বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ঢাকার জিঞ্জিরা খ্যাত নীলফামারীর সৈয়দপুরে খেটে খাওয়া মানুষের দৈন্যদশা কাটছে না। করোনাকালীন ব্যবসা বাণিজ্য স্বাভাবিক হলেও সৈয়দপুরের ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র কারখানাগুলো পুরোদমে উৎপাদনে যেতে পারছে না। দেশীয় বাজারে চাহিদা কম এবং দেশের বাইরে রফতানি বন্ধ থাকায় কারখানাগুলো মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
স্বল্প পুজি আর স্বল্প ঋণে সরকারের প্রণোদনা থেকেও বঞ্চিত রয়েছে এসব কারখানা। উপরোন্ত ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষুদ্র ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে অনেক কারখানার মালিক খেলাপী হয়ে পড়েছেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে কারখানা’র যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। ফলে বর্তমানে সৈয়দপুর শহরের পাঁচ শতাধিক ক্ষুদ্র কারখানা মালিক, কারিগর ও শ্রমিকরা চরম অনিশ্চতায় দিন কাটাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের বাণিজ্যিক এই শহরের ক্ষুদ্র পোশাক কারখানা পাঁচশ’র বেশি হবে। শহরের মুন্সিপাড়া, নয়াটোলা, মিস্ত্রিপাড়া, হাতিখানা, গোলাহাট, ঘোড়াঘাট, নিয়ামতপুর, পুরাতন বাবুপাড়া, কাজীরহাট, সৈয়দপুর প্লাজাসহ সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ক্ষুদ্র পোশাক কারখানাগুলো। শহরের প্রায় প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় গড়ে উঠেছে এ সব পোশাক কারখানা। মূলত শহরের একেকটি বাড়ি একেকটি পোশাক কারখানায় পরিণত হয়েছে। প্রতিটি পোশাক কারখানায় পাঁচটি থেকে অর্ধশতাধিক মেশিন রয়েছে। ঢাকার মিরপুর, কালিগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, টঙ্গী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার গার্মেন্টস থেকে ঝুট কাপড় সংগ্রহ করেন। এ সব কারখানায় গার্মেন্টসের ঝুট কাপড় দিয়ে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, টাউজার, হাফ প্যান্ট, জ্যাকেট, টি-শার্ট, জিন্সের প্যান্টসহ নানা ধরনের পোশাক তৈরি করা হয়। সৈয়দপুরের ক্ষুদ্র কারখানায় তৈরি করা পোশাক দেশের বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করা হচ্ছিল পাশের দেশ ভারত, নেপাল ভ‚টানেও। এতে করে এলাকায় ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।
এ সব ক্ষুদ্র পোশাক কারখানাকে ঘিরে বিগত ২০০২ সালে রপ্তানিমুখী ক্ষুদ্র গার্মেন্টস মালিক গ্রুপ সৈয়দপুর নামে পোশাক প্রস্তুককারকদের একটি সংগঠন গড়ে উঠার পর থেকে এর ব্যাপকতা আরো বেড়ে যায়। পাশাপাশি এখানকার ক্ষুদ্র পোশাক কারখানার মালিকদের সার্বিক সহায়তায় এগিয়ে আসে এসএমই ফাউন্ডেশন। সংস্থাটি এ শিল্পের মালিক ও কারিগরদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়। বিগত বছরগুলোতে কয়েক দফায় তাদের প্রশিক্ষণও প্রদান করা হয়। সংস্থাটি এনসিসি ব্যাংক সৈয়দপুর শাখার মাধ্যমে ক্ষুদ্র গার্মেন্টস মালিকদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থাও করেন। বিগত ২০১৫ সালে গ্রুপভিত্তিক প্রায় আড়াই কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়। এ ঋণ নিয়ে অনেক কারখানা মালিক ঝুট কাপড় থেকে পোশাক তৈরি করে বেশ ভাল ব্যবসাও করেন। চলমান করোনাভাইরাসের কারণে দেশের বাজারে ক্ষুদ্র পোশাকের চাহিদাও মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। বন্ধ হয়ে যায় ভারত, নেপাল ও ভূটানে রফতানি।
সম্প্রতি শহরের খাজা গরীবে নেওয়াজ গার্মেন্টসের মালিক শেখ বাচ্চুর সঙ্গে। তারা বলেন, করোনা আগে আমাদের পোশাকের ব্যাপক চাহিদা ছিল। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে কাপড় ব্যবসায়ী সৈয়দপুরে এসে আামাদের কারখানার তৈরি পোশাক পাইকারি দরে কিনে নিয়ে যেত। এতে আামাদের ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক ভাল হতো। কিন্তু করোনার প্রার্দুভাব শুরুর পর থেকে ব্যবসায় চরম মন্দাভাব বিরাজ করছে। আগের মতো আর আমাদের তৈরি পোষাক বিক্রি হচ্ছে না। তার কথার সত্যতা মিললো গতকাল সরেজমিনে শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ সড়কে ক্ষুদ্র কারখানায় তৈরি পোশাকের দোকানগুলোতে গিয়ে। ওই সড়কের দুই পাশে পোশাক দোকানগুলোতে থরে থরে বিভিন্ন পোশাক সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু তেমন কোন ক্রেতা নেই।
ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে কথা হলে তনিকা গার্মেন্টস এর স্বত্ত্বাধিকারী মো. মাহবুব আলম বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে বাজার একেবারে মন্দা। এখন বেলা সাড়ে ১২টা বাজে। অথচ এখন পর্যন্ত এক টাকারও মালামাল বিক্রি করতে পারিনি। বর্তমানে ব্যবসার যে হাল তাতে দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারী খরচই উঠছে না। পুঁজি ভেঙে আমাদের চলতে হচ্ছে এখন।
সৈয়দপুরের রপ্তানিমুখী ক্ষুদ্র গার্মেন্টস মালিক গ্রুপের সভাপতি মো. আখতার খান বলেন, বিগত দিনে এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এনসিসি ব্যাংকের স্থানীয় শাখা থেকে আমাদের গ্রুপের সদস্যদের গ্রুপভিত্তিক ঋণ প্রদান করা হয়। গ্রুপভিত্তিক ঋণের কারণে গ্রুপের একজন সদস্য ঋণ খেলাপি হলে ওই গ্রুপের অন্যরা ঋণ পরিশোধ করেও আর ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন না। এছাড়াও ইতিমধ্যে গ্রুপভিত্তিক ঋণ নিয়ে কয়েকজন ক্ষুদ্র পোশাক কারখানার মালিক মৃত্যুবরণ করেন। এতে করে বর্তমানে আমাদের ঋণ সুবিধা প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে আামদের ব্যবসায় ধস নেমে এসেছে। তিনি সৈয়দপুরের ক্ষুদ্র পোশাক কারখানা মালিকদের এককভাবে ঋণ প্রদাণের দাবি জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।