Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আসমানী মুসিবতে করণীয়

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

আসমানী মুসিবত সর্বদা আযাবরূপে আসে না। কখনো পরীক্ষার জন্যও আসে। সূরা আ’রাফে (আয়াত ১৬৮) তা উল্লেখিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, আবার কখনো আযাব হিসেবে আসে। সূরা রূমের-৪১ নম্বর আয়াতে ও সূরা শূরার-৩০ নম্বর আয়াতে এটা উল্লেখিত হয়েছে।

এজন্য যেকোনো দুর্যোগ ও বিপদ-আপদকে দ্ব্যর্থহীনভাবে আযাব-গযব বলে আখ্যায়িত করা উচিত নয়। কেননা, তা যেমন আযাব-গযব হতে পারে, তেমনি পরীক্ষাও হতে পারে। কোথাও কোনো বিপদ-আপদ যদি আযাব হিসেবেও আসে তবুও অপরিহার্য নয় যে, এটা শুধু ওইসব লোকের গোনাহর কারণে এসেছে যারা এ বিপদে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত। বরং ভ‚পৃষ্ঠে সংঘটিত সকল গোনাহই এর কার্যকারণ হিসেবে গণ্য।

যে বিপদ আযাব হিসেবে আসে তার সম্পর্কেও আল্লাহ তাআলার নীতি এই যে, তাতে শুধু অপরাধীরাই আক্রান্ত হয় না, সবাই আক্রান্ত হয়। এজন্য আল্লাহ তাআলা সতর্ক করেছেন যে, ওই ফিতনা ও মুুসিবত সম্পর্কে সতর্ক হও, যা এসে গেলে শুধু অপরাধীদের ওপরই আসবে না, সবার ওপর আসবে।

এজন্য গোনাহে লিপ্ত হওয়ার আগে একথা স্মরণ করা উচিত যে, আমি এ গোনাহর মাধ্যমে শুধু আমার নয়, গোটা সৃষ্টি জগতের ক্ষতিসাধন করছি। নেককার মানুষদেরও শুধু নিজের চিন্তা করাই যথেষ্ট নয়, পরিবার-পরিজন ও সমাজের মানুষেরও সংশোধনের চিন্তা করতে হবে। দাওয়াত ও তালীমকে ব্যাপক করতে হবে এবং সাধ্যমতো ‘আমর বিল মা’রূপ’ ও ‘নাহি আনিল মুনকার’ বিষয়ে যত্মবান হতে হবে।

মোটকথা, এটা নিশ্চিত যে, বিপদগ্রস্ত যেসব মানুষ গোনাহ ও অপরাধ থেকে মুক্ত কিংবা শরীয়তের বিধান এখনো তার জন্য কার্যকর হয়নি তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা এ মুসিবতকে রহমত বানিয়ে থাকেন।

একটি বড় মুসিবত যদি কোনো অঞ্চলে আসে তাহলে তা পরোক্ষভাবে আশপাশের গোটা ভূখন্ডকে, বরং কখনো গোটা পৃথিবীকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই মুসিবতের প্রত্যক্ষ আঘাত থেকে প্রাণে বেঁচে একথা ভাবতে থাকা যে, ‘বেঁচে গেলাম’, এক ধরনের অপরিণত চিন্তা ছাড়া আর কিছু নয়।

যে বিপদাপদ পরীক্ষা হিসেবে আসে সেগুলো শুধু তাদের জন্যই পরীক্ষা নয় যারা এগুলোতে সরাসরি আক্রান্ত হয়েছে; বরং এটা সবার জন্য, গোটা পৃথিবীর সকলের জন্য পরীক্ষা। পাকিস্তানের ভূমিকম্প শুধু পাকিস্তানীদের জন্য পরীক্ষা নয়। তদ্রুপ বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড়ও শুধু বাংলাদেশীদের জন্য পরীক্ষা নয়; বরং গোটা পৃথিবীর সবার জন্যই পরীক্ষা।

আল্লাহ তাআলা পরীক্ষা করছেন- কে সবর করে আর কে ইলাহী ফয়সালার সমালোচনা করে। কে মুসিবত দেখে সজাগ-সতর্ক হয় এবং তওবা করে নিজেকে সংশোধন করে আর কে পূর্বের মতোই উদাসীন নিদ্রায় বিভোর থাকে। কে সামর্থ্য অনুযায়ী বিপদগ্রস্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসে আর কে নিজ স্বার্থ-চিন্তাতেই ডুবে থাকে।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় এই যে, ‘সবর’ ও ‘তাফবীয’ অর্থাৎ নিবেদিত চিত্তে ধৈর্যধারণ এবং ‘রিযা বিল কাযা’ অর্থাৎ আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা। সকল রকম গোনাহ থেকে তওবা করা এবং অনতিবিলম্বে নিজের সংশোধনে আত্মনিয়োগ করা। আর অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার করা। সম্ভাব্য সকল উপায়ে মুসীবতগ্রস্তদের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসা। যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব তা-ই নিবেদন করা। একথা চিন্তা করে পিছিয়ে থাকা উচিত নয় যে, আমার সামান্য অংশগ্রহণে এত মানুষের কী সাহায্য হবে; বরং বিপদগ্রস্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসা নবী-সুন্নত পালনের এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

বাহ্যিক মুসিবতের সময় কর্তব্য পালনের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ মুসিবত যা সর্বদা ঈমান-আমলকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে সে বিষয়েও কর্তব্য পালনে সচেতন হওয়া কর্তব্য। এ উদ্দেশ্যে দ্বীনী তা’লীম ও দ্বীনী দাওয়াতকে ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর করার লক্ষ্যে সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করাও কর্তব্য।

সবশেষে যবানের হিফাযতের বিষয়ে সচেতন থাকা কর্তব্য। না আল্লাহর ফয়সালা সম্পর্কে আপত্তি ও অসন্তুষ্টি প্রকাশ আর না অন্য কারো গীবত-শেকায়েত। শুধু নিজের গীবত ও নিজের শেকায়েত। আর নিজের ও পরিবার-পরিজনের সংশোধনের লক্ষ্যে উপযুক্ত প্রয়াস গ্রহণ।



 

Show all comments
  • Mirza Pasha ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:২২ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলা মানুষকে পরীক্ষা করার বিষয়ে কুরআনে পাকে উল্লেখ করেন, ‘‌নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা এবং কিছু ধন-সম্পদ-প্রাণ ও ফলের ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করব। আর আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন। যারা তাদের ওপর কোনো বিপদ-আপদ আসে; তখন তারা বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চিতভাবে তার দিকেই ফিরে যাব।' (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৫-১৫৬)
    Total Reply(0) Reply
  • Obaydul Hoque ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:২৩ এএম says : 0
    কখনো কখনো মানুষের ওপর বালা-মুসিবত ও বিপদ-আপদ তাদের পাপ বা অন্যায়ের কারণে এসে থাকে। এটা এ জন্য আসে যে, তারা যেন ভবিষ্যতে পাপ বা অন্যায় করা থেকে সতর্ক হয়ে যায়। সুতরাং বান্দার বিপদ-আপদ এক ধরনের রহমত।
    Total Reply(0) Reply
  • Oliul Kafi ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:২৩ এএম says : 0
    কখনো কখনো মানুষের ঈমানি পরীক্ষাস্বরূপ বালা-মুসিবত এসে থাকে। এতে ধৈর্যধারণে তাদের মর্যাদা বেড়ে যায়। এটাও আল্লাহ তাআলার রহমত।
    Total Reply(0) Reply
  • Yaon Khan ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:২৩ এএম says : 0
    তবে যখনই কোনো মানুষের বিপদ-আপদ আসবে তখনই মনে করতে হবে তা নিজের অন্যয়, ভুল বা পাপের কারণেই এসে থাকে। আর এ বিপদ-আপদের পরিপ্রেক্ষিতে বান্দাকে হতে হবে আল্লাহর প্রতি বিনয়ী। ক্ষমা চাইতে হবে দয়াময় আল্লাহর কাছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Hannan Kabir ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:২৪ এএম says : 0
    বিপদ-মুসিবত নিজের পাপ ও অন্যায়ের কারণে ঘটেছে মনে করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা বিনয়ী হওয়া।
    Total Reply(0) Reply
  • H M Tamim Khan ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:২৪ এএম says : 0
    মুসিবত থেকে আত্মরক্ষায় আল্লাহর কাছে অবনত মস্তকে ক্ষমা চাওয়া। আল্লাহর কাছে বিপদ চেয়ে নেয়া ঠিক নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Hannan Kabir ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:২৪ এএম says : 0
    বিপদ ও মুসিবতে সবর অবলম্বন করা। বেসবরি ও হা হুতাশ করা থেকেও বিরত থাকা।
    Total Reply(0) Reply
  • Kazi Mahamudul Riad ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:২৪ এএম says : 0
    যে কোনো বিপদ-মুসিবতে ‌সালাতুল হাজত' দু'রাকাআত নামাজ আদায় করে নেয়া। নামাজ পড়ে বিপদ আপদ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন