করোনা মহামারির মধ্যেই চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সারা পৃথিবীতে সাড়া ফেলেছিল আফ্রিকা মহাদেশের দ্বীপ রাষ্ট্র মাদাগাস্কারে একটি গাছ। স্থানীয় ওই গাছ থেকে তৈরি পানীয় মাদাগাস্কারে ব্যবহার করা হচ্ছে করোনা প্রতিরোধের জন্য। মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট এ্যান্ড্রি রাজোইলিনা স্বয়ং আর্টেমিসিয়া নামের ওই গাছের ‘আশ্চর্য গুণের কথা’ প্রচার করেছিলেন।

জানা গেছে, চীনের ঐতিহ্যবাহী ওষুধ তৈরিতে এই আর্টেমিসিয়া ব্যবহৃত হয়ে আসছে ২০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। এই গাছ থেকে তৈরি ওষুধ সাধারণত সেখানে ম্যালেরিয়া বা জ্বর সারাতে এবং বেদনা-উপশমকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চীনা ভেষজশাস্ত্রে একে বলা হয় কিংহাও। ইংরেজিতে একে সুইট ওয়ার্মউড বা এ্যানুয়াল ওয়ার্মউড বলা হয়। বিকল্প ওষুধ হিসেবে বা কিছু কিছু মদ তৈরিতেও এর ব্যবহার আছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট রাজোইলিনা বলেছিলেন, আর্টেমিসিয়া থেকে তৈরি কোভিড-অর্গানিক্স নামে একটি পানীয়ের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে এবং তা এই রোগের চিকিৎসায় কার্যকর বলে দেখা গেছে। নভেম্বর মাসে তিনি সেই একই দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। কিন্তু এর পক্ষে কোন প্রমাণ প্রকাশ্যে দেখানো হয়নি। ঠিক কি কি উপাদান দিয়ে এই পানয়িটি তৈরি হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে সরকার বলেছে যে এর ৬০ শতাংশই এসেছে আর্টেমিসিয়া গাছ থেকে। মাদাগাস্কারে এটির ক্যাপসুল ও ইনজেকশনও তৈরি হয়েছে এবং তা মানবদেহের ওপর পরীক্ষা অর্থা্ৎ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, আর্টেমিসিয়া গাছটির নির্যাস ম্যালেরিয়া রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর। কিন্তু তা কোভিড-১৯ মোকাবিলা করতে পারে এমন কোন প্রমাণ নেই। তবে, জার্মান এবং ড্যানিশ বিজ্ঞানীরা এখন আর্টেমিসিয়া এ্যানুয়া গাছের নির্যাস পরীক্ষা করে দেখছেন। তারা বলছেন, ল্যাবরেটরিতে চালানো পরীক্ষায় তারা নতুন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এর কিছুটা কার্যকারিতা দেখতে পেয়েছেন। এ গবেষণায় দেখা গেছে যে এই নির্যাসকে যখন বিশুদ্ধ ইথানল বা পাতিত পানির সাথে ব্যবহার করা হয়, তখন তা এ্যান্টি-ভাইরাল হিসেবে কাজ করে বলে দেখা গেছে। তবে তাদের এই গবেষণা অন্য বিজ্ঞানীদের দ্বারা স্বাধীনভাবে যাচাই করানো হয়নি। এই গবেষকরা এখন যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কাজ করছেন, এবং কোন এক পর্যায়ে এটা মানবদেহের ওপর পরীক্ষা করা হবে। চীনও নিজেদের উদ্যোগে সেদেশে আর্টেমিসিয়া এ্যানুয়া উদ্ভিদ ব্যবহার করে যেসব ঐতিহ্যবাহী ওষুধ তৈরি হয় - তা পরীক্ষা করে দেখছে।

আর্টেমিসিয়া উদ্ভিদের একাধিক প্রজাতি আছে। এর মধ্যে আর্টেমিসিয়া এ্যানুয়া এবং আর্টেমিসিয়া আফ্রা নামের দুটি প্রজাতি কোভিড-১৯এর বিরুদ্ধে কাজ করে কিনা তা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করছে দক্ষিণ আফ্রিকাও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংস্থাটির আফ্রিকান অঞ্চলের কর্মকর্তা জঁ-ব্যাপটিস্ট নিকিয়েমা বলেছেন, প্রথম ট্রায়ালগুলোর ফলাফল দেখার পর তারা হয় পরবর্তী পর্বের ট্রয়ালগুলোতে জড়িত হতে পারেন।

প্রসঙ্গত, আর্টেমিসিয়া এ্যানুয়া গাছের শুকনো পাতায় যে সক্রিয় উপাদানটি পাওয়া যায় তাকে বলে আর্টেমিসিন - এবং তা সত্যিই ম্যালেরিয়া সারাতে কাজ করে। চীনে ১৯৭০এর দশকে যখন ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক তৈরির গবেষণা চলছিল - তখনই সেখানকার বিজ্ঞানীরা এটা আবিষ্কার করেছিলেন। আর্টেমিসিন-ভিত্তিক কম্বিনেশন থেরাপি - যাকে বলা হয় এসিটি - তা ম্যালেরিয়া সারাতে ব্যবহারে সুপারিশ করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশেষ করে ম্যালেরিয়ার যেসব টাইপ এখন ক্লোরোকুইন-প্রতিরোধী হয়ে গেছে - সেগুলোর ক্ষেত্রেই এ অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। সূত্র: বিবিসি।