পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দীর্ঘস্থায়ী বন্যার ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বৃদ্ধি পাবে। প্রায় দুই মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকায় মাটির নিচের পানির স্তর শুষ্ক মৌসুমে তিন থেকে চার ফুট উপরে থাকবে। এতে গ্রীষ্মকালে সেচ সুবিধা বাড়বে। চলতি বছর সেচ মৌসুমে কৃষকদের কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। পানির স্তর এক ফুট নিচে চলে গেলে কৃষকদের বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়। এবার দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় কোনো কোনো অঞ্চলে পানির স্তর ৩ থেকে ৪ ফুট বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া ভূগর্ভস্থ পানির স্তর উপরে উঠায় আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাব ও ভূমিধস কমবে।
ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের সঞ্চিত পানির মূল উৎস হল ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত জলাশয় (নদী, খাল, বিল, পুকুর ইত্যাদি) থেকে চুঁইয়ে আসা পানি। যে অঞ্চলে পানি সংগৃহীত হয় সেখানকার আশপাশের অঞ্চলের পানিধারী স্তর থেকে পানি প্রবাহিত হয়ে আসে। এছাড়া, বৃষ্টিপাতের পানি, সেচের পানি ভ‚পৃষ্ঠে আসার পর উপরের মাটির স্তরগুলো ভেদ করে ধীরে ধীরে চুঁইয়ে নিচের স্তরে জমা হয়। বৃষ্টিপাত বেশি হলে এবং ভূপৃষ্ঠের উপরে পানি বেশি দিন জমা থাকলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বৃদ্ধি পায়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের জরিপে দেখা গেছে, ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের ৬১ শতাংশ ও ১৯৯৮ সালে ৬৮ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে ছিল এতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৪ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল। এবারের বন্যায় দেশের ৪১ শতাংশ পানিতে প্লাবিত হয়েছে। একই সাথে অন্যান্য বারের চেয়ে এবারে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি। সব মিলিয়ে এবারও শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর তিন চার ফুট উপরে থাকবে।
আন্তর্জাতিক জলবায়ু ও পানি বিশেষজ্ঞ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, দেশে এলাকা ও ঋতুভিত্তিক পানি সমস্যা রয়েছে। এ ছাড়াও বড় শহর, ছোট শহর এবং তৃণমূল ও দুর্গম এলাকার মানুষের পানি সমস্যার মধ্যে নানা ধরনের প্রার্থক্য রয়েছে। এক সময় ভাবা হতো- ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বাড়ালে নিরাপদ পানি পাওয়া যাবে। অথচ এতে ভূগর্ভস্থ পানি দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। নানা সংকট তৈরি হচ্ছে। এবারের বর্ষা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় দেশের অনেক এলাকা এখনো পানির নিচে রয়েছে। এতে ওই সব এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেকটা বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে প্লাবন ভূমি অঞ্চলে মাটির নিচের পানির স্তর অনেক সমৃদ্ধ হবে। এতে আগামী সেচ মৌসুমে কৃষকদের অনেক সাশ্রয় হবে। তবে আমাদেরকে এখন ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে উপরিভাগে পানি ধরে রাখার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফোরাম ফর পাবলিক হেলথের তথ্যমতে, দেশের ৪১ জেলার ১৯২ উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। রাজধানী ঢাকায় পানির স্তর ভূপৃষ্ঠ থেকে গড়ে ২১২ ফুট নিচে চলে গেছে। যে কারণে ভবিষ্যতে এখানকার পানিতে সমুদ্রের লোনাপানি চলে আসার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এবারের বন্যার ফলে ঢাকার আশপাশের এলাকা এক মাসেরও বেশি সময় পানিতে তলিয়ে ছিল। এছাড়া ঢাকার চার পাশের যে নদীগুলো রয়েছে সেগুলোর পানিও বন্যার ফলে প্রায় স্বাভাবিক প্রবাহে ফিরে এসেছে। নদী দূষণ কমেছে। এর ফলে ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও শুষ্ক মৌসুমে তিন থেকে চার ফুট উপরে থাকবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার ফলে বিস্তীর্ণ অঞ্চল পানির নিচে ছিল। এখনো অনেক স্থানে পানি রয়েছে। এতে করে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পাবে। সে ক্ষেত্রে মাটির ধরন অনুযায়ী কোথাও কোথাও ৩ থেকে ৪ ফুট বৃদ্ধি পাবে। এখন বর্ষায় পানির স্তর সবখানেই উপরে আছে। শুষ্ক মৌসুসে পানির স্তর কতটুকু থাকে সেটাই প্রকৃত স্তর হিসাবে বিবেচ্য। দীর্ঘস্থায়ী বন্যার যে সব সুফল রয়েছে তার মধ্যে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বৃদ্ধি অন্যতম একটি। এর ফলে সেচ সুবিধা বাড়ে। সেচে কৃষকের সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া বন্যার ফলে জমিতে প্রচুর পলি পড়ে জমি উর্ব্বর হয়। ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বৃদ্ধির ফলে আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাব এবং ভূমিধসও কমে।
এবারের বন্যা দেশের ৩৩ জেলাকে প্লাবিত করেছে। এতে দেশের প্রায় ৪১ শতাংশ দীর্ঘ দুই মাস পানিতে নিমজ্জিত ছিল। এর ফলে ওই সব অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও তিন চার ফুট বৃদ্ধি পাবে। তবে প্লাবন ভূমি এলাকায় খাল-বিল ও পুকুর-নদীতে দীর্ঘদিন পানি ভরপুর থাকবে। এজন্য ওই অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আরও বেশি বৃদ্ধি পাবে। ওই সব অঞ্চলে পানির স্তর পাঁচ থেকে ছয় ফুট উপরে থাকবে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে ১৭ লাখ শ্যালো টিউবওয়েল মাটির নিচ থেকে পানি তুলছে। এগুলো ২২ থেকে ২৪ ফুট মাটির নিচ থেকে পানি তুলতে পারে। কিন্তু এখন অনেক এলাকায় মাটির ২৪ ফুট নিচেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সে সব স্থানের কৃষক আরও পাঁচ ফুট মাটি গর্ত করে শ্যালো টিউবওয়েল বসাচ্ছেন। তার পরও অনেক জায়গায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ অগভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ে। এবার বন্যার পানিতে দীর্ঘদিন নিমজ্জিত থাকার ফলে শুষ্ক মৌসুমে মাটির নিচের পানির স্তর তিন চার ফুট উপরে থাকবে। আর প্লাবন ভূমি বা ভাটি এলাকায় মাটির নিচের পানির স্তর পাঁচ থেকে ছয় ফুট উপরে থাকবে। ওই এলাকায় পানির স্তর ১৮ থেকে ২৪ ফুটের মধ্যে চলে আসবে। ফলে এবার শুষ্ক মৌসুমে শ্যালো টিউবওয়েল সহজেই মাটির নিচ থেকে পানি তুলতে পারবে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের মূলত মধ্যভাগ ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিস্তৃত ৩১ জেলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছরই একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। পানির স্তর এক ফুট নিচে চলে গেলে কৃষকদের বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়। এক ফুট বেশি দেবে গেলে বেশি হর্স পাওয়ারের পাম্প দরকার হয়। এতে জ্বালানি তেল বা বিদ্যুৎ বেশি দরকার হয়। এবার দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বৃদ্ধির ফলে সেচে কৃষকদের কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।