পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সা¤প্রতিক সময়ে ভারতের সঙ্গে তার নিকটতম প্রতিবেশীদের নানা ইস্যুতেই দূরত্ব তৈরি হচ্ছে, যার কারণ নিয়ে আলোচনাও হচ্ছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সমস্যা তো দীর্ঘদিনের, চীনের সঙ্গেও ভারতের সীমান্ত সমস্যা চলছে। আবার ভারতের সব থেকে কাছের বন্ধু রাষ্ট্রগুলির অন্যতম বলে যে দেশটিকে মনে করা হত, সেই নেপালের সঙ্গেও বিগত কয়েক বছর ধরে সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দিচ্ছে। অথচ ভারত আর নেপাল দুই দেশেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তার পরও কেন দুটি দেশের মধ্যে নানা ইস্যুতে মতান্তর হচ্ছে তা জানতে বিবিসি’র হিন্দি বিভাগের রজনীশ কুমার নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ কুমার গ্যায়ালির এক দীর্ঘ সাক্ষাতকার নিয়েছেন। সেই সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ইনকিলাব পাঠকদের জন্য তৈরি প্রতিবেদন ঃ
মে মাসে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ধারচুলা থেকে চীন সীমান্তে লিপুলেখ পর্যন্ত একটি রাস্তা উদ্বোধন করেন। নেপালের দাবি ছিল, ওই রাস্তা তাদের এলাকার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তার আগে, ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য থেকে লাদাখকে যখন আলাদা করা হল, তারপর ভারত যে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছিল, তাতে লিপুলেখ আর কালাপানি এ দুটি অঞ্চল ভারতের অন্তর্ভুক্ত বলেই দেখানো হয়েছিল। এ বছর, নেপাল তাদের দেশের একটি নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে, যেখানে কালাপানি আর লিপুলেখ তাদের দেশের অংশ বলে দেখায়। তারপরেই দুই বন্ধু রাষ্ট্রের মধ্যে সীমানা নিয়ে বিবাদ আবারও সামনে এসেছে। এ প্রসঙ্গে নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ কুমার গ্যায়ালি বিবিসি হিন্দিকে বলছিলেন, ‘নেপাল আর ভারতের মধ্যে সীমানা নিয়ে যে বিবাদ রয়েছে, তা সমাধান করতেই হবে। যতদিন না এর মীমাংসা হচ্ছে, ততদিন ইস্যুটা ফিরে ফিরে আসবে। সীমান্ত সমস্যার সমাধান না হলে দুই দেশের সম্পর্ক বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারবে না’।
‘ইতিহাসের যেসব অমীমাংসিত সমস্যা উত্তরাধিকার সূত্রে বর্তমান সরকারের ওপরে এসে পড়েছে, সেগুলোর সমাধান করতেই হবে। কিন্তু নেপাল এটা চায় না যে, সীমান্ত সমস্যার কারণে দুই দেশের বাকি সব সম্পর্ক বন্ধ হয়ে যাক। সেগুলোকে সচল রেখেই সীমান্ত সমস্যা মেটাতে হবে, আবার অন্যদিকে লিপুলেখ এবং কালাপানি এ ইস্যুটাও নেপালের সার্বভৌমত্বের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ -বলছিলেন প্রদীপ কুমার গ্যায়ালি। সীমান্ত নিয়ে যখন দু’দেশের মধ্যে মতভেদ চলছে, তার মধ্যেই নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি মন্তব্য করেছিলেন যে, তাকে পদচ্যুত করতে একটা ষড়যন্ত্র চলছে দিল্লিতে আর কাঠমান্ডুর ভারতীয় দূতাবাসে।
নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সত্যিই কি নেপালের প্রধামন্ত্রীকে পদচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করছিল ভারত? প্রদীপ গ্যায়ালির জবাব ছিল, ‘আমার মনে হয় ভারতীয় সংবাদ চ্যানেলগুলোতে ওই সময়ে যে ধরনের খবর প্রচারিত হচ্ছিল, তার দিকেই ইঙ্গিত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ওলি। নেপালের পক্ষে খুবই অপমানজনক খবর দেখানো হচ্ছিল নিয়মিত। কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অথবা সেদেশের সরকারের সামনে যে সঙ্কট চলছিল, তা নিয়ে এ ধরনের খবর কেন দেখানো হবে’!
‘অন্য দেশের সংবাদমাধ্যম বা সেখানকার কথিত বুদ্ধিজীবিরা কি নেপালের বিদেশনীতি তৈরি করে দেবেন? তারা ঠিক করবেন নাকি যে, নেপাল কোন দেশের সঙ্গে কীরকম সম্পর্ক রাখবে? নেপালের বিদেশনীতি কোনও দ্বিতীয় বা তৃতীয় দেশ তৈরি করে দেয় না’, মন্তব্য প্রদীপ কুমার গ্যায়ালির। ভারতীয় গণমাধ্যমের একাংশের বিরুদ্ধে নেপাল-বিরোধী খবর নিয়মিত প্রচার করার জন্য বেশ কয়েকবছর আগে কয়েকটি ভারতীয় চ্যানেল নেপালে নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল।
সেই সময়ে ভারত থেকে নেপালের কোনও পণ্যবাহী ট্রাক যেতে দেয়া হচ্ছিল না - পেট্রোল থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় যেসব পণ্যের জন্য ভারতের ওপরেই তারা নির্ভরশীল, সেগুলোর সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। মি. গ্যায়ালি বলছিলেন, সেটা ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম দফার সরকারের সময়ে। কিন্তু একই সঙ্গে নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায়, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের দুটো দিক আছে। একটা দিকে অবকাঠামো উন্নয়নের মতো খাতগুলোতে যখন দুই দেশের মধ্যে খুব ভাল কাজ হচ্ছে, নেপালের ভ‚মিকম্পের পরেও ভারত খুব সাহায্য করেছিল। আবার পেট্রোলিয়াম পাইপলাইনের ব্যাপারেও ভারতের সহযোগিতা পাচ্ছে নেপাল’।
‘কিন্তু অন্যদিকে বেশ কিছু বিষয়ে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে জটিলতাও আছে - সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত বিবাদ। আর এটাও ভুললে চলবে না মি. মোদির প্রথম দফায় সরকারে থাকার সময়েই কিন্তু অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল নেপালকে, -বলছিলেন প্রদীপ গ্যায়ালি। কিন্তু নেপালের সঙ্গে ভারতের কেন বিবাদ? দুটি দেশেই তো হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ- এ প্রশ্নের জবাবে নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন দুই দেশের সম্পর্কটা খুবই গভীর, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক। কিন্তু সংস্কৃতি আর ধর্ম মেশালে চলবে না, দুটো পৃথক ব্যাপার।
তার কথায়, ‘ধর্মকে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যেমন টেনে আনা উচিত নয়, তেমনই অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ধর্মীয় বিষয় আনা উচিত নয়। ঘটনাচক্রে নেপাল যখন ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান গ্রহণ করে ২০১৫ সালে, তার আগেই ভারত সরকারের প্রতিনিধি হয়ে সেদেশে গিয়েছিলেন ভগত সিং কোশিয়ারি। তিনি নেপালী সংবাদমাধ্যমকে এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, নেপালের মাওবাদী পার্টির নেতা প্রচন্ডর সঙ্গে কথোপকথোনের সময়ে তিনি নাকি উল্লেখ করেছিলেন যে, নেপালকে হিন্দু রাষ্ট্র বানাতে হয়তো তারা চান না, কিন্তু সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটা সরিয়ে দেয়া উচিত। ওই প্রশ্ন যখন মি. গ্যায়ালিকে করা হয়েছিল, তখন তিনি বলেন, তার মনে হয় মি. কোশিয়ারি ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছিলেন সেটা। এর আগে, ২০০৬ সালে বিজেপি নেতা রাজনাথ সিংও বলেছিলেন হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে নেপালের যে পরিচিতি, তা টিকিয়ে রাখাই উচিত। সূত্র : বিবিসি বাংলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।