Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে চুরি-অপহরণ-খুন-গুমের মামলা ও ফায়সালা-৩

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

কাসামাহর বিখ্যাত ঘটনাটি বোখারী ও মুসলিমের বরাতে মেশকাতের প্রথম অধ্যায়ে এবং আবু দাউদের বরাতে তৃতীয় অধ্যায়ে উদ্ধৃত করা হয়েছে। প্রথম বর্ণনাটি হজরত রাফে ইবনে খোদাইজ (রা.) ও সহল ইবনে আবি খাসমা (রা.)-এর- তারা বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে সহল (রা.) এবং মোহাইয়্যাসা ইবনে মাসউদ (রা.) খাইবার আগমন করেন এবং দু’জনই খেজুর বাগানে একে অপর হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। আবদুল্লাহ ইবনে সহল (রা.)-কে কোনো অজ্ঞাত ব্যক্তি হত্যা করে। সহল (রা.)-এর পুত্র আবদুর রহমান এবং ইবনে মাসউদ (রা.)-এর পুত্র হোওয়াইসা ও মোহাইয়েসা হুজুর (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে এ সম্পর্কে আলোচনার সূত্রপাত করেন। বয়সে সবচেয়ে ছোট আবদুর রহমানই কথা শুরু করেন। হুজুর (সা.) তাঁকে বললেন: ‘প্রথমে বড়কে বলতে দাও, বড়দের সম্মান প্রদান কর।’ এই হাদীসের একজন রাবীর নাম ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ বলেন, হুজুর (সা.)-এর কথা ছিল এই যে, ‘তোমাদের মধ্যে বয়স্ক কেউ কথা বলুক।’ সুতরাং, সে কথা বলল।

হুজুর (সা.) জবাবে বললেন: ‘তোমরা নিজেদের নিহত, অথবা সঙ্গীর শোণিতপণের তখনই অধিকারী হবে, যখন তোমাদের মধ্যে পঞ্চাশ ব্যক্তি হলফ করবে।’ তারা আরজ করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! এ ঘটনা সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না।’ তিনি বললেন: ‘তাহলে পঞ্চাশ জন ইহুদী কসম করে তোমাদেরকে মুক্ত করে দেবে।’ তারা আরজ করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! তারাতো কাফের কসম করে বসবে।’ অত:পর রসূলুল্লাহ (সা.) নিজের পক্ষ হতে তাদেরকে শোণিতপণ প্রদান করেন।

অপর এক বর্ণনায় হজরত রাফে ইবনে খোদাইজ (রা.) বলেন: আনসারদের মধ্যে এক ব্যক্তি খাইবারে নিহত হয়। তার ওয়ারিশগণ রসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হয় এবং ঘটনা বর্ণনা করে। হুজুর (সা.) বললেন: ‘তোমাদের মধ্যে দুইজন সাক্ষী পেশ করো যারা তোমাদের নিহত ব্যক্তির হত্যাকারীর ব্যাপারে সাক্ষ্য দেবে।’ তারা আরজ করল: ‘হে আল্লাহর রসূল! যেখানে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে, সেখানে কোনো মুসলমান উপস্থিত ছিলেন না।’ ইহুদীদের ব্যাপারে কথা হলো, তারা এর চেয়ে অধিক সাহসের পরিচয় দিতে পারে। তিনি বললেন: ‘আচ্ছা, তোমরা ইহুদীদের মধ্যে হতে পঞ্চাশ ব্যক্তিকে মনোনীত করো এবং তাদের থেকে হলফ গ্রহণ করো।’ তখন তারা এতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে রসূলুল্লাহ (সা.) নিজের পক্ষ হতে নিহত ব্যক্তির শোণিতপণ প্রদান করেন। (আবু দাউদ)

বর্ণিত দুইটি হাদীস হতে জানা যায়, নিহত ব্যক্তির হত্যাকারী অজ্ঞাত ছিল এবং হত্যাকান্ড প্রত্যক্ষ করার কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায়নি। তাই শোণিতপণ হিসেবে খোদ রসূলুল্লাহ (সা.) একশটি উট নিজের পক্ষ হতে নিহত ব্যক্তির ওয়ারেশগণকে প্রদান করেন। এর অর্থ হচ্ছে কোনো লোকের হত্যাকারী অজ্ঞাত থাকলে নিহতের ওয়ারেশগণকে রাষ্ট্রের পক্ষ হতে শোণিতপণ প্রদান করতে হবে।



 

Show all comments
  • গাজী মোহাম্মদ শাহপরান ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:০০ এএম says : 0
    সব চুরির ক্ষেত্রে ইসলামে হাত কাটার শাস্তি প্রযোজ্য নয়। অন্যের মাল হেফাজতকৃত ও সংরক্ষিত স্থান থেকে বিনা অনুমতিতে গোপনে নিয়ে যাওয়াকে ইসলামের পরিভাষায় চুরি বলা হয়। তাই শর্তের বেড়াজালে অনেক ক্ষেত্রেই চুরির 'হদ' জারি হয় না। যেমন 'সংরক্ষিত স্থান' শর্ত থাকায় সাধারণ জনসমাবেশের স্থান যেমন মসজিদ, ঈদগাহ, পার্ক, ক্লাব, স্টেশন, রেল, জাহাজ ও বিশ্রামাগারে রাখা মাল কেউ চুরি করলে তার হাত কাটা হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • কে এম শাকীর ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:০১ এএম says : 0
    কিন্তু সীমালঙ্ঘনের পর যে তাওবা করে ও সংশোধিত হয়, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল রাহী ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:০২ এএম says : 0
    অনেকেই রাষ্ট্রীয় তথা জাতীয় সম্পদ চুরি করতে একটুও দ্বিধা করে না। তাদের ধারণা, সবাই তো করে যাচ্ছে তাই আমিও করলাম। এতে অসুবিধে কোথায়? মূলত এ ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ, জাতীয় সম্পদ বলতে রাষ্ট্রের সকল মানুষের সম্পদকেই বুঝানো হয়। সুতরাং এর সাথে বহু লোকের অধিকারের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষভাবে তাতে রয়েছে গরিব, দু:খী, ইয়াতীম, অনাথ ও বিধবাদের অধিকার। তাই ব্যক্তি সম্পদের তুলনায় এর গুরুত্ব অনেক বেশি এবং এর চুরিও খুবই মারাত্মক।
    Total Reply(0) Reply
  • সাকা চৌধুরী ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:০২ এএম says : 0
    কেউ কেউ কোন কাফিরের সম্পদ চুরি করতে এতটুকুও দ্বিধা করে না। তাদের ধারণা, কাফিরের সম্পদ আত্মসাৎ করা একেবারেই জায়িয। মূলত এরূপ ধারণাও সম্পূর্ণটাই ভুল।
    Total Reply(0) Reply
  • তাসফিয়া আসিফা ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:০৩ এএম says : 0
    কেউ শয়তানের ধোঁকায় চুরি করে ফেললে তাকে অবশ্যই আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট খাঁটি তাওবা করে চুরিত বস্ত্তটি উহার মালিককে ফেরৎ দিতে হবে। চাই সে তা প্রকাশ্যে দিক অথবা অপ্রকাশ্যে। সরাসরি দিক অথবা কোন মাধ্যম ধরে। যদি অনেক খোঁজাখুঁজির পরও উহার মালিক বা তার ওয়ারিশকে পাওয়া না যায় তা হলে সে যেন বস্ত্তটি অথবা বস্ত্তটির সমপরিমাণ টাকা মালিকের নামে সাদাকা করে দেয়। যার সাওয়াব মালিকই পাবে। সে নয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন