Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

লন্ডভন্ড কুয়াকাটা সৈকত

বরিশাল ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

বঙ্গোপসাগরের অব্যাহত তরঙ্গে বালু ক্ষয়ে লন্ডভন্ড সাগর কন্যা কুয়াকাটা সৈকত। প্রকৃতির অপার দান, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্যের কুয়াকাটা পর্যটকদের কাছে ক্রমেই ভীতিকর হয়ে ওঠছে। ক্রমে বিলুপ্ত হচ্ছে অপার সৌর্ন্দযের লীলাভূমি কুয়াকাটা সৈকতের ১৮ কি.মি. নৈসর্গিক সবুজ বনরাজি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যভূমির সবুজ বন হারিয়ে ইতোমধ্যে ভূতুরে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সৈকতের পূর্ব-পশ্চিম জুড়ে দুই দিকেই শুধু ধ্বংস্তূপের চিহ্ন।
কুয়াকাটা রক্ষায় স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টেকসই কোন উদ্যোগ ছিলনা এতদিন। পানি উন্নয়ন বোর্ড এ পর্যন্ত স্বল্প মেয়াদী যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তার কোনটিই ফলপ্রসূ হয়নি। গত দুই দশকে কুয়াকাটা সৈকতের প্রায় দেড় কিলোমিটার ভূভাগ ও বিভিন্ন স্থাপনা বিলিন হয়ে গেছে সাগরের ঢেউ-এর ছোবলে। ঐতিহ্যবাহী ডাক বাংলো, ফয়েজ মিয়ার নারিকেল বাগান, তালবাগান, শালবাগান, ২টি লেক, প্রাচীরঘেরা এলজিইডির বায়ো গ্যাস প্লান্ট কাম বিশ্রামাগার, জাতীয় উদ্যান, ঝাউবন, গঙ্গামতির লেক, লেম্বুরবনের একাংশ, ঝাউ বাগান সংলগ্ন বন বিভাগের ‘ইকো পার্ক’, শুঁটকিপল্লীর বৃহত্তম অংশসহ অসংখ্য বাড়ি-ঘরও বিলুপ্ত হয়েছে। এমনকি কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব ও পশ্চিম দিকের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানসহ সবুজ বনাঞ্চল ঢেউয়ের তোড়ে বিলিন হয়েছে ইতোমধ্যে।
যে কোন দুর্যোগ ছাড়াও বর্ষাকালীন অমাবস্যা ও পূর্ণিমার ভরা কোটালে ফুসে ওঠা সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ সৈকতে আঘাত হানছে। এবারের ভাদ্রে বড় অমাবশ্যায় ফুসে ওঠা সাগর আরো একবার লন্ডভন্ড করেছে কুয়াকাটা সৈকত এলাকা। সবুজ বনভূমি, আবাসিক হোটেলসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংস স্তূপে পরিনত হয়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে অস্বাভাবিক জোয়ারে পানি বেড়ে ঢেউয়ের তীব্রতায় বালু ক্ষয় হয়ে সৈকতে ব্যাপক ভাঙনের শুরু হয়। প্রচন্ড ঢেউয়ের তোড়ে এখন চরম ঝুঁকিতে রয়েছে কুয়াকাটা সৈকতের পাশে গড়ে ওঠা মসজিদ, বৌদ্ধ মন্দির, সদ্য নির্মিত ট্যুরিজম পার্ক ও আবাসিক হোটেল-মোটেল এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
অবিলম্বে ভাঙন প্রতিরোধ করতে না পারলে অচিরেই সৈকত এলাকার সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসহ কুয়াকাটার প্রধান উপকূলীয় বেড়িবাঁধ এবং দর্শনীয় স্থানগুলো আরো হুমকির মুখে পড়বে। অস্বাভাবিক জোয়ারে সৈকতে থাকা বন বিভাগের কয়েক হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ওপড়ে পড়ছে। এমনকি এবার ভাঙনের তীব্রতা এতো বেশি ছিল যে বালুর নিচে থাকা দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের অপটিক্যাল ফাইবার বের হয়ে হুমকির মুখে পরে।
সরেজমিনে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অব.) জাহিদ ফারুক কুয়াকাটা সৈকত পরিদর্শন করে ভাঙন রোধে নেদারল্যান্ডের প্রযুক্তি ব্যবহার করার কথা জানিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রীর সামনেই ভূক্তভোগী ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন সংগঠন সৈকত রক্ষায় মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে তারা প্রতিমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মন্ত্রীর পরিদর্শনের পরপরই পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইন সার্কেলের একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম শুক্রবার কুয়াকাটা সৈকতের ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ভাঙন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ভাঙন রোধে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে আপাতত ৩ সহশ্রাধিক জিওব্যাগ ফেলার কাজ আগামী সপ্তাহেই শুরু হচ্ছে। কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় একটি স্থায়ী প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনুমোদন পেলে গোটা সৈকত রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুয়াকাটা-সৈকত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ