Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লাশ চুরি ঠেকাতে স্বজনদের পাহারা

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বজ্রপাতে মৃত কলেজছাত্রের লাশ চুরি ঠেকাতে কবরের পাশে তাবু টাঙিয়ে পাঁচদিন ধরে রাতদিন পাহারা দিচ্ছেন নিহতের স্বজনেরা। কবরের পাশে পলিথিন টানিয়ে নিচে বসা ও শোয়ার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেয়া হয়েছে কাঠের তৈরি চৌকি। গতকাল উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ঘোগারকুটি গ্রামে গেলে কলেজ ছাত্রের কবরের পাশে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
লাশ চুরি ঠেকাতে নিহতের স্বজনেরা এভাবে তিন মাস পাহারা দিবেন বলে জানিয়েছেন নিহত কলেজ ছাত্রের বাবা শহিদুল ইসলাম, মামা মফিজুল হক, মামি কুলসুম বেগম ও স্থানীয় আশরাফুল ও আনছার আলী।
জানা যায়, গত ১ সেপ্টেম্বর সকালে কলেজছাত্র আরিফুল ইসলাম বৃষ্টির কারণে কলার ভেলায় করে নীলকমল নদীতে পলিথিন দিয়ে শ্যালোমেশিন ঢাকতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান। নিহত আরিফুল ইসলাম ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। আরিফুল ইসলাম শিশু বয়স থেকেই নানা বাড়িতে থাকেন এবং নানা বাড়ি থেকেই পড়াশুনা করতেন। নানা বাড়ি থেকে ৩শ’ গজ দূরে মায়ের ক্রয়কৃত জমিতেই তার লাশ দাফন করা হয়।
এদিকে, কবিরাজী শাস্ত্রে ভয়ে বজ্রপাতে মারা যাওয়া ওই কলেজ ছাত্র অবিবাহিত হওয়ায় তার মাথা মূল্যবান। তাই লাশ চুরি ঠেকাতে গত পাঁচদিন ধরে কবর থেকে ১০ গজ দূরে পলিথিন দিয়ে তাঁবু টাঙিয়ে স্বজনেরা পাহারা দিচ্ছেন। নিহত আরিফুল ইসলাম কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কুমোরপুর কদমেরতল গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে।
নিহত আরিফুল ইসলামের মামা মফিজুল হক ও মামি কুলসুম বেগম জানান, ভাগ্নে আরিফুল আমাদের অনেক আদরের ছিল। ছোট্ট থেকে আরিফুলের মা রাহিলা বেগমসহ তার তিন ছেলে মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে দেখাশোনা করেছি। আরিফুলের নানা আজগার আলী জানান, আরিফুল ইসলামের বাবা শহিদুল ইসলাম তার মা রাহিলা বেগমকে ডিভোর্স দেয়। তখন আরিফুল ইসলামসহ তার তিন ভাই-বোন ছিল শিশু। তিন শিশুকে নিয়ে রাহিলা বেগম আমার বাড়িতে থাকেন। অনেক কষ্টে তিন ভাইবোনকে লালন পালন করছি। আরিফুল এসএসসি পাশ করার পর রাহিলা বেগম পাড়ি জমান জর্ডানে। জর্ডান থেকে বড় ছেলে আরিফুল ইসলামের নামে টাকা পাঠাতেন। ভালোভাবে লেখাপড়ার জন্য খোঁজ খবর নিতেন তার মা। বড় স্বপ্ন ছিল আরিফকে নিয়ে। কিন্তু দরিদ্র সংসারের সে আশা লন্ডভন্ড হয়ে গেল। নাতির কবর পাহারা দেয়ার বিষয়ে নানা আজগার আলীর সাথে কথা বলতে চাইলে এ বিষয়ে কোনো কথা না বললেও কবরের পাশে পাহারা চৌকিতে বসে কবরটির দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছেন।
বড়ভিটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খয়বর আলী জানান, বজ্রপাতে কলেজ ছাত্র আরিফুল ইসলাম মারা গেছে কিন্তু রাতদিন কবর পাহারা দিচ্ছেন তা আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তির কঙ্কালে কোনো মূল্যবান জিনিস থাকতে পারে না। এটা কুসংস্কার ও অযৌক্তিক। বজ্রপাতের সাথে নিহত ব্যক্তির কঙ্কালের কোনো সম্পর্ক নেই। বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তির কঙ্কালে মূল্যবান কিছু আছে তা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লাশ-চুরি
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ