Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে চুরি-অপহরণ-খুন-গুমের

মামলা ও ফায়সালা-১

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৪ এএম

জান-মাল-আবরু, মানব জীবনে এ তিনটি মহামূল্যবান সম্পদ। জান না থাকলে মাল-সম্পদ, ধন-দওলাত এবং মান-সম্মান, ইজ্জত-আবরু কোনো কিছুরই প্রয়োজন পড়ে না। তাই ইসলামে জানের নিরাপত্তা বিধানের সাথে সাথে বাকি দু’টির নিরাপত্তা-হেফাজতের ওপরও বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। অন্যায়ভাবে কোনো মানুষকে খুন বা হত্যা করা, জখম করা, গুম করা, অপহরণ করা অথবা নিজের প্রাণ নিজে বিনাশ করা তথা আত্মহত্যা করাকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে।

কারো ক্ষতি, অনিষ্ট বা হয়রানি করার জন্য দাগাবাজি, প্রতারণা, গাদ্দারি, চুরি, ডাকাতি, লুটতরাজ, আত্মসাৎ ইত্যাদি পাপাচার মাল-সম্পদের সাথে জড়িত। গালি-গালাজ, চুগুলখুরি, মিথ্যাচার, অপবাদ, দুর্ব্যবহার ইত্যাদিসহ আরো বহু অপকর্ম মানুষের ইজ্জত-আবরুর সাথে জড়িত।

ইসলাম এ সবকিছুর হেফাজত ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বহু বিধি-বিধান জারি করেছে। এগুলোর মধ্যে সর্ব প্রথম প্রাণ রক্ষা করার কথা এসে যায়। প্রাণ হরণ করাকেই বলা হয় ‘কতল’, অর্থাৎ হত্যা করা। আর নিজেকে নিজে খুন করাকে বলা হয় আত্মহত্যা।

আল্লাহতাআলা রসূলুল্লাহ (সা.)-কে প্রাচীন জাতিগুলোর অনেক কাহিনী ও ঘটনা জানিয়ে দিয়েছেন, যা পবিত্র কোরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। একটি ঘটনা বোখারী ও মুসলিমে এইভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘বনি মাখজুম’ গোত্রের এক নারী সম্পর্কে কোরেশরা খুব দুশ্চিন্তায় পড়েছিল। এ নারীর অভ্যাস ছিল চুরি করা।

লোকেরা পরামর্শ করল যে, এ নারীর ব্যাপারে রসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে কথা বলা দরকার। এ জন্য কে প্রস্তুত আছে? তাদের আলোচনায় কথা উঠে আসে যে, হজরত ওসামা ইবনে জাইদা (রা.) ব্যতীত আর কেউ নেই, যিনি এ সাহস করতে পারেন। তিনি ছিলেন রসূলুল্লাহ (সা.)-এর অতি প্রিয়। তিনি বিষয়টি রসূলুল্লাহ (সা.)-কে জানান।

রসূলুল্লাহ (সা.) বললেন: ‘হে ওসামা! তুমি কি আল্লাহর সীমার ব্যাপারে সুপারিশ করছ?’ এতে ওসামা বলে উঠলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! ভুল হয়ে গেছে, আমাকে ক্ষমা করুন।’ এরপর রসূলুল্লাহ (সা.) একটি খুৎবা দেন এবং আল্লাহর প্রশংসা-গুণ বর্ণনার পর বলেন: ‘তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা এ কারণেই ধ্বংস হয়েছে, যখন তাদের মধ্যে কোনো বড় লোক চুরি করত তাকে ছেড়ে দেয়া হতো এবং যখন কোনো দুর্বল লোক চুরি করত, তার ওপর দÐবিধি কার্যকর করা হতো। কসম সেই সত্তার, যার কব্জায় রয়েছে আমার প্রাণ! যদি ফাতেমা (রা.) বিনতে মোহাম্মদ (সা.) ও চুরি করত, আমি তার হাত কেটে দিতাম (আল ইয়াজু বিলাল্লাহ)।’

অতঃপর রসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশে সেই মাখজুমী নারীর হাত কর্তন করা হয়। মুসলিমের একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, হজরত উম্মে সালমা (রা.) ঐ নারী সম্পর্কে কথা বলতে গেলে রসূলুল্লাহ (সা.) উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

অপর একটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, এক ব্যক্তি (ছেলে ধরা) শিশুদের অপরণ করে নিয়ে যেত। তাকে রসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত করা হয়। তিনি তার হাত কর্তন করে দেন। অপর এক খাদ্যচোরকে তাঁর নিকট আনা হলে তিনি তার হাত কর্তন করলেন না। অর্থাৎ ছেলে ধরার শাস্তি, হাত কর্তন এবং খাদ্য চোরের শাস্তি তা নয়।



 

Show all comments
  • Tufail Ahmed ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:১৮ এএম says : 0
    এগুলো যদি প~শাসনের নজর কাড়তে পারতো?
    Total Reply(0) Reply
  • তোফাজ্জল হোসেন ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:৪৮ এএম says : 0
    সব চুরির ক্ষেত্রে হাত কাটার বিধান প্রযোজ্য নয় : সব চুরির ক্ষেত্রে ইসলামে হাত কাটার শাস্তি প্রযোজ্য নয়। অন্যের মাল হেফাজতকৃত ও সংরক্ষিত স্থান থেকে বিনা অনুমতিতে গোপনে নিয়ে যাওয়াকে ইসলামের পরিভাষায় চুরি বলা হয়। তাই শর্তের বেড়াজালে অনেক ক্ষেত্রেই চুরির 'হদ' জারি হয় না।
    Total Reply(0) Reply
  • তোফাজ্জল হোসেন ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:৪৮ এএম says : 0
    শরীয়াতের পরিভাষায়, কোনো বালিগ ও সুস্থ বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তি কর্তৃক অপরের মালিকানাধীন কিংবা দখলভুক্ত নিসাব পরিমাণ কিংবা তার সমমূল্যের সম্পদ সংরক্ষিত স্থান থেকে গোপনে করায়ত্ত করে, তবে তাকে চুরি বলে। -
    Total Reply(0) Reply
  • জোহেব শাহরিয়ার ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:৪৮ এএম says : 0
    সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে চুরি একটি মারাত্মক ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী নৈতিক অবক্ষয়। যা ফৌজদারী অপরাধ। চুরি অন্যায় পথে সম্পদ অর্জনের যে পথ প্রশস্ত করে ইসলাম তাকে হারাম ঘোষণা করেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • সজল মোল্লা ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:৪৯ এএম says : 0
    কোনো মালের ওপর চুরির অভিযোগ প্রমাণ করতে হলে মাল সম্পর্কিত নিম্নোক্ত শর্ত পূরণ হওয়া আবশ্যক। যেমন- ১. চুরিকৃত বস্তু প্রকৃত মাল হওয়া। ২. চুরিকৃত বস্তুর আর্থিক মূল্য থাকা। ৩. চুরিকৃত মাল তুচ্ছ বস্তু না হওয়া। ৪. চুকিৃত বস্তু সংরক্ষণযোগ্য হওয়া। ৫. চুরিকৃত বস্তু সাধারণভাবে সকলের জন্য বৈধ না হওয়া। ৬. চুরিকৃত মাল অপরের দখলভুক্ত হওয়া। ৭. চুরিকৃত মাল নিরাপদ সংরক্ষিত স্থান থেকে করায়ত্ত করা। ৮. করায়ত্বকৃত মাল চোর কর্তৃক পুরোপুরি নিজের দখলভুক্ত হওয়া। ৯. করায়ত্ত্বকৃত মাল চুরির নিসাব পরিমাণ মূল্যের হওয়া। ১০. মাল স্থানান্তর যোগ্য হওয়া। - See more at: http://www.sylhetbarta24.com/news/details/Relagious/27047#sthash.82kOP3JG.dpuf
    Total Reply(0) Reply
  • সজল মোল্লা ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:৫০ এএম says : 0
    পুরুষ চোর ও নারী চোর উভয়ের হাত কেটে দাও। এটা তারা যা উপার্জন করেছে তার প্রতিফল এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে দৃষ্টান্ত। আর আল্লাহ তা‘আলা মহাপরাক্রমশালী ও বিজ্ঞানী।
    Total Reply(0) Reply
  • তোফাজ্জল হোসেন ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:৫০ এএম says : 0
    চুরি করা অত্যন্ত জঘন্য কাজ। এটি একদিকে বদভ্যাস অন্যদিকে হাক্বুল ইবাদকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। চুরি হওয়া মালের মালিকের অপরিমেয় ক্ষতি হয়। সমাজ থেকে এটি বন্ধ করতে হলে সামাজিকভাবে চোরের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করতে হবে। চুরির পেশার সাথে সংশ্লিষ্টদের বয়কট করতে হবে। তাহলে এটি প্রতিকার করা সম্ভব।
    Total Reply(0) Reply
  • হাফেজ মোহাম্মদ মাহদী হাছান ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:৫০ এএম says : 0
    যারা চুরি করে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করে তাদের শ্রেণীবিন্যাস করলে দুই শ্রেণীর লোক পাওয়া যায়। একটি শ্রেণী হয় বেকার নতুবা অভাবী। যে কারণে সে নিরূপায় হয়ে চৌর্যবৃত্তিতে আত্মনিয়োগ করেছে। অপর শ্রেণীটি অভাবী নয় বরং স্বভাবের কারণ কিংবা লোভাতুর হয়ে চুরি করে। দ্বিতীয় শ্রেণীকে চুরির যথার্থ শাস্তি দিয়ে এবং প্রথম শ্রেণীকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে সমাজ থেকে বহু চুরির অপরাধ কমানো সম্ভব হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Nannu chowhan ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৭:০১ এএম says : 0
    Maash Allah, eai hadista polei bujha jai,islami jibon bichar bebosta koto shundor bastob...
    Total Reply(0) Reply
  • Jack Ali ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:৩৭ এএম says : 0
    Our government and their close friends are stealing our hard earned money and sending to other country-- All of them-- their both hand should be cut.
    Total Reply(0) Reply
  • Asad ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:৩৭ পিএম says : 0
    উকতো আইন ঢালু করলে। মুনতির এমপি এবং প্রশাসনের কারো হাত থাকবে না
    Total Reply(0) Reply
  • Asad ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:৩৮ পিএম says : 0
    উকতো আইন ঢালু করলে। মুনতিরির এমপি এবং প্রশাসনের কারো হাত থাকবে না
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মামলা


আরও
আরও পড়ুন