Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

খেলনা নিয়ে মোদির স্বপ্ন পূরণের সাধ্য নেই ভারতের নির্মাতাদের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:৩৬ পিএম | আপডেট : ৮:২১ পিএম, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রেডিওতে তার ‘মান কি বাত’ অনুষ্ঠানে দেশের খেলনা শিল্পের প্রতি আলোকপাত করার একদিন পরে ৩১ আগষ্ট ছিল ৩ বছর বয়সী তেজাসের জন্মদিন। জন্মদিনের উপহার হিসাবে সে যে সমস্ত খেলনা পেয়েছিল, তার সবগুলোই ছিল চীনে তৈরি।

মোদি খেলনার স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে এবং ৭ লাখ কোটি রুপির বৈশ্বিক খেলনা বাজারে ভারতের অংশীদারিত্ব বাড়ানোর জন্য জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু তেজাসের পাওয়া উপহার ভারতের খেলনা শিল্পের বাস্তবতা প্রতিফলিত করে। ভারতের খেলনা উৎপাদনের পরিমাণ আনুমানিক ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি রুপি যা বিশ্ববাজারের ১ শতাংশেরও কম। এটি ভারতে খেলনার চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশ পূরণ করতে পারে, বাকি অংশ চীনের দখলে। ভারতের বাজার থেকে চীনা খেলনা সরিয়ে স্থানীয় উৎপাদনকারীদের মাধ্যমে ঘরোয়া চাহিদা মেটাতে গেলে বাজারে খেলনার আকাল দেখা যাবে, যেমনটা এখন হচ্ছে।

লকডাউন এবং খেলনাগুলোর উপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ভারতে চীনা খেলনা সরবরাহ কমেছে বলে নির্মাতারা জানিয়েছেন। তবে একই সময়ে, গত তিন থেকে চার মাস ধরে খেলনার চাহিদা বেড়েছে। কারণ, বাচ্চারা ঘরে আটকে আছে এবং আরও খেলনা দাবি করছে। এ বিষয়ে দিল্লির খেলনা প্রস্তুতকারক ও টয় এসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি অজয় আগরওয়াল বলেন, ‘এই সমস্ত কারণগুলোতে খেলনাগুলোর জন্য অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আমরা উৎপাদন বাড়িয়েই পূরণের চেষ্টা করছি। তবে এটি করতে আমাদের আরও সময় লাগবে।’

আগরওয়ালের মতো সংগঠিত নির্মাতারা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র বা আরও শ্রমিক নিযুক্ত করে উৎপাদন বাড়াতে পারে। তবে, ভারতের প্রায় সাড়ে তিন হাজার খেলনা তৈরির প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই অসংগঠিতভাবে ছোট ছোট ইউনিটে কাজ করে। অনেক ক্ষেত্রে কর্মচারী রয়েছেন পাঁচজনেরও কম। হঠাৎ করে উৎপাদন বাড়ানোর মূলধন তাদের কাছে নেই।

চীনের তৈরি বিশেষ করে ইলেকট্রনিক খেলনাগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে গত ৩০ বছরে ভারতের অনেক খেলনা কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আগরওয়াল বলেন, ‘ইলেকট্রনিক খেলনা তৈরিতে আমাদের সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। এর জন্য আমাদের কোরিয়া এবং জাপান থেকে মেশিন আমদানি করা দরকার। কিন্তু ৩৪ শতাংশ আমদানি শুল্ক থাকায় সেগুলআ খুবই ব্যয়বহুল। যদি সরকার শুল্ক হ্রাস করে, আমরা ইলেকট্রনিক খেলনা তৈরি শুরু করতে পারি। এই শিল্পে প্রবৃদ্ধির দুর্দান্ত সুযোগ রয়েছে।’

দক্ষিণ দিল্লির আমার কলোনিতে খেলনার দোকান ‘কিডি ল্যান্ডে’ শেলফের ৭০ শতাংশ জায়গাই চীনা খেলনা এবং ২৫ শতাংশ ডেনমার্কের তৈরি লেগো দখল করে রেখেছে। দোকানের মালিক সঞ্জয় পাহওয়া বলেন, ‘চীনের পাশাপাশি আমরা থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন থেকেও খেলনা আমদানি করি। ভারতীয় খেলনাগুলি ভাল তবে তারা ইলেকট্রনিক খেলনা তৈরি করে না।’

দিল্লিতে অবস্থিত খেলনা ডিজাইনার সুহাসিনী পল, যিনি চীনে বসবাস করেছেন এবং সেখানে অনেক খেলনা কারখানায় গিয়েছিলেন, তিনি বলেন, ‘চীনারা সব ধরণের খেলনা তৈরি করে, সস্তা থেকে বেশি ব্যয়বহুল উচ্চমানের খেলনা। তবে বাজেটের কারণে আমাদের খেলনা আমদানিকারকরা কেবল সস্তা সস্তা খেলনা ভারতে নিয়ে আসেন।’

নির্মাতারা অভিযোগ করেন যে খুচরা বিক্রেতারা ভারতীয় খেলনাগুলোর জন্য পর্যাপ্ত জায়গা দেয় না। শিনসি টয়সের সিইও এবং পরিচালক এবং অল ইন্ডিয়া টয় ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনিষ কুক্রেজা বলেছিলেন, ‘চাইনিজ খেলনা বিক্রি করলে তাদের লাভ বেশি হয়। তাই তারা সেগুলোই মজুদ করতে পছন্দ করে।’ তার মতে, খুচরা বিক্রেতারা যদি ভারতে তৈরির খেলনাগুলোর জন্য ২৫ শতাংশ জায়গা সংরক্ষণ করে রাখে, তবে স্থানীয় উৎপাদন আরও বাড়বে। সূত্র: টিওআই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ