Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাদিসের আলোকে হাঁচি কাশি ও হাই তোলা-২

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

হাই তোলাকে হাদিসে ‘তাছাউব’ বলা হয়েছে এবং এটি শয়তানের পক্ষ হতে হয়ে থাকে। শয়তান তাতে খুশি হয়ে হাসে। শয়তানের এ হাসির রহস্য কী তা অনুধাবন করার বিষয়। বলা হয়ে থাকে, হাই তোলার কারণ হচ্ছে মস্তিষ্ক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, যার ফলে অবসাদ দেখা দেয় এবং কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়, অলসতা দেখা দেয়, আল্লাহকে স্মরণ করা থেকে বিমুখ ভাব তৈরি হয়। আর এটাই শয়তান কামনা করে এবং সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে হাসতে থাকে। তাছাড়া হাই তোলার সময় মুখ যখন খুলে যায়, এ সুযোগে শয়তান মুখে ঢুকে পড়ে, যা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

এবার হাঁচি ও হাই তোলা সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস দেখা যাক: হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের মধ্যে কেউ হাই তোলে, হাতদ্বারা মুখ বন্ধ রাখবে। কেননা, মুখে শয়তান প্রবেশ করে।’ (মুসলিম)।

মুখের ভেতর শয়তান প্রবেশ করতে পারলে পেটের অভ্যন্তর পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া তার পক্ষে খুবই সহজ ব্যাপার। পেটের ভিতরে গিয়ে নানা প্রকারের উৎপাত করে সে ব্যক্তিকে আল্লাহর স্মরণ হতে বিরত রাখার কাজে আত্মনিয়োগ করে।

হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট দুই ব্যক্তি হাঁচি দেয়। তিনি এক ব্যক্তিকে জবাব দিলেন এবং অপর ব্যক্তির জবাব দিলেন না। সে ব্যক্তি বলল, ‘আপনি তো তার জবাব দিলেন এবং আমার জবাব দিলেন না।’তিনি বললেন, সে ব্যক্তি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলেছে এবং তুমি বলনি।’ (বোখারি ও মুসলিম)

হজরত আবু মূসা (রা.) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘তোমদের মধ্যে কারো হাঁচি আসে এবং যদি সে আলহামদুলিল্লাহ বলে তাকে জবাব দেবে, আর যদি সে আলহামদুলিল্লাহ না বলে, তাকে জবাব দেবে না।’ (মুসলিম)

হজরত সালমা (রা.) ইবনে আকওয়া বলেন, তিনি রসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট শুনেছেন এবং এক ব্যক্তি তার নিকট হাঁচি দেয়, তিনি ইয়ারহামুকাল্লাহ বললেন। ঐ ব্যক্তি আবার হাঁচি দেয়, তিনি বললেন, ‘তার জুকাম (কাশ) আছে।’ মুসলিম ও তিরমিজির বর্ণনায় আছে, তিনি তৃতীয়বার বলেছেন, তার জুকাম (কাশি) আছে।

এই হাদিসে দ্বিতীয়-তৃতীয়বার হাঁচি এলে তাকে সর্দি-কাশি তথা রোগ বলা হয়েছে। হাঁচি ও হাই তোলার সময় সাধ্যমতো তা রোধ করার চেষ্টা করতে বলা হয়েছে। কেবল চলমান করোনাভাইরাস নয়, একজন মানুষ যে কোনো সময় হাঁচি দিতে পারে এবং হাই তুলতে পারে। ইসলামের এ ব্যবস্থা সকলের জন্য এবং সব সময়ের জন্য প্রযোজ্য।

মহামারি আকারে এ খোদায়ী পরীক্ষা যুগপৎভাবে সারা বিশে^ ছড়িয়ে পড়ায় মাস্ক পরার প্রয়োজন ও গুরুত্ব বিশেষভাবে দেখা দিলেও মাস্ক ব্যবহারের অপরিহার্যতা ইসলামেরই বাতলানো শিক্ষা। করোনা যখন থাকবে না, তখনো এর ব্যবহারের গুরুত্ব এতটুকু হ্রাস পাবে না।



 

Show all comments
  • মোহাম্মদ মোশাররফ ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:০৪ এএম says : 0
    বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাহ বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২৩)।
    Total Reply(0) Reply
  • জোবায়ের আহমেদ ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:০৪ এএম says : 0
    ইসলামি শরীয়ত মুমিন মুসলমানকে তার জীবনের সর্ব পর্যায়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার নির্দেশ দিয়েছে। মহানবী রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জীবনচরিত পাঠ করলে এমন কিছু সুন্নতের খোঁজ পাওয়া যায়- যা বিভিন্ন ধরনের রোগ-বালাই প্রতিরোধে চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের পরামর্শের অনুকূল। হাদিসগুলো ডেইলি
    Total Reply(0) Reply
  • দর্শন ই ইসলাম ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:০৫ এএম says : 0
    হাঁচি, কাশি ও হাই তোলার শিষ্টাচার রক্ষা করা : হাঁচি, কাশি ও হাই তোলার শিষ্টাচার হলো অন্যদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া, মুখে হাত বা কাপড় দেয়া, হাঁচি দিলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়া এবং হাই তুললে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পড়া। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘হাঁচি এলে মহানবী (সা.) তাঁর মুখে হাত বা কাপড় রাখতেন এবং হাঁচির শব্দ নিচু করতেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৫০২৯)।
    Total Reply(0) Reply
  • জোহেব শাহরিয়ার ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:০৫ এএম says : 0
    হাঁচি-কাশি মানুষের স্বাভাবিক প্রকৃতি। নানা কারণে হাঁচি-কাশির প্রয়োজন পড়তে পারে মানুষের। হাঁচি আটকানোর কোনো উপায় নেই; অবশ্য এটার দরকারও নেই। কারণ হাঁচি দেওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিছু নয়, বরং উপকারী।
    Total Reply(0) Reply
  • বিবেক ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:০৬ এএম says : 0
    হাঁচির মাধ্যমে মানুষের ফুসফুসে জমে থাকা রোগজীবাণু বের হয়ে যায়। মাথার ভেতরে জমে থাকা অপ্রয়োজনীয় শ্লেষ্মা বের হয়ে যায়।
    Total Reply(0) Reply
  • বারেক হোসাইন আপন ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:০৬ এএম says : 0
    চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষ একবার হাঁচি দিলে শরীর থেকে এক লাখ জীবাণু বেরিয়ে যায়। ক্ষতিকর রোগজীবাণু ও সংক্রামক ব্যাধি হাঁচির সঙ্গে বাষ্পাকারে বেরিয়ে যায়। ফলে মাথায় আরামবোধ হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • বাতি ঘর ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:০৬ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদের আমল করার তওফিক দান করুন। আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ মেহেদী হাসান ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৯:২৪ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ। খুবই উপকৃত একটি পোস্ট। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিক ভাবে নিয়ম মেনে চলার তৌফিক দান করুন আমীন।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ আতিকুর রহমান ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:২০ এএম says : 0
    ধন্যবাদ, পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়। আমার মতে বিষয়টি সবার জানা উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ আতিকুর রহমান ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:২১ এএম says : 0
    ধন্যবাদ, পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়। আমার মতে বিষয়টি সবার জানা উচিত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন