Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাসূল (সা.)-এর অবমাননা ব্যক্তি-সভ্যতাকে ধ্বংস করে

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা আল কাউসারে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আপনার নিন্দাবাদকারীরা ধ্বংস হবে।’ এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ব্যক্তি আবু জাহেলকে উদ্দেশ করে বলেছেন, সে হবে নির্বংশ।

এটি মূলত আল্লাহর প্রেরীত পুরুষ মহামান্য পয়গাম্বর এর শানে বেয়াদবি ও বিষদগারের প্রাকৃতিক শাস্তি। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমরা আপনার স্মরণ ও আলোচনাকে সমুন্নত করেছি।’ (সূরা ইনশিরাহ : আয়াত ৪)। ইতিহাস সাক্ষী যারা আল্লাহর নবীকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করেছেন, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাদের স্বরণ ও আলোচনাকেও যুগে যুগে সমুন্নত রেখেছেন। যেমন, সম্মানিত সাহাবীগণ মুসলিম উম্মাহর জীবনে প্রাতঃস্বরণীয় হয়ে আছেন। এছাড়াও যুগে যুগে নবী প্রেমিক মনীষীগণ মানবজাতির ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। অপরদিকে রাসূল (সা.)-এর সাথে শত্রুতা পোষণ ও বিষদগারকারীরা ইতিহাসে অভিশপ্ত। আল্লাহর হুকুমে নবী করিম (সা.)-এর শিশুপুত্র ওফাতপ্রাপ্ত হলে মক্কার মুশরিকরা বলেছিল, মোহাম্মাদ (সা.) নির্বংশ হয়ে গেছেন। (নাউজুবিল্লাহ)। মূলত এটি ছিল আল্লাহ তায়ালার ফায়সালা। কোরআন কারীমে তিনি বলেছেন, ‘মোহাম্মাদ (সা.) তোমাদের মধ্য থেকে কোনো পুরুষের পিতা নন।’ (সূরা আহযাব : আয়াত ৪০)।

এটি আল্লাহ তায়ালার পূর্ব পরিকল্পিত একটি হিকমত। তিনি নবী করিম (সা.)-এর কোনো পুত্র সন্তানকে তার উত্তরাধিকারী হিসাবে দুনিয়াতে স্থাপন করেননি। কিন্তু হযরত আলী রা. ও হযরত ফাতিমা রা.-এর মাধ্যমে দুনিয়াতে নবী করিম (সা.)-এর বংশধারা সুরক্ষিত রেখেছেন। এটি তার বংশধারা। তবে, তার শিক্ষা আদর্শিকধারা পৃথিবীতে এতই সমুন্নত যার কোনো তুলনা অন্য কোনো ধর্ম বা মতাদর্শে নেই।

আজ নবী করিম (সা.)-এর নাম আজান, নামাজ ও প্রতিটি ইবাদতে যথাস্থানে সসম্মানে উচ্চারিত হয়। তার উল্লেখ আলোচনা ও তার ওপর দুরুদ পড়া ছাড়া ইসলামের কোনো ইবাদত অনুষ্ঠানই পরিপূর্ণ হয় না। আর নবীবংশ কিংবা সাহাবীগণের সাথে সম্পৃক্ত আদর্শিকধারা বিশ্ব মানবতার মধ্যে একটি সোনালী ঝর্ণাধারার মতো প্রবাহিত। পৃথিবীর কোটি মুসলমান নবী রাসূল ও সাহাবীগণের নামে নামকরণ করে। বংশ লতিকা কোনো সাহাবীর সাথে মিলিত হলে গৌরববোধ করে।

আব্বাসী, আলভী, হাসানী, হোসাইনী, সিদ্দিকী, ফারুকী, উসমানী প্রকৃত অর্থে হতে পারলে মানবকুলে তারা আলাদা সম্মান লাভ করেন। কিন্তু সারা দুনিয়া চষে ফিরলেও কোনো মানুষ এ কথা স্বীকার করতে রাজি হবে না যে, সে আবু জেহেলের বংশধর। এখানেই আল্লাহ তায়ালা মক্কার কাফের মুশরেকদের কথার জবাব দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, নবী শত্রুরা বলে যে, তিনি নির্বংশ। আর আমি আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যারা নবীর শত্রু, যারা তাকে নিয়ে বিষদগার করে তারাই হবে নির্বংশ। ‘ইন্ন্ াশা-নিআকা হুয়াল আবতার’ এর এটিই অর্থ।

অতীতে নবী করিম (সা.)-এর প্রতি অসম্মান প্রদর্শনের ফলে বহু শক্তি সভ্যতা ও রাজত্ব শেষ হয়ে গেছে। এরমধ্যে পারস্য সম্রাটের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আধুনিক যুগেও আদর্শিকভাবে পরাজিত কিছু শক্তি সভ্যতার সকল নিয়ম অমান্য করে মত প্রকাশের স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে, ইসলামের নবীকে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ করে। কার্টূন আঁকে। ব্যাঙ্গচিত্র প্রকাশ করে। হযরতকে নিয়ে বাজে মন্তব্য ও বিষদগার করে। এরা কোনো মূলধারার ব্যক্তি বা গোষ্ঠি নয়। কারণ, অন্যান্য ধর্মের মনীষীরা বিজ্ঞানী ও দার্শনিকরা নবী করিম (সা.) সম্পর্কে এত সুখ্যাতি ও উন্নত মন্তব্য করেছেন, যা কোনো অংশেই মুসলিম মনীষীদের চেয়ে কম হবে না। বিশ্ব সাহিত্য মহানবী (সা.) এর প্রশংসায় ভরা।

পশ্চিমে এসব প্রশংসা বাণী বড় বড় গ্রন্থে লিপিবদ্ধ। মাইকেল এইচ হার্ট তার দি হান্ড্রেড গ্রন্থে ইতিহাসের সেরা ১০০ মনীষীর মধ্যে প্রথম নামটি লিখেছেন হযরত মোহাম্মাদ (সা.) এর। এখানে ইসলামের জনপ্রিয়তা দিন দিন এর অগ্রসরতা দেখে ইর্ষাকাতর কোনো অসুস্থ মানসিকতার ব্যক্তি তাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য ও ব্যাঙ্গ করতেই পারে। তবে, এর দায় এই ব্যক্তি, গোষ্ঠি কিংবা এর সমর্থক রাষ্ট্র ও সভ্যতাকে নিতে হবে। দিনে দিনে এসব মানবতাবিরোধী ও সভ্যতা বিদ্বেষী মানুষ প্রাকৃতিকভাবেই অভিশপ্ত ও বিলুপ্ত হতে বাধ্য। তাদের দেশ ধীরে ধীরে জনশূন্য হবে, অবক্ষয় কবলিত হয়ে তারা নির্বংশ হবে। এই সভ্যতা ধ্বংস হয়ে নতুন প্রজন্ম নতুন বিশ্বাস ও চেতনা নিয়ে তাদের স্থলাভিষিক্ত হবে। আল্লাহর নবীর সাথে বেয়াদবিপূর্ণ আচরণের এটাই শাস্তি।



 

Show all comments
  • Jane Alam ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:১৬ এএম says : 1
    মহানবী (সা:) এর অবমাননা সকল ধর্মের মূলে কুঠারাঘাতের শামিল
    Total Reply(0) Reply
  • মুহাম্মদ ওমর ফয়সল ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:১৮ এএম says : 1
    এধরনের নিকৃষ্টমনাদের কটূক্তির জন্য দেশীয় আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান রাখা সময়ের অনিবার্য দাবী। তা না হলে ধর্মীয় মূল্যবোধ উঠে যাবে, নীতিজ্ঞান শূণ্য হয়ে মানুষ আবার আদিম বর্বরতায় ফিরে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মাহমুদ ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:১৯ এএম says : 1
    লিখনী, বক্তব্য, আলোচনা, খুতবাহ, জনসংযোগ, মিডিয়াসহ সর্বস্তরে শরীয়াহসম্মত বিভিন্ন উপায়ে প্রতিবাদ করার মাধ্যমে এ ধরণের মহা অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ঈমানী দায়িত্ব পালন করার তাওফীক দিন। আমীন!
    Total Reply(0) Reply
  • রুহান ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:১৯ এএম says : 1
    এমতাবস্থায় আমাদের একেবারে বসে থাকার সুযোগ নেই। প্রিয় নবীর উম্মাত হিসেবে প্রত্যেককে তার নিজ নিজ জায়গা থেকে সাধ্য অনুযায়ী ভূমিকা পালন করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • তুষার ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:২১ এএম says : 1
    আল্লামা খাত্তাবি (রহ.) বলেন, নবী (সা.)-এর অবমাননাকারীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই, এ ব্যাপারে কেউ দ্বিমত করেছেন বলে আমার জানা নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • জসিম ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:২১ এএম says : 1
    কাজি আয়াজ (রহ.) বলেন, গোটা উম্মতের ঐকমত্যে সিদ্ধান্ত হলো, কোনো ব্যক্তি যদি নবীর শানে বেয়াদবি করে, ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে, গালি দেয় তাকে অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • পারভেজ ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৩:২২ এএম says : 1
    নবী করিম (সা.)-এর সমালোচনাকারী, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপকারী, ইসলাম ধর্ম ত্যাগকারী সাধারণ মুরতাদের মতো নয়, যে ধর্ম ত্যাগ করল সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হলো। অন্য কারো জন্য ক্ষতিকারক নয়। এ কারণে সে তাওবা করলে তা গ্রহণযোগ্য ও সাজা মাফ হওয়ার অবকাশ রয়েছে। তবে যে ব্যক্তি নবী (সা.)-এর শানে বেয়াদবি করবে, সমালোচনা করবে, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করবে, সে সাধারণ অপরাধী নয়, সে তো বিশ্বমানবতার শান্তির দূত রাহমাতুললিল আলামিনের সঙ্গে বেয়াদবি করেছে, যা গোটা মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধের শামিল। তাই তার অপরাধ ক্ষমাযোগ্য নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • নাজিম ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১০:১৭ এএম says : 1
    এ বিষয়ে লেখার জন্য লেখক উবায়দুর রহমান খান নদভী সাহেবকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • Malek ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:৪৮ এএম says : 1
    যে ব্যক্তি নবী (সা.)-এর শানে বেয়াদবি করবে, সমালোচনা করবে, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করবে, সে সাধারণ অপরাধী নয়, সে তো বিশ্বমানবতার শান্তির দূত রাহমাতুললিল আলামিনের সঙ্গে বেয়াদবি করেছে, যা গোটা মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধের শামিল। তাই তার অপরাধ ক্ষমাযোগ্য নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • সাদ ১৪ জুন, ২০২১, ১২:২২ পিএম says : 0
    তাহলে কী ক্ষমার আর সুযোগ নেই। আর কীভাবে বোঝব কোনটা বেয়াদবি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন