো রকমে আসা-যাওয়া করছে মনুষ।
নদীর পাড়ের লোকজন জানায়, দুইপাড়ের ১২টি গ্রামের প্রায় একহাজার পরিবার বসবাস করে। নদের ভাঙনের কবলে পড়ে এরই মধ্যে কিছুসংখ্যক পরিবার অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। পরিবর্তন হয়ে গেছে তাদের বাপ দাদার ঠিকানা। এক শ্রেণির স্বার্থাস্বেষী সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করে বড় ও ছোট ড্রেজার মেশিন দিয়ে সারা বছর কোটি কোটি ঘনফুট বালু উত্তোলন ও ব্যবসা করে লাভবান হয়ে আসছে। এতে বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। পক্ষান্তরে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ কৃষক। জমি ও বাড়িঘর হারিয়ে ভ‚মিহীনে পরিণত হচ্ছে অনেকেই। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা নানাভাবে প্রশাসনকে বাধাগ্রস্ত করায় বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না।
শংকরদী গ্রামের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এমারত ফকির জানান, আমি ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাই। গেল বছর এখান থেকে জোর করে বালু কেটে নিয়ে গেছে বালু ব্যবসায়ীরা। এ বছর বাড়িসহ চারটি পরিবারের বাড়িঘর নদীরগর্ভে বিলীন হয়ে গেল। এখন আমি কীভাবে বাঁচব এবং মাথা গোঁজার ঠাঁই কীভাবে বানাব। চরমস্তফাপুর গ্রামের হায়দার হাওলাদার জানান, চরমস্তফাপুর বাজারসহ মসজিদ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। মল্লিককান্দি শাখারপাড় গ্রামের হাসান মাতুব্বর জানান, গেল বছরেও বাড়িঘর ভেঙেছে, এ বছরও ভয়াবহরূপে ভাঙছে। এ বছর যেভাবে বালু কাটা হচ্ছে তাতে আগামী বছর আরও বহু বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
মেবানকান্দির লাবলু মুন্সী জানান, তার ৩৩ শতক জায়গায় রোপিত গাছের বাগান, আলমগীরের বাড়ী ও তিনটি ঘর নদী খেয়ে ফেলেছে। কালীবাড়ী এলাকার কালাম মাতুব্বর জানান, বিশ্বাম্বরদী, নিলাম্বরদী, মহেন্দ্রদী, হরিদাসদী, মল্লিককান্দি, গাংকান্দি, শংকরদী, কালীবাড়ী, হরিদাসদী, চরমস্তফাপুর বাজার এলাকা ব্যাপকভাবে ভাঙছে। বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কেউ।
গোয়ালবাথান এলাকার বায়েজিদ মেম্বার জানান, এর আগে টেকেরহাট-হরিদাসদী রাস্তার গোয়ালবাথান নামক স্থানটি একরাতেই ধসে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একবছর পার হলেও পুনঃর্র্নিমাণ হয়নি। এ বছরও আবার ভাঙছে। নদীতে পানি টান দিলে (কমলে) আরও ব্যাপক ভাঙন দেখা দেবে। এ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী মুকসুদপুর উপজেলাধীন ঢাকা বরিশাল মহাসড়কের পাশে ছাগলছিড়া এলাকায় পায়রা প্রজেক্ট ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ গ্রিড স্টেশন নির্মাণে ৬০ একর জমি প্রায় ১০ ফুট উচ্চতায় ভরাট করার জন্য প্রায় সাড়ে ৪ কোটি ঘনফুট বালু উত্তোলন করে নিচ্ছে এ নদী থেকেই।
এ ব্যাপারে ইশিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফায়েজুর রহমান হিরু জানান, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ ও ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
রাজৈর ইউএনও সোহানা নাসরিন বলেন বিষয়টি আমি শুনেছি আশাকরি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।