পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জলবায়ু পরিবর্তন, তাপমাত্রা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে দেশের ১৩টি জেলা মহাবিপদের মুখে। জেলাগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা। তাছাড়া এসব জেলা সংলগ্ন আরও ৮টি জেলা মিলিয়ে উপকূলীয় ২১ জেলায় কমবেশি পড়ছে বিরূপ প্রভাব। অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে ভোলা, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম। দক্ষিণ-পশ্চিমের সাতক্ষীরা জেলার ব্যাপক অংশে মাটি ও পানি লবণাক্ত। জোয়ারে প্লাবিত হওয়ায় লোনার আগ্রাসন ক্রমাগত বাড়ছেই। চট্টগ্রামের স›দ্বীপ, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া সমুদ্রের করাল গ্রাসে গত ৫০ বছরের ব্যবধানে চার ভাগের তিন ভাগ ভূমি হারিয়েছে।
বিপন্ন হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ঢাল বা বর্ম, শ্বাসতন্ত্র কিংবা ফুসফুস সুন্দরবন। বঙ্গোপসাগর বছরের দীর্ঘ সময় অশান্ত থাকে। ঘূর্ণিঝড়-নিম্নচাপ, জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস ও লবণাক্ততার আগ্রাসনে ফল-ফসল আবাদ-উৎপাদন ও কৃষি-খামারের ঘটছে সর্বনাশ। উপকূল, চর ও দ্বীপাঞ্চলের অগণিত বাসিন্দা হারাচ্ছে তাদের বসতঘর, চাষবাস। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের নীরব অথচ চলমান এই সঙ্কট উঠে এসেছে দেশি-বিদেশি গবেষণায়।
সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্র (এসএমআরসি) নাসা, বিশ্বব্যাংক, ইউনিসেফ, ইউনেস্কো ও বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হারের চেয়েও বেশি হারে দেবে যাচ্ছে বাংলাদেশের ভূমি বা মাটি। প্রতিবছর বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় এলাকাসমূহের মাটি দেবে বসে যাচ্ছে। যদিও বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, ভূমি প্রতিবছর ৫ মিলিমিটার বসে গেলেও পলি জমে আরও ৭ মি.মি. উঁচু হয়ে যায় ভূত্বক। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। অপরিকল্পিত বাঁধ, সড়ক রাস্তাঘাট, সুইচ গেইট, বসতি তৈরি, শিল্পায়ন ইত্যাদি মানবসৃষ্ট বিভিন্ন অবকাঠামো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে। এ কারণে নদীর পানি বা বন্যার পানি সর্বত্র ছড়াতে পারে না। পলিমাটি পৌঁছায় না অনেক জায়গায়। ফলে ভূমি দেবে যাওয়ার তুলনায় সব জায়গায় ভূমি উঁচু হচ্ছে না।
গত ১ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং ঠিকমতো পানি চলাচলের জন্য সড়কের প্রকল্পে বেশি বেশি কালভার্ট তৈরির নির্দেশ দেন। ইউনেস্কো’র গবেষণায় বলা হচ্ছে, তাপমাত্রা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান সুন্দরবনের উপর। সমুদ্রপৃষ্ঠের ৪৫ সেন্টিমিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে সুন্দরবনের ৭৫ শতাংশ ডুবে যেতে পারে। ইতোমধ্যে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের গহীন অরণ্যে বঙ্গোপসাগর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মান্দারবাড়ীয়া ক্যাম্প সমুদ্রগর্ভে হারিয়ে গেছে। এই ক্যাম্পসহ ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার এলাকার ভূমি সমুদ্রগর্ভে হারিয়ে গেছে।
লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে সুন্দরবনে গাছপালা কমছে। ম্যানগ্রোভ বন, বাঘ-হরিণসহ জীবজন্তু, জীববৈচিত্র্য, মধু ভান্ডারের জন্য যা অশনিসঙ্কেত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম ইনকিলাবকে বলেন, সুন্দরবনের প্রধান অনুষঙ্গ সুন্দরী গাছ মরে যাওয়ার অন্যতম কারণ লবণাক্ততার আগ্রাসন। সুন্দরবনে হরেক জাতের গাছপালা থেকে বীজ মাটিতে পড়ে বনাঞ্চল সৃজনের স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।
লবণাক্ততার আগ্রাসন খাদ্য উৎপাদন ও কৃষিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। খাদ্যনিরাপত্তা চরমভাবে ব্যাহত হবে। ব্যাপক কৃষিজমি তলিয়ে যাবে। আর যেসব জমি তলিয়ে যাবেনা সেখানে লবণাক্ত পানি প্রবেশের ফলে উৎপাদনক্ষমতা কমবে। ফসল আবাদে ব্যয় ও কায়িক শ্রম বাড়বে। প্রত্যাশার চেয়ে উৎপাদন হবে কম। হাইব্রিড ফল-ফসল, সবজি চাষাবাদের ফলে উৎপাদন স্থিতিশীল থাকলেও এক পর্যায়ে তা থমকে যাবে ও কমবে। বাড়বে উৎপাদন খরচ। বাংলাদেশ ফুড সিকিউরিটি ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম’র গবেষণায় বলা হয়, ২০৫০ সাল পর্যন্ত দেশের চাল উৎপাদন প্রতিবছর ৩ দশমিক ৯ শতাংশ হারে কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
লবণাক্ততার কারণে পানির নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে। মিঠাপানির বিভিন্ন উৎস লবণাক্ততার কবলে পড়বে। ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরতা বাড়বে। এতে করে আর্সেনিক সংক্রমণের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা জনস্বাস্থ্যের প্রতি ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি মানুষের জীবিকার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। লবণাক্ত পানির আগ্রাসনের কারণে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশস্য উৎপাদন ব্যাহত এবং ফসলের গুণগত মান পরিবর্তিত হবে। ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ যে জমিতে আগে হতো ধানের চাষাবাদ, সেখানে এখন লবণের মাঠ।
গবেষণা বলছে, সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, গভীরতার পরিবর্তন এবং পানির রাসায়নিক গুণগত মানের পরিবর্তনের কারণে মাছের অসংখ্য প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। অনেক সামুদ্রিক প্রাণী নিশ্চিহ্ন হবে। কেননা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অক্সিজেনের ঘাটতি, কার্বন ও রাসায়নিকের আধিক্যের কারণে মাছসহ সামুদ্রিক প্রাণিজগতের শ্বসন, বিচরণ, প্রজনন, বংশবিস্তার ও শারীরিক বৃদ্ধি, খাদ্য-শৃঙ্খলের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। পানির উচ্চতা পরিবর্তনের কারণে প্রাণিজগত আলো ও অক্সিজেনের স্বল্পতায় ভুগছে।
সমুদ্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব মৎস্যসহ সামুদ্রিক প্রাণিজগতের উপর পড়ছে। উষ্ণতা সহ্য করতে না পেরে মৎস্য ও প্রাণিকূল অন্যত্র সরে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অসংখ্য প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ও প্রাণী হারিয়ে গেছে। অনেকগুলো বিলুপ্তির পথে।
ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস নয়। বিপদসঙ্কেত কিংবা পূর্বাভাসও ছিলনা। অথচ জলোচ্ছ্বাসের মতো উচ্চতায় অস্বাভাবিক সামুদ্রিক জোয়ারে ডুবে যায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় বিস্তীর্ণ এলাকা। গত ২২ আগস্ট পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপকূলীয় বন্যা স¤পর্কিত বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৭-১৮ আগস্ট থেকে বঙ্গোপসাগরে সক্রিয় মৌসুমী বায়ু, উত্তর-মধ্য বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ, অমাবস্যার প্রভাবে উপক‚লীয় অঞ্চলের নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। কীর্তনখোলা, তেঁতুলিয়া, পায়রা, বিষখালী, বলেশ্বর, বুড়িশ্বর, নয়াভাঙ্গানি, মেঘনা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এতে করে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, খুলনা, বাগেরহাট জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ওই প্রতিবেদনে জানা যায়, নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার থেকে ১ মিটারেরও অধিক উচ্চতায় অবস্থান করে। এমনকি ৬টি পয়েন্টে জোয়ারের উচ্চতা গত ২০ মে সংঘটিত ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ‘আমফান’র রেকর্ড অতিক্রম করে।
চুয়েটের বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মো. রিয়াজ আখতার মল্লিক বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধ্ইু নিম্নাঞ্চল নয়, রাজধানী ঢাকাও আশঙ্কামুক্ত নয়। ঢাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। ওয়াার্ল্ড ওয়াইল্ড-লাইফ ফান্ডের মতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ঢাকাও আক্রান্ত হতে পারে। জলাভূমি, খাল-বিলসহ নিচু এলাকাগুলো ভরাট করে রাতারাতি অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা ঢাকা মহানগরী ও শহরতলী এলাকাগুলো বড়সড় ঝুঁকির কারণ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।