মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সত্ত্বেও অধিৃকত কাশ্মীরে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার নতুন আবাসের সনদ ইস্যু করেছে ভারতের মোদি সরকার। এদের মধ্যে কতজন কাশ্মীরের স্থানীয় আর কতজন বহিরাগত, সেটি স্পষ্ট নয়। তবে, এই সিদ্ধান্ত ওই মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের পরিচয় ও ডেমোগ্রাফিক বা জনতাত্ত্বিক বিন্যাসে পরিবর্তন আনবে।
১৯৪৭ সালের পর প্রথমবারের মতো কাশ্মীরের আবাসন নীতি পরিবর্তন করতে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফিলিস্তিনি অঞ্চলসমূহ জবরদখল করতে ইসরায়েলের প্রয়োগ করা ‘শেল্টার’ কৌশলের মতো, মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারও একই নীতি অনুসরন করতে যাচ্ছে বলে অভিমত সমালোচকদের। সরকার গণহারে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’র তকমা লাগালেও, বহু কাশ্মীরি এখনো অকুতোভয়ে এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন। অন্যদিকে, কেউ কেউ নিজেদের বাঁচাতে মুছে ফেলেছেন টুইটার অ্যাকাউন্ট।
জম্মু কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহর দাবি যে, কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলকে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ করার চেষ্টা করছে বিজেপি। এই কারণেই ডিলিমেটশন কমিশনের আলোচনা থেকে জাতীয় কনফারেন্স সরে গিয়েছে বলে তিনি জানান। স্থানীয় অধিবাসীদের অনেকেই তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণের পুরনো কাগজপত্র জাহির করতে রাজি হচ্ছেন না, তাতে তাদের জীবন কঠিন হয়ে ওঠলেও। কেউ কেউ আবার সেটি করছেন খুব সংগোপনে, যেন প্রতিবেশীদের ঘৃণার শিকার না হতে হয়। ‘নিজের দেশেই আমার নাগরিকত্বের জন্য বহিরাগতদের সঙ্গে আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে, এ এক হাস্যকর ব্যাপার,’ বলেন এক শিক্ষার্থী, যিনিও ঝামেলা এড়াতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মার্চে গৃহীত সেনসাস অনুযায়ী লোকসভা ও বিধানসভার নতুন ম্যাপ তৈরী করার জন্য কমিশন তৈরী করা হয়েছে। কিন্তু মে মাসে সেই সংক্রান্ত আলোচনা থেকে সরে আসে এনসি। আবদুল্লাহ বলেন যে, বিজেপির অভিসন্ধি হল হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ করে দেয়া ভূস্বর্গ। ছেলে ওমর আবদুল্লাহর সঙ্গে হিন্দুস্তান টাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেন এই বর্ষীয়ান নেতা। ওমর আবদুল্লাহর দাবি যে, সারা দেশের সঙ্গে ২০২৬ সালে এখানে ডিলিমিটেশন হওয়ার কথা ছিল। তাহলে এত আগে সেটা হচ্ছে কেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে। ওমর আবদুল্লাহ বলেন যে ৩৭০ ধারা অবলুপ্তি হওয়াকেই যখন তারা মানেন না, তখন এই কমিশনে অংশ নেয়ার প্রশ্নই নেই।
তবে যতদিন জম্মু-কাশ্মীর কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল থাকবে, ন্যাশনাল কনফারেন্স কি ভোটে অংশ নেবে না, সেই প্রশ্নের সরাসরি কোনও জবাব দেয়নি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রসঙ্গত, গত বছর ৫ অগস্ট এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ওমর ও ফারুক, উভয়কেই গ্রেফতার করে পুলিশ। এই বছর মার্চ মাসে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়, যদিও এখনও গৃহবন্দি মেহবুবা মুফতি।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় সংবিধানের যেসব অনুচ্ছেদে কাশ্মীরের আংশিক স্বায়ত্তশাসন এবং নিজস্ব পতাকা ও সংবিধান-সহ অন্যান্য অধিকার ছিল, গত বছরের ৫ আগস্ট মোদি সরকার সেগুলো রদ করে। সেখানে আগে থেকেই থাকা ৫ লাখ সদস্যের নিরাপত্তা বাহিনির সঙ্গে আরও কয়েক হাজার বাড়তি সদস্য নিয়োগ দিয়ে ওই অঞ্চলে দৃশ্যত অবরোধধর্মী কারফিউ পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়। হাজার হাজার নাগরিককে গ্রেপ্তার করা এবং মাসের পর মাস ধরে টেলিকমিউনিকেশন বিচ্ছিন্ন রাখা হয়। জম্বু ও কাশ্মীর রাজ্যকে একত্রিত করে নয়া দিল্লি থেকে সরাসরি কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে আনা হয়; অন্যদিকে লাদাখ হয়ে পড়ে একটি বিচ্ছিন্ন প্রশাসনিক অঞ্চল।
কাশ্মীরের এ রকম পরিস্থিতি করার দাবি দীর্ঘদিন ধরেই তুলছিল মোদির রাজনৈতিক দল বিজেপির কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। এই উদ্যোগ ভারতের ২০ কোটি মুসলমান সংখ্যালঘু ও তাদের পক্ষের ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্যকে কোণঠাসা করে ফেলে। তাদের আশঙ্কা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী একটি হিন্দুত্ববাদী জাতি প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন, যেটি অবশ্য সবসময়ই অস্বীকার করে আসছেন মোদি।
এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাশ্মীর নিয়ে গবেষণাকারী এবং সিরাকাস ইউনিভার্সিটির অ্যানথ্রোপলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোনা ভান এএফপিকে বলেন, ‘আমি দিব্যি দেখতে পাচ্ছি, একটি হিন্দু শেল্টার কলোনিয়াল প্রজেক্ট তৈরি করা হচ্ছে।’
১৯২৭ সালে পাস করা কাশ্মীরের বিশেষ আবাসন নীতিমালা মোদি সরকার পরিবর্তন করেছে। শুধু স্থায়ী অধিবাসীরাই ওই ভূখণ্ডে বসবাস করতে পারবেন, ওখানে সরকারি চাকরি পাবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এবং স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন- এ নিশ্চয়তা দিয়েছিল ওই নীতিমালা। এখন, ভারতের যে কোনো অংশ থেকেই লোকেরা গিয়ে ওই ভূখণ্ডে ওইসব সুবিধা ভোগ করতে পারবেন, এই ব্যবস্থা করেছে মোদি সরকার।
এদের মধ্যে ওই অঞ্চলে ১৫ বছর ধরে বসবাসকারী, যারা সংখ্যায় ২৮ হাজার শরণার্থীর মতো- যারা কি না পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসেছিলেন, এবং সাড়ে ১৭ লাখ পরিযায়ী শ্রমিক, যাদের অধিকাংশই হিন্দু- তারাও রয়েছেন। তাছাড়া, যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সাত বছর ধরে কাশ্মীরে চাকরি করছেন, তারা ও তাদের সন্তানরা, কিংবা যেসব শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষা দিয়েছেন, তারাও এই আবাসন মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন। স্থায়ী আবাসিক অধিকার পেতে হলে এখন স্থানীয়দেরও নতুন ‘স্থায়ী আবাসের সনদে’র জন্য আবেদন করতে হবে। সূত্র: এএফপি, হিন্দুস্তান টাইমস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।