বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
‘কাসামাহ’র এ ঘটনাটি ইসলামে প্রথম। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুন-হত্যার নানা দন্ডবিধি ফেকা শাস্ত্রের ইমামাগণ উদ্ভাবন করেছেন। খুন-হত্যার মহাপাপের শাস্তি যেমন সুকঠিন, প্রাণের বদলে প্রাণ তেমনি প্রমাণ করার জন্য সাক্ষ্য শেপথের ব্যাপারটিও যথেষ্ট জটিল। কাসামাহর ঘটনা হতে উদ্ভ‚ত বিষয়গুলো তাই আমরা বিভিন্ন হাদীসের আলোকে উপরে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ‘কাসামাহ’ নীতির ভিত্তিতে ইবনে ইসহাকের বর্ণনা অনুযায়ী, ঘটনাটি ছিল এই যে, রসূলুল্লাহ (সা.) তায়েফের দিকে গমনকালে কয়েকটি স্থান অতিক্রম করেন। ‘র্হারাতুর রামাদ’ নামক একটি পাথরি জমিতে উপনীত হলে সেখানে তিনি একটি মসজিদ কায়েম করেন এবং তাতে নামাজ আদায় করেন। ইবনে ইসহাক আমর ইবনে শোয়েবের বরাতে বলেন, ‘তিনি আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, ঐ দিন উক্ত স্থানে তিনি একটি খুনের কিসাস (বদলা) দেন, যা ইসলামে প্রথম খুন ছিল।’
ঘটনার বিবরণ এই যে, বনি লাইসের এক ব্যক্তি বনি হোজাইলের এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। হুজুর (সা.) এর বদলা হিসেবে হত্যাকারীকে মৃত্যুদন্ড দান করেন। ‘ওয়াযেহা’ নামক পুস্তকে বর্ণিত হয়েছে যে, ঐ হত্যাকারীকে কাসামতের সাথে মৃত্যুদন্ড দান করেন।
আরো বলা হয়ে থাকে যে, মোহাল্লাম ইবনে জুসামা কর্তৃক আমের ইবনে আযবাত আসজায়ী নিহত হন। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে দিয়াত (শোণিতপণ) প্রদানের কথা বলেন, তা তারা কবুল করে। সুতরাং, রসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ অনুযায়ী তারা একশত উট প্রদান করে। মোহাল্লাম কিছু দিন জীবিত ছিল। একটি বর্ণনায় সাত দিনেরও কম। অতঃপর তার মৃত্যু হয়। তাকে দাফন করা হলে জমিন তাকে ওগলে দেয়।
বর্ণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘হে আল্লাহ! মোহাল্লামকে ক্ষমা করো না।’ তাই জমিন তাকে তিনবার ওগলে দেয়। এতে রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: ‘জমিন তার চেয়ে মন্দ লোককেও গ্রহণ করে, কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা তাকে তোমাদের জন্য শিক্ষণীয় করা।’ এরপর লোকেরা তাকে পর্বতের দুই উপত্যকার মধ্যে ফেলে দেয় এবং সে হিংস্র জন্তুদের খাদ্য হয়।
‘খুনের বদলে খুন’ এ নীতি কথা ইসলামে নতুন নয়। হজরত মূসা (আ:)-এর প্রতি অবতীর্ণ ‘তাওরাত’ গ্রন্থেও এ বিধান ছিল এবং আল্লাহ তাআলা কোরআনেও তা বহাল রেখেছেন। এতদসংক্রান্ত বিভিন্ন আয়াতে হত্যার নানা দিকও তুলে ধরা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, একজন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা যেন সারা বিশ্ববাসীকে হত্যা করার শামিল। তাই অন্যায় হত্যা যেমন মহাপাপ, তার শাস্তিও সুকঠিন।
অর্থাৎ প্রাণের বদলে প্রাণ হরণ করা। তবে তা করতে হবে ন্যায়ভিত্তিক সুবিচারের মাধ্যমে। সে জন্যই সাক্ষী-শপথের কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অন্যায় প্রদর্শিত হলে নিহতের লাশও কবর গ্রহণ করে না, জীব জন্তুর খাদ্য হয়, সে দৃষ্টান্তেরও অভাব নেই। রসূলুল্লাহ (সা.)-এর সময়েও এরূপ ঘটনার প্রমাণ রয়েছে।
আমরা গুম-খুন-হত্যা, অপহরণ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে জাহেলী যুগের কাসামার ইতিহাস, কাহিনী তথা ঘটনার উল্লেখ করেছি এবং কাসামার মাধ্যমে হত্যাকারির বিচার ও নিহত ব্যক্তির ওয়ারেশগণকে শোণিতপণ (দিয়াত) প্রদানে রসূলুল্লাহ (সা.)-এর ফয়সালার কথাও বলা বলেছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।