Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্ভোগে ২১ জেলার যাত্রী

শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে টানা ৯ দিন ফেরি বন্ধ

মাদারীপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলা এবং আরিচা (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে নাব্য সংকটের কারণে নয় দিন ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার হাজার হাজার যাত্রীদের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্পিডবোট ও লঞ্চ দিয়ে পারাপার হচ্ছে। খোলা আকাশের নিচে অমানবিকভাবে দিন পার করছে ট্রাকের চালক হেলপাররা। পদ্মা সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এবং বিআইডবিøউটিএ’র কাজের সমন্বয় না থাকায় গত তিন মাসে ড্রেজিং কাজে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয় হলেও তা কোন কাজে আসেনি।
এদিকে, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় যানবাহনের চাপ বেড়েছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে। এই দুই ঘাটে গতকাল শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত সহ¯্রাধিক ট্রাক ফেরি পারাপারের জন্য অপেক্ষায় ছিল।
জানা গেছে, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে নাব্যতা সংকটের কারণে গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে সকল ধরনের ফেরী চলাচল বন্ধ থাকে। গত নয়দিন যাবত বিআইডবিøউটিএ , বিআইডবিøউটিসি এবং পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ ড্রেজিং করে চ্যানেলটি ফেরি চলাচলের উপযোগী করে তোলে। গতকাল শুক্রবার সকালে বিআইডবিøউটিএ , বিআইডবিøউটিসি যৌথভাবে লৌহজং টানিংয়ের চ্যানেলটি সার্ভে করে। পরে বিকাল ৫টায় পরীক্ষামূলকভাবে ক্যামেলিয়া, জাহাঙ্গীর ও কাকলি ফেরী কাঁঠালবাড়ির উদ্দেশে শিমুলিয়া ঘাট ছেড়ে যায়। নিরাপদে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে যেতে পারলে আগামীদিন থেকে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হবে।
গত তিন মাস ধরে বিআইডবিøউটিএ’র ড্রেজারগুলো পলি কেটে তা ফেলছে পদ্মার চরের অধিগ্রহণকৃত ৩ নম্বর বøকে পদ্মা সেতুর ২২ নম্বর খুঁটি বরাবর। চ্যানেলের আশেপাশেই ফেলার কারণে সেই পলি আবার চ্যানেলে এসে পরছে। এতে কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেজিং করেও কোন সুফল আসছে না। বিআইডবিøউটিএ-এর দাবি, নদী খননের পর পলিমাটি ফেলার জায়গা নেই, তাই নদীর পাড়েই পলিমাটিগুলো ফেলতে হচ্ছে। বিআইডবিøউটিএ’র এজিএম শফিকুল ইসলাম জানান, বর্তমানে নৌ-চ্যানেলে ৯টি ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং করছে বিআইডবিøউটিএ। তার মতে, ড্রেজিং করে পলিমাটিগুলো দূরে ফেলা হলে ভালো হয়। বিআইডবিøউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজে অধিগ্রহণ করা জায়গায় চীনা প্রতিষ্ঠান ড্রেজিংয়ের পলিমাটি ফেলছে। সেখানে বিআইডবিøউটিএ’র কাটা পলিমাটি ফেলতে দেওয়া হয় না। আর মাটি ফেলতে বিআইডবিøউটিএ’র নিজস্ব উঁচু কোনো জায়গাও নেই। তাই চরের পাশেই পলি ফেলতে হয়। বিআইডবিøউটিএ শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে নাব্যতা সংকট নিরসন করতে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত তিন মাসে পাঁচ লাখ ৬০ হাজার ঘনমিটার পলি অপসারণ করেছে। এতে খরচ হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা। এত বিপুল টাকা খরচ করেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে তা কোন কাজে আসেনি। বিআইডবিøউটিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইদুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত সাত লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণ করা হয়েছে। চ্যানেলের নব্যতা সঙ্কট কাটাতে এবং ফেরি চলাচল শুরু করতে বিআইডবিøউটিএ’র লৌহজং টার্নিং চ্যানেলে ৫টি এবং পদ্মা সেতু এলাকায় ২টি পদ্মা সেতু কতৃর্পক্ষের ১টিসহ মোট ৮টি ড্রেজার কাজ করছে।
তিনি জানান, গত কয়েকদিনে ২৫ ও ২৬ নম্বর পিলারের কাছাকাছি পলি পড়ে নতুন করে নব্যতা সংকট সৃষ্টি করেছে। কোন কোন স্থানে গভীরতা রয়েছে ৪/৫ফুট। এতে যে কোন সময় এ চ্যানেলে নৌ-চলাচলও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বিআইডবিøউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়েত রহমান বলেন, গত ৯দিন যাবৎ শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ আছে। ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে অর্ধশতাধিক ট্রাক ও পিকআপ। আগামীকাল শনিবার ফেরি চলাচল শুরু হলে সঙ্কট কেটে যাবে।
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, নাব্যতা সঙ্কটের কারণে টানা ৯ম দিনের মতো শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। খোলা আকাশের নিচে অমানবিকভাবে দিন পার করছে ট্রাকের চালক হেলপাররা। ড্রেজিং কার্যক্রম চললেও কাজের কোনো অগ্রগতি দেখছে না ঘাটে আটকেপড়া যাত্রীরা। এদিকে ফেরি বন্ধ থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চ ও স্পিডবোটে পদ্মা পার হচ্ছেন মাদারীপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। তবে এই বিড়ম্বনার শিগগিরই অবসান ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বিআইডবিøউটিএ এবং বিআইডবিøউটিসি।
জানা যায়, পদ্মার চ্যানেলে নাব্যতা সঙ্কটে গত ২৯ আগস্ট থেকে রাতে ফেরি বন্ধ এবং গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে এই রুটের পুরো ফেরি সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়। এই বহরে রয়েছে ১৭টি ফেরি। তবে দুইটি রোরোসহ ৪ ফেরি অন্যত্র পাঠানো হয়েছে। এখন ১৩ ফেরি ঘাটে অলস বসে আছে। ফেরি বন্ধ হয়ে ঘাটে জনমানুষ শ‚ন্য হওয়ায় ঘাট এলাকার খাবার হোটেলগুলো প্রায় বন্ধ। এতে খাবার সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে আটকেপড়া পরিবহন চালক ও হেলপারদের। এদিকে নৌ-চ্যানেলটিতে ড্রেজিং কার্যক্রমের তেমন গতি পাচ্ছে না। স্রোতের কারণে ভেসে আসা ময়লা-আবর্জনা আটকে ড্রেজিং কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় ঘাটে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকশ’ পণ্যবাহী ট্রাক ও পরিবহন আটকা পড়েছে। পরিবহনের যাত্রীরা ঘাটে এসে পড়েছে বিপাকে। লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। বর্তমানে ৮৭টি লঞ্চ ও দেড় শতাধিক স্পিডবোট পদ্মায় চলাচল করছে। এ রুটে অচলাবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় দৌলদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে চাপ বেড়েছে।
বিআইডবিøটিসির জিএম মো. আতিকুজ্জামান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, চলাচল শুরু হলে ফিরিয়ে আনা হবে ফেরিগুলো।
আরিচা সংবাদদাতা জানান, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরি চলাচলে অচলাবস্থা না কাটায় বাড়তি যানবাহনের চাপ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় অব্যাহত রয়েছে। এই দুটি ঘাটে গতকাল বিকাল পর্যন্ত সহস্রাধিক ট্রাক ফেরি পারের অপেক্ষায় ছিল। ট্রাক শ্রমিকরা জানান, ৩ থেকে ৪ দিন অপেক্ষার পর তারা ফেরিতে বুকিং পাচ্ছেন। ঘাটে আটকা পড়ে তারা চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আরিচা সড়কে সারিবদ্ধ ট্রাকের কারণে দুই লেনের এই রাস্তায় স্থানীয় যানবাহন চলাচলে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। দফায়-দফায় যানজট সৃষ্টি হওয়ায় যাত্রী ও পশুবাহী যানবাহনের শ্রমিকরা দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছেন। ২০ মিনিটের রাস্তা পার হতে ঘণ্টা পার হয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসী দাবি করেন, ট্রাকগুলোকে আরিচা পুরাতন ফেরি টার্মিনালে পার্ক করা হলে এই সড়কে যানজট সমস্যা অনেক কমে যেত। বিআইডবিøউটিএ›র নৌপরিবহন ও সংরক্ষণ বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. সানোয়ার হোসেন জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে ড্রেজিং চালিয়ে পাটুরিয়া ঘাটের সম্মুখে পদ্মার ডুবোচরে পলি অপসারণ করছে ৪টি ড্রেজার। তিনি জানান, এই চ্যানেলের অনেক উন্নতি হয়েছে। ফেরিগুলো স্বাভাবিকভাবেই চলতে পারছে।
বিআইডবিøউটিসি›র ডিজিএম জিল্লুর রহমান জানান, পাটুরিয়ার ৩নং সম্মুখে একটি ড্রেজার থাকায় পন্টুনের একটি পকেট বন্ধ রয়েছে। বাকি ঘাটগুলো সচল রয়েছে। ড্রেজিংরত চ্যানেলে ওয়ানওয়ে সিস্টেমে ফেরিগুলো চলতে বাধ্য হচ্ছে এবং ঘাটে লোড-আনলোডে অনেক সময় ভিড়তে আসা ফেরিকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে কিছু সময়ের জন্য। ছোট বড় মোট ১৭টি ফেরি দিয়ে বিরতীহীনভাবে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। বাস, ছোট কারসহ যাত্রীবাহী যানবাহনগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করা হচ্ছে। এতে ঘাটে আসা ফেরি পারের অপেক্ষায় থাকা ট্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘাট সংলগ্ন টার্মিনালগুলো ট্রাকে ঠাঁসা। টার্মিনালে স্থানসঙ্কুলান না হওয়ায় ঘাটমুখী ট্রাকগুলো মহাসড়কে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় রাখা হচ্ছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাটুরিয়া ঘাট সংযোগ সড়কের মোড় উথলী থেকে আরিচা পর্যন্ত দীর্ঘ ৪ কিলোমিটার রাস্তা পুরোপুরি অপেক্ষমান ট্রাকের সারিতে ঠাঁসা। গতকাল বিকাল পর্যন্ত পাটুরিয়া প্রান্তে ৫ শতাধিক যানবাহন ফেরি পারের অপেক্ষায় ছিল। এতে উভয় প্রান্তেই সহস্রাধিক ট্রাক ফেরি পারের অপেক্ষায় ছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্ভোগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ