বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলাম শান্তির ধর্ম, নিরাপত্তার ধর্ম। এই ধর্মে আগমন করার জন্য কোনো জোর জবরদস্তি প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে যারা ইসলামে প্রবেশ করে তারা ইসলামের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা লাভ করে ধন্য হয় কৃতার্থ-হয়। পিয়ারা নবী মোহাম্মাদ মোস্তফা আহমাদ মুজতাবা (সা:) আল্লাহতায়ালার সর্বশেষ নবী ও রাসুল। তাঁর পরে আর কোনো নবী ও রাসুলের আগমন ঘটবে না। তাঁর শরীয়াত ও কিতাব পূর্ববর্তী সকল শরীয়াত ও কিতাবকে রহিত করে দিয়েছে। তাঁর নাবুওয়াত ও রিসালাত কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। তিনি সমগ্র জগতের জন্য নবী। তিনি যেমন কেয়ামত পর্যন্ত তাঁর উম্মতের জন্য নবী, তেমনি তিনি সকল নবীদেরও নবী।
বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ মোস্তফা (সা:)-এর উম্মতগণ দুভাগে বিভক্ত। (ক) উম্মতে এজাবত অর্থাৎ যারা তাঁর প্রবর্তিত ইসলাম ধর্মকে মনে প্রাণে গ্রহণ করেছে এবং ইসলামের যাবতীয় অনুশাসন পালনে তৎপর। এই উম্মতে এজাবতের অন্তর্ভুক্ত কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠি যদি রাসুলুল্লাহ (সা:)-এর প্রতি তাচ্ছিল্য বা অবমাননা সূলভ কথা, কাজ ও ব্যবহার প্রদর্শন করে, তবে তা ইসলাম হতে বহিষ্কৃত হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এতদপ্রসঙ্গে নিম্নের প্রমাণাদি অনুধাবন করা যেতে পারে।
(১) হে বিশ্ববাসীগণ! তোমরা নবী কণ্ঠস্বরের উপর তোমাদের কণ্ঠস্বর উঁচু করো না এবং নিজেদের মধ্যে কথোপকথনের ন্যায় রাসূলের সাথে উচ্চস্বরে কথা বলো না। কারণ এতে তোমাদের অজ্ঞাতসারে তোমাদের আমলসমূহ নিষ্ফল হয়ে যাবে। (সূরা আল হুজুরাত : আয়াত ২)।
(২) নবীর মাহাত্ম্য ও মর্যাদা মেনে নেয়া, তাঁর সাথে আচরণে শালীনতা রক্ষা করা, তাঁর উপস্থিতিতে নিম্নস্বরে কথা বলা, তাঁকে আল্লাহর নবী বা আল্লাহর রাসূল শব্দে সম্বোধন করা ইত্যাদি উম্মতের জন্য ওয়াজিব। (তাফসীরে মাজহারী : খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪১)।
(৩) ইমাম চতুষ্টয় হতে ঐক্যমত্যে বর্ণিত, সন্দেহাতীতভাবে ঐ ব্যক্তি কাফির যে নবী করীম (সা:) কে গালি দেয় অথবা তাকে হত্যা করা বৈধ মনে করে। (রাদ্দুল মুহতার : খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩১৭)। (৪) সাধারণ আহলে ইলেমগণের এ কথার উপর ইজমা হয়েছে যে, নবী করীম (সা:)-কে গালি দিলে তাঁর শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড। (আস সারিমুল মাসলুল : পৃষ্ঠা ৪)।
(৫) আল্লামা হাসকাফী (রহ:) বলেন, মুরতাদ মুসলমান তাওবা করলে তার তাওবা গ্রহণযোগ্য। এমন কি বার বার মুরতাদ হলেও। (তাওবার কারণে তার দন্ড মওকুফ হবে)। আর কোনো নবীকে গালি দিয়ে কেউ কাফির হলে দন্ডবিধি অনুযায়ী তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে। তার তাওবা আদৌ কবুল করা হবে না। (রাদ্দুল মোহতার : খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৩১)।
(খ) দ্বিতীয় প্রকার উম্মত হলো উম্মতে দাওয়াত। অর্থাৎ যারা ইসলামের দাওয়াত পেয়ে যে কোনো সময় ইসলাম কবুল করতে পারে। এই শ্রেণির কোনো ব্যক্তি বা সম্প্রদায় যদি রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে, চাই তা কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পাক, কিংবা লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ পাক, অথবা তা নবীর কার্টুন আঁকার মাধ্যমে প্রকাশ পাক, তাহলে সেই লোকটিকে অবশ্যই মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করবে ইসলামী রাষ্ট্র। (শারহু ফিকহে আকবার : পৃষ্ঠা ১১৪)।
কিন্তু সেই লোকটি যদি অমুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিক হয়, তাহলে মুসলিম রাষ্ট্রের উচিৎ তার তীব্র প্রতিবাদ করা এবং এই অপরাধজনিত কাজের বিচার প্রার্থনা করা। যদি এটাও সম্ভব না হয়, তাহলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ইসলামী রাষ্ট্রে পাওয়া গেলেই প্রাণদন্ডের ঘোষণা জারি করা। এটা হলো দুনিয়ার শাস্তি। আর আখেরাতের শাস্তি হলো সে চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে। তার নিস্কৃতি লাভের কোনো আশাই নেই। (আল ইউয়াকিতু ওয়াল জাওয়াহিরু : খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৭)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।