বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আসমানী মুসিবত সর্বদা আযাবরূপে আসে না। কখনো পরীক্ষার জন্যও আসে। সূরা আ’রাফে (আয়াত ১৬৮) তা উল্লেখিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, আবার কখনো আযাব হিসেবে আসে। সূরা রূমের-৪১ নম্বর আয়াতে ও সূরা শূরার-৩০ নম্বর আয়াতে এটা উল্লেখিত হয়েছে।
এজন্য যেকোনো দুর্যোগ ও বিপদ-আপদকে দ্ব্যর্থহীনভাবে আযাব-গযব বলে আখ্যায়িত করা উচিত নয়। কেননা, তা যেমন আযাব-গযব হতে পারে, তেমনি পরীক্ষাও হতে পারে। কোথাও কোনো বিপদ-আপদ যদি আযাব হিসেবেও আসে তবুও অপরিহার্য নয় যে, এটা শুধু ওইসব লোকের গোনাহর কারণে এসেছে যারা এ বিপদে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত। বরং ভ‚পৃষ্ঠে সংঘটিত সকল গোনাহই এর কার্যকারণ হিসেবে গণ্য।
যে বিপদ আযাব হিসেবে আসে তার সম্পর্কেও আল্লাহ তাআলার নীতি এই যে, তাতে শুধু অপরাধীরাই আক্রান্ত হয় না, সবাই আক্রান্ত হয়। এজন্য আল্লাহ তাআলা সতর্ক করেছেন যে, ওই ফিতনা ও মুুসিবত সম্পর্কে সতর্ক হও, যা এসে গেলে শুধু অপরাধীদের ওপরই আসবে না, সবার ওপর আসবে।
এজন্য গোনাহে লিপ্ত হওয়ার আগে একথা স্মরণ করা উচিত যে, আমি এ গোনাহর মাধ্যমে শুধু আমার নয়, গোটা সৃষ্টি জগতের ক্ষতিসাধন করছি। নেককার মানুষদেরও শুধু নিজের চিন্তা করাই যথেষ্ট নয়, পরিবার-পরিজন ও সমাজের মানুষেরও সংশোধনের চিন্তা করতে হবে। দাওয়াত ও তালীমকে ব্যাপক করতে হবে এবং সাধ্যমতো ‘আমর বিল মা’রূপ’ ও ‘নাহি আনিল মুনকার’ বিষয়ে যত্মবান হতে হবে।
মোটকথা, এটা নিশ্চিত যে, বিপদগ্রস্ত যেসব মানুষ গোনাহ ও অপরাধ থেকে মুক্ত কিংবা শরীয়তের বিধান এখনো তার জন্য কার্যকর হয়নি তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা এ মুসিবতকে রহমত বানিয়ে থাকেন।
একটি বড় মুসিবত যদি কোনো অঞ্চলে আসে তাহলে তা পরোক্ষভাবে আশপাশের গোটা ভূখন্ডকে, বরং কখনো গোটা পৃথিবীকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই মুসিবতের প্রত্যক্ষ আঘাত থেকে প্রাণে বেঁচে একথা ভাবতে থাকা যে, ‘বেঁচে গেলাম’, এক ধরনের অপরিণত চিন্তা ছাড়া আর কিছু নয়।
যে বিপদাপদ পরীক্ষা হিসেবে আসে সেগুলো শুধু তাদের জন্যই পরীক্ষা নয় যারা এগুলোতে সরাসরি আক্রান্ত হয়েছে; বরং এটা সবার জন্য, গোটা পৃথিবীর সকলের জন্য পরীক্ষা। পাকিস্তানের ভূমিকম্প শুধু পাকিস্তানীদের জন্য পরীক্ষা নয়। তদ্রুপ বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড়ও শুধু বাংলাদেশীদের জন্য পরীক্ষা নয়; বরং গোটা পৃথিবীর সবার জন্যই পরীক্ষা।
আল্লাহ তাআলা পরীক্ষা করছেন- কে সবর করে আর কে ইলাহী ফয়সালার সমালোচনা করে। কে মুসিবত দেখে সজাগ-সতর্ক হয় এবং তওবা করে নিজেকে সংশোধন করে আর কে পূর্বের মতোই উদাসীন নিদ্রায় বিভোর থাকে। কে সামর্থ্য অনুযায়ী বিপদগ্রস্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসে আর কে নিজ স্বার্থ-চিন্তাতেই ডুবে থাকে।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় এই যে, ‘সবর’ ও ‘তাফবীয’ অর্থাৎ নিবেদিত চিত্তে ধৈর্যধারণ এবং ‘রিযা বিল কাযা’ অর্থাৎ আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা। সকল রকম গোনাহ থেকে তওবা করা এবং অনতিবিলম্বে নিজের সংশোধনে আত্মনিয়োগ করা। আর অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার করা। সম্ভাব্য সকল উপায়ে মুসীবতগ্রস্তদের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসা। যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব তা-ই নিবেদন করা। একথা চিন্তা করে পিছিয়ে থাকা উচিত নয় যে, আমার সামান্য অংশগ্রহণে এত মানুষের কী সাহায্য হবে; বরং বিপদগ্রস্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসা নবী-সুন্নত পালনের এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
বাহ্যিক মুসিবতের সময় কর্তব্য পালনের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ মুসিবত যা সর্বদা ঈমান-আমলকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে সে বিষয়েও কর্তব্য পালনে সচেতন হওয়া কর্তব্য। এ উদ্দেশ্যে দ্বীনী তা’লীম ও দ্বীনী দাওয়াতকে ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর করার লক্ষ্যে সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করাও কর্তব্য।
সবশেষে যবানের হিফাযতের বিষয়ে সচেতন থাকা কর্তব্য। না আল্লাহর ফয়সালা সম্পর্কে আপত্তি ও অসন্তুষ্টি প্রকাশ আর না অন্য কারো গীবত-শেকায়েত। শুধু নিজের গীবত ও নিজের শেকায়েত। আর নিজের ও পরিবার-পরিজনের সংশোধনের লক্ষ্যে উপযুক্ত প্রয়াস গ্রহণ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।