Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আশা জাগাচ্ছে বন্যা সহিষ্ণু ভাসমান বীজ

মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ, ঝালকাঠি থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

ঝালকাঠিতে বন্যায় পানি উঠে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট করেছে। এর মধ্যে আমনের বীজতলাই বেশি। এ অবস্থায় কৃষকরা যখন দিশেহারা, তখন কৃষি বিভাগের পরামর্শে জলাবদ্ধ ক্ষেতেই ভাসমান বেডে বীজতলা করা হয়। সেই বীজতলাই এখন আশা জাগাচ্ছে কৃষকের মনে। কৃষি বিভাগ বলছে, বন্যা সহিষ্ণু ভাসমান বেডে যারা বীজতলা করেছেন, তাদের ফসলের ক্ষতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। বরঞ্চ তাদের কাছ থেকে বীজ নিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন অন্য কৃষকরা।
কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ঝালকাঠি জেলায় চলতি আমন মৌসুমে দুই শতাধিক বন্যা সহিষ্ণু ভাসমান বীজতলা তৈরি করে ইতোমধ্যেই সফলতা পেয়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা। এর মধ্যে কৃষি বিভাগের অর্থায়নেই করা হয়েছে ১২০টি। বন্যার পানিতে তাদের বীজতলার ক্ষতি হয়নি। কলাগাছের ভেলায় তৈরি এসব বীজতলায় এখন সোনালী ধানের স্বপ্ন বুনছেন তারা।
কৃষকরা জানায়, অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ডুববে না। সেচের প্রয়োজন পড়বে না। কীটনাশক ছিটাতে হবে না। এমনকি সারেরও প্রয়োজন হবে না। এমন বীজতলা এত দিন ছিল কৃষকদের স্বপ্নে। সেই স্বপ্নের বীজতলা বাস্তবেই তৈরি করছেন তারা। বন্যা ও বৃষ্টির জন্য যেসব এলাকার বীজতলা পানিতে ডুবে আছে, সেসব জায়গায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহায়তায় কলাগাছের ভেলায় ভাসমান বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদন করে সফল হয়েছেন কৃষকরা। এই আমনের চারা রোপনকারী কৃষকদের চাহিদা পূরণ করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝেও বিতরণ করা হয়।
জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিবছরই বন্যা, অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। তাই যথাসময়ে ফসল উৎপাদনে বিলম্ব হচ্ছে। একই সঙ্গে ফসলের ঘাটতি হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রান্তিক কৃষকরা। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ভাসমান বীজতলা তৈরি করতে বন্যার মধ্যেই কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। অনেকে বন্যার আগেই এ ধরণের বীজতলা করেছেন। ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় বীজতলার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। একেকটি ভাসমান বীজতলায় চার কেজি অঙ্কুরিত বীজ ছিটানো হয়েছে। তাতে যে চারা জন্মেছে, তা তিন-চার বিঘা জমিতে রোপণ করা সম্ভব। পানির ওপর ভাসমান থাকার কারণে এরূপ বীজতলায় পানি সেচের দরকার হয় না। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি এ চারা রোপণ শুরু হবে।
রাজাপুরের বাঘরি গ্রামের কৃষক ইদ্রিস হাওলাদার বলেন, কৃষি বিভাগ আমাদের একেকটি বেডের জন্য সাড়ে চার হাজার টাকা দিয়েছে। এ টাকা দিয়ে কলার ভেলা ও লতা দিয়ে বেড তৈরি করে আমনের বীজ করেছি। বন্যায় পানি উঠে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে বেডের বীজ কাজে লাগছে।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভাটারাকান্দা গ্রামের কৃষক আবু হানিফ বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে চারটি বেডে ভাসমান বীজতলা করেছি। এ বীজ এখন বপন করছি। বন্যায় ক্ষেতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, সেখানেই এ বীজ করা হয়। এখন পানি কমে গেছে, তাই বীজ বপন শুরু করেছি।
নলছিটি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইসরাত জাহান মিলি বলেন, বন্যার সময় মাঠে গিয়ে কৃষকের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। কৃষকরা যাতে ভাসমান বেডে বীজ করতে পারে এ জন্য তাদের আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। এখন ভাসমান বেডের বীজ দিয়েই তারা ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে।
ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ফজলুল হক বলেন, ঝালকাঠি জেলায় ১২টি ভাসমান বেডে আমনের বীজ করার জন্য কৃষকদের নগদ টাকা দিয়েছি। তারা বীজ করে সফলতা পেয়েছেন। সরকারের উচিত এ ধরণের বীজতলা করার জন্য আরো বেশি বরাদ্দ দেয়া। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা গেলে নিজেরাই পরে ভাসমান বেডে বীজতলা করবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভাসমান-বীজ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ