Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্বল বিতরণ ও সরবরাহ ব্যবস্থায় দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এখনো যথেষ্ঠ নাজুক

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৩২ পিএম

বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ ও সরবারহ ব্যবস্থা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নতি না ঘটায় প্রায় পৌনে ৩ লাখ গ্রাহকের দূর্ভোগের কোন সীমা নেই। এখনো এ অঞ্চলের শিল্প ও ব্যাবসা-বানিজ্য সহ আবাসিক গ্রাহকদের উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে পারেনি পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরন কোম্পানী-ওজোপাডিকো।
অথচ উন্নত সেবা নিশ্চিত করা সহ চুরি ও দূর্নীতি বন্ধের অঙ্গিকার নিয়েই ২০০৫ সালে পিডিবি’র অধিভ’ক্ত কোম্পনী হিসেবে ‘ওজোপাডিকো’ যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু ‘সিষ্টম লস’এর নামে বিদ্যুৎ চুরি বাহুলাংশে কমিয়ে আনা গেলেও মাঠ পর্যায়ের বেশীরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে আন্তরিক ও মনযোগী করতে পারেনি ওজোপাডিকো। এমনকি কোম্পানীটির শীর্ষস্থানীয় কোন কোন কর্মকর্তাও নানা অজুহাতে দিনের পর দিন ঢাকায় অবস্থান করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব কর্মকর্তা কখনোই গ্রাহকদের অভিযোগ দুরের কথা, তাদের কাছে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পৌছার বিষয়েও কোন খোজ খবর রাখার সময় পান না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এরই রেশ ধরে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলেও পিডিবি’র কোম্পানীটির গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহ এখনো নিশ্চিত হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ গত এক দশকে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চচলেও ওজোডিকো’র বিদ্যুতের দাম বেড়েছে দ্বিগুনেরও বেশী। কিন্তু সেবার মান সেই তলানীতেই। খোদ বরিশাল মহানগরীতে ১৫ কিলোমিটার বেগে হাওয়া বইলেই বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নগরবাশী এক্ষেত্রে নিজেদেরকে পুরনো দিনের পাঠশালার ছাত্র বলেই মনে করেন। এখন থেকে কয়েক দশক আগে যেমন আকাশে মেঘ জমলে গ্রামের পাঠশালাগুলো ছুটি দিতে হত, তেমনি এখনো মেঘের গুরু গর্জন শুরু হলে বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চরেলল বেশীরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ হয়ে যায় ।

নগরীর রূপাতলী ১৩২/৩৩ কেভী গ্রীড সাব-স্টেশন থেকে ৪টি ৩৩/১১ কেভী সাব-স্টেশনের মাধ্যমে বরিশাল মহানগরীর প্রায় ২৫টি ১১/.০৪ ফিডারের লক্ষাধীক গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ পৌছে দিচ্ছে দুটি বিতরন বিভাগ। কিন্তু ৩০ বছরের পুরনো ১১ কেভী ও .০৪ কেভী সরবারহ ও বিতরন লাইন এর আনুসাঙ্গিক বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সহ ৩৩ কেভী লাইনগুলো এখন যথেষ্ঠ নাজুক। উপরন্তু অনেক গ্রাহকই অনুমোদিত লোড অপেক্ষা বেশী বিদ্যুৎ ব্যবহার করায় ট্রান্সফর্মার ও লাইনের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। ফলে ঘন ঘন ট্রান্সফর্মার বিকল হচ্ছে। তবে বেশীরভাগ ফিডারের এইচটি ও এলটি লাইন সহ ট্রান্সফর্মারগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষকন সহ রক্ষনাবেক্ষনের অভাবেও সরবারহ ও বিতরন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। নগরীর মেডিকেল ফিডার সহ একাধীক ফিডার ওভার লেডেড হয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

একই অবস্থা পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী জেলা সদরেও। সর্বত্রই নাজুক বিতরন ও সরবারহ ব্যাবস্থা ওজোপাডিকো’র গ্রাহকদের দূর্ভোগের মাত্রা বৃদ্ধি করে চলেছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে ব্যাবসা-বানিজ্য। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিল্প উৎপাদনও।

পরিস্থিতি উত্তরনে সরকারী অর্থায়নে পশ্চিমজোনের ২১টি জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে ৩টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ওজোপাডিকো। তবে কোন প্রকল্পের কাজই সময়মত শেষ হচ্ছে না। ফলে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে তা হয়ত পূণর্বাশনের সময় হয়ে যেতে পারে বলেও মনে করছেন ওয়াকিবাহাল মহল। কতৃপক্ষ অবশ্য সম্ভব দ্রুততম সময়ে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহনের কথা জানিয়েছেন।

এসব বিষয়ে ওজোপাডিকো’র বরিশাল সার্কেলের ডিজিএম-এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করার ব্যাপারে কোম্পানী সবসময়ই সজাগ রয়েছে। আগামী শীতে সব ফিডারগুলো পরিপূর্ণভাবে রক্ষনাবেক্ষনের পরিকল্পনা গ্রহন করা হচ্ছে। পাশাপাশি বরিশাল, খুলনা ও গোপালগঞ্জ সদরের সব ৩৩ কেভী ও ১১ কেভী লাইন ভ’গর্ভস্থ ক্যাবলে স্থানন্তরের প্রকল্প গ্রহন করা হচ্ছে। আগামী বছরের শেষ নাগাদ এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ