বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মানুষের বিপদাপদ, দুঃখ-কষ্ট, দারিদ্র্য ও অনাহারে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়া তুলনামূলকভাবে ভালো থাকা মানুষের অপরিহার্য কর্তব্য। মানুষ যে মানুষ, এটা তারই প্রমাণ বহন করে।
মানুষ যদি মানুষের জন্য না হতো, তাহলে মানবসভ্যতার এতটা বিকাশ ও উন্নয়ন কখনোই ঘটতে পারতো না। মানুষের টিকে থাকার একটা বড় কারণ পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি, সহায়তার মনোভাব এবং সংঘবদ্ধতা। বিশ্বব্যাপী ভয়ঙ্কর মহামারি করোনা গোটা মানবমন্ডলীকে আজ চরম বিপর্যয়ের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। প্রাণঘাতী কোনো মহামারির এমন বিশ্বব্যাপী বিস্তার অতীতে আর দেখা যায়নি। অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশও এই মহামারিতে আক্রান্ত। করোনার কারণে মানুষের জীবনযাত্রা, অর্থনীতি, উন্নয়ন কার্যক্রমসহ সব কিছুই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বহুমানুষ কর্ম হারিয়েছে, অভাবে পড়েছে এবং দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে গেছে।
এরমধ্যেই ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হেনেছে এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ডুবেছে প্রায় সমগ্র দেশ। এতেও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মানুষ। তাদের বিপুল সংখ্যক সহায়-সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। শুধুমাত্র বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০ লাখের অধিক মানুষ। প্রাথমিক হিসাবে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার। ফসলের ক্ষতি হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার। এখনো অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। বাঁধে, রাস্তায় আশ্রিতদের অনেকেই ঘরে ফিরতে পারেনি।
এমতাবস্থায়, সকল দুর্গত মানুষের জন্য খাদ্য, পানি, অন্যান্য প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী ও ওষুধপত্র দিয়ে সহায়তা করা জরুরি। সরকার সাধ্যমত ত্রাণ দিচ্ছে। তাতে প্রয়োজন পূরণ হচ্ছে না। সিপিডি’র মতে, মহামারি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের নগণ্য সংখ্যকই সাহায্য পেয়েছে।
এই অসহায়, নিরাশ্রয়, দরিদ্র ও অনাহারক্লিষ্ট মানুষের পাশে দাঁড়ানো সামর্থ্যবান সকল মানুষের একান্ত মানবিক কর্তব্য। এটা শুধু মানবিক কর্তব্যই নয়, এ ব্যাপারে ইসলামের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনাও আছে। মহানবী (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে, মহান আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেবে। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার বিপদ দূর করে দেবেন।
মুসলমানদের এটা স্মরণ রাখতে হবে, ধন-সম্পদ, সমাজে উচ্চ অবস্থান ও প্রতিপত্তি সবই আল্লাহর অনুগ্রহ ও দান। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিপুল সম্পদ ও বেশুমার রিজিক দিতে পারেন এবং দিয়েও থাকেন। তাদের সম্পদে আল্লাহপাক দরিদ্র, অভাবগ্রস্ত ও অসহায়দের জন্য হিস্যা রেখে দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, তাদের সম্পদে ভিক্ষুক ও অভাবীদের অধিকার রয়েছে। (সুরা যারিয়াত : ১৯)। আল্লাহ যাদের অতিরিক্ত রিজিক দিয়ে অনুগৃহীত করেছেন, তাদের ওই রিজিক থেকে ব্যয় বা দান-খয়রাত করার কথাও বলেছেন তিনি।
রাসুল (সা.) বলেছেন, কৃতদাস মুক্ত করা, অনাহারীকে খাদ্য দান করা এবং দরিদ্র আত্মীয় ও অনাথ ব্যক্তিদের পাশাপাশি ভূলুণ্ঠিত অভাবীদের সাহায্য করা পূণ্যের কাজ। তিনি আরেকটি হাদিসে বলেছেন: তোমরা পৃথিবীবাসীর ওপর সদয় হও, ঊর্ধ্বলোকের অধিপতি তোমাদের ওপর সদয় হবেন।
আমরা আশাকরি, করোনা, আম্পান ও বন্যায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত, নিঃস্ব, দরিদ্র, সম্পদ ও কর্মহারা হয়ে বিপন্ন দশায় পতিত হয়েছে, তাদের সহায়তায়ও সব রকম প্রয়োজন পূরণে সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।