Inqilab Logo

সোমবার ১১ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ কার্তিক ১৪৩১, ০৯ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিয়াদের ভ্রান্ত মতবাদ

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

মুসলিম সমাজে এক শ্রেণির লোক আছে, যারা আশুরা-কারবালাকে একাকার করে ফেলেছে। আশুরার ধর্মীয় ঐতিহ্য মহিমা ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলির সাথে হিজরি ৬১ সালে সংঘটিত কারবালা প্রান্তরে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর মর্মান্তিক শাহাদতের ঘটনাকে এক করে ফেলা হয়েছে। শিয়াদের তাজিয়া-মর্সিয়া এবং শোক সমাবেশও যেন আশুরার অংশ। এবার কিন্তু শিয়াদের এসকল চিরাচরিত মিছিল-সমাবেশ করোনাভাইরাসের কারণে অনুষ্ঠিত হতে পারবে না। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ইরাক সরকারও কারবালার শোকমিছিল সমাবেশের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। সুতরাং দেশে সীমিত আকারে কারবালা দিবস উদযাপিত হতে পারে।

কিন্তু আমাদের আলোচনা ভিন্ন, আশুরার মর্মবাণী বিস্মৃত হয়ে ১০ মুহাররমকে ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়ার সূচনা করার ইতিহাস, কাহিনী স্মরণ করা এবং এখানে আমরা কারবালার প্রচলিত অনুষ্ঠানাদির গোড়াতে প্রবেশ করতে চাই এবং এগুলোর রহস্য কী তাও উদ্ভাবনের চেষ্টা করব।

যুগেযুগে শাসক শ্রেণির মধ্যে এমন কিছু লোকের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থান করে বিভিন্ন উদ্ভট ঘটনার জন্ম দিয়ে গেছেন। ইতিহাসে এ শ্রেণির লোকেরা বিখ্যাত নয়, কুখ্যাত হয়ে রয়েছেন। এখানে আমরা আব্বাসীয় খেলাফত আমলের প্রবল ক্ষমতাশালী এক ব্যক্তির নাম স্মরণ করতে চাই, যিনি ছিলেন আব্বাসীয় খেলাফতের ন্যায় একটি সুন্নী খেলাফত রাষ্ট্রে প্রথম কারবালার মর্সিয়া-ক্রন্দনের জন্মদাতা মোয়েজদ্দৌলা বোওয়াইয়া (বুইয়া)।

আব্বাসীয় খেলাফত আমলে রাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী শাসক বংশ ছিল বার্মাকীরা। খলিফা হারুনুর রশীদের আমলে তাদের পতন ঘটার পর এ খেলাফতে বনি বুইয়া সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং খলিফার নিয়োগ-বিয়োগ তাদের হাতেই চলে যায় এবং তারা বনি বুইয়াদের নিকট হয়ে পড়েন ক্ষমতাহীন। কিছুদিনের মধ্যেই খলিফা ক্ষমতাচ্যুত হন। ইরাকে বনি বুইয়া শাসন ক্ষমতা হিজরি ৩৩৪ সালের ১১ জমাদিউল আউয়াল থেকে হিজরি ৪৪৭ সালের ২২ মুহাররম পর্যন্ত বলবৎ ছিল। তাদের শাসন আমলে সবুজ-শ্যামল এই এলাকা ধ্বংস হয়ে যায়। তারা শিয়া মতাবলম্বী হওয়ার কারণে তীব্র ধর্মীয় বিরোধ ও সুন্নী মুসলমানদের মধ্যে দারুণ ক্ষোভের সঞ্চার হয়। ফলে নানা স্থানে মারাত্মক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও খুনাখুনির ঘটনা সংঘটিত হতে থাকে।

প্রথম শাসক মোয়েজদ্দৌলার আমলে সুন্নী শাসনের স্থলে তিনি শিয়া শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু নানা কারণে সে উদ্যোগ হতে তিনি বিরত থাকেন বলে ইতিহাস হতে জানা যায়। তথাপি তিনি আশুরা দিবসে কিছু কুসংস্কার প্রবর্তন করে ইতিহাসে যে অভিনব দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, তার প্রেতাত্মারা অনেক ক্ষেত্রে আজও তা আকঁড়ে ধরে আছেন, যার উদাহরণ বহুস্থানেই সুস্পষ্ট। প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিকভাবে মোয়েজদ্দৌলার আমলে ইরাক ধ্বংস হওয়ার যেসব কারণ ঐতিহাসিকগণ লিপিবদ্ধ করেছেন, তার একটি হচ্ছে: বাগদাদে সাধারণত আহলে সুন্নাতের বসবাস ছিল, তাঁরা সাহাবায়ে কেরামের প্রতি গভীর ভক্তি-সম্মান প্রদর্শন করতেন। মোয়েজদ্দৌলা আশুরা দিবসে নির্দেশ দিলেন যে, ঐদিন সকল লোককে তাদের দোকানপাট বন্ধ রাখতে হবে এবং ইমাম হোসাইন (রা.) এর শোকে মাতম পালন করতে হবে। নারীরা উলঙ্গ মাথায়নূহা (বিলাপকরা) রত অবস্থায় রাস্তায় বের হয়ে আসবে। মোয়েজদ্দৌলা ১৮ জিলহজকে ‘গাদীরে খুম’ দিবসকে ঈদ উৎসব ঘোষণা করেন। অর্থাৎ এই দিন আনন্দ উৎসব পালন করতে হবে। লোকেরা এইসব কর্মকান্ডকে দ্বীনের পরিপন্থি মনে করায় তাদের দ্বারা জোরপূর্বক এসব কাজ করানো হতে থাকে। ফলে বহু দাঙ্গা-হাঙ্গামা, খুন-খারাবী হয় এবং বহু স্থানে অসন্তোষ বিক্ষোভ দেখা দেয়। এতে মোয়েজদ্দৌলা আরো কঠোর হন এবং হিজরি ৩৫১ সালে সকল মসজিদে সাহাবায়ে কেরামের প্রতি ‘লানত’ সম্বলিত ঘোষণাপত্র টাঙিয়ে দেয়া হয়। শিয়া মতবাদের এ প্রভাবের ফলে আহলে সুন্নাতের বহু লোক সেখান থেকে অন্যত্র হিজরত করে চলে যান।

এখানে শিয়াদের একটি ভ্রান্ত মতবাদের কথা উল্লেখ করতে হয় এবং তা হচ্ছে ‘গাদীরে খুম’ এর সর্ম্পকে ভ্রান্তনীতি। নির্ভরযোগ্য ইতিহাস অনুযায়ী, প্রকৃত ঘটনাটি হচ্ছে এই যে, হুজুর (সা.) মক্কায় বিদায় হজ্জের যাবতীয় কার্যাবলি সমাপ্ত করে মদীনার দিকে যাত্রা করেন, পথে জুহফা নামক স্থান হতে তিন মাইল দূরে খুম নামক একটি স্থান পড়ে, এখানে একটি পুকুর ছিল, যাকে আরবিতে ‘গাদীর’ বলা হয়। তাই স্থানটির নাম হয়ে যায় ‘গাদীরে খুম’। এখানে সকল সাহাবাকে সমবেত করে হুজুর (সা.) একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণ প্রদান করেন। এ ভাষণে শেষ পর্যায়ে তিনি বলেন, আমি যার মাহবুব আলীও তাঁর মাহবুব। হে আল্লাহ! যে আলীকে ভালোবাসে, তুমিও তাকে ভালোবাস, আর যে আলীর সাথে শত্রুতা করে, তুমিও তার সাথে শত্রুতা করো।

বিভিন্ন বর্ণনা হতে জানা যায় যে, হযরত আলী (রা.)-কে রসুলুল্লাহ (সা.) ইয়েমেনে প্রেরণ করেছিলেন, সেখান থেকে তিনি হজ্বে যোগদান করেন। ইয়েমেনে অবস্থানকালে তিনি নিজের এখতিয়ারে এমন একটি ঘটনা ঘটান, যা তার সঙ্গীদের পছন্দ হয়নি। তাদের মধ্যে একজন এসে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে অভিযোগ করে। হুজুর (সা.) বললেন, আলীর আরো বেশি অধিকার ছিল। এ ধরনের সন্দেহের অবসানকল্পে হুজুর (সা.) উপরোক্ত বাক্য উচ্চারণ করেন, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হজরত আলীকে পরবর্তী খলিফা করার ভ্রান্ত মতবাদ শিয়াদের মনগড়া, যার কোনো ভিত্তি নেই।



 

Show all comments
  • Mohammad Sirajullah, M.D. ২৯ আগস্ট, ২০২০, ১:৫৩ এএম says : 0
    We face this question everyday and can not answer with our very limited knowledge of Islam. Question is what will happen to millions of people who did not hear about Prophet Muhammad (SA) and his prophethood. Even in Bangladesh people did not hear about the prophethood of Muhammad (SA) until 600 years after his death. What would happen to these fore fathers of ours. They lived in the period of Muhammad (SA) ‘s Nobuyat but did not hear his name even. Same is true for the millions of people who lived in American Continents. Next question comes the Bush men in Andaman, Australia, New zealand and Amazon (They stay naked) who were not visited by any body from Tabligee Jamat. Will they go to heaven ? or get burnt in Hell. Also What will happen to Hijras. Will any body with better religious knowledge please write an article on this subject for our education. Islam says education is mandatory for all the Muslims and Muslimas.
    Total Reply(1) Reply
    • Khan MG Mostofa ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৭:২৩ এএম says : 0
      You can read the meaning of the holy Quran in Bangla, then you can get your answers for your questions
  • Bangladesh ২৯ আগস্ট, ২০২০, ২:১৩ এএম says : 0
    Please closed Bangladeshi airport, Islamic male and female export to China, America, British, France or Russia. They work to bich world.
    Total Reply(0) Reply
  • Md Syed Alam ২৯ আগস্ট, ২০২০, ২:৩৮ এএম says : 0
    আমাদের দেশের অনেক মুসলিমের মনেই ভুল ধারণা যে, শিয়া সম্প্রদায় অন্য আর দশটা উপদলের মতই ইসলামের একটি শাখামাত্র। অনেকেই আবার ইরানকে আদর্শ মুসলিম দেশ হিসেবে কল্পনা করেন। শিয়া সুন্নি বিভক্তির নাম শুনলেই তারা হা হা করে তেড়ে আসেন। তারা বলেন, আমরা নাকি মুসলিমদের ঐক্য নষ্ট করছি। তারা প্রশ্ন করে কুর’আন হাদিসের কোথায় শিয়া সুন্নির উল্লেখ আছে?
    Total Reply(0) Reply
  • Jabair Ahammad ২৯ আগস্ট, ২০২০, ২:৩৯ এএম says : 0
    শিয়ারাই হলো রাজনৈতিক কারণে মুসলিমদের মূল জামা’আত থেকে স্বেচ্ছায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া প্রথম গোষ্ঠী, যারা পরবর্তীতে নিজেদের মনগড়া ভ্রান্ত আকিদা গড়ে নিয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Habibur Rahman ২৯ আগস্ট, ২০২০, ২:৩৯ এএম says : 0
    শিয়াদের মধ্যেও ভাগ আছে। ইমামিয়্যাহ, ইসনে আশারিয়্যাহ, ইসমাইলি, নুসাইরিয়্যাহ প্রভৃতি। এদেরকেই রাফেজি বলা হয়। শুধুমাত্র যায়িদিয়া সম্প্রদায় ছাড়া বাকি শাখাগুলোর আকিদা কুফরে পরিপূর্ণ।
    Total Reply(0) Reply
  • Hannan Kabir ২৯ আগস্ট, ২০২০, ২:৪০ এএম says : 0
    শিয়াদের মতে দ্বীনের পাঁচটি খুঁটি হলো – ওয়ালিয়াত/ইমামাত, সালাত, সাওম, যাকাত এবং হাজ্জ।
    Total Reply(0) Reply
  • Khorshed Gazi ২৯ আগস্ট, ২০২০, ২:৪১ এএম says : 0
    শিয়া কালিমা মুসলিমদের শাহাদাহ থেকে ভিন্ন। তাদের কালিমা হলো – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহি ‘আলিউন ওয়ালিউল্লাহি ওয়াসিয়্যু রাসুলুল্লাহি ওয়া খালিফাতুহু বিলা ফাসলিন।
    Total Reply(0) Reply
  • মুখোসের অাড়ালে ২৯ আগস্ট, ২০২০, ২:৪১ এএম says : 0
    100% সত্যি কথা, এই কথাগুলো আমি আগেও শুনেছি
    Total Reply(0) Reply
  • Alfaz Imam ২৯ আগস্ট, ২০২০, ২:৪২ এএম says : 0
    শিয়াদিরকে অবশ্যই কাফের বলতে হবে । ধন্যবাদ
    Total Reply(1) Reply
    • Monjur Rashed ২৯ আগস্ট, ২০২০, ৬:৩৮ পিএম says : 0
      Will you call Yazid Kafir ? Please do not make any division in the society.
  • Mohammad Abdul Majid ২৯ আগস্ট, ২০২০, ২:৪২ এএম says : 0
    শিয়ারা মুমিন নয় এটা শত ভাগ সত্যি । কারণ তারা আবু বকর রা, উমর রা, এবং ওসমান রা, এর খেলাফত কে অবইধ মনে করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Numan Talukder ২৯ আগস্ট, ২০২০, ২:৪৩ এএম says : 0
    কোন শিয়া ভাই দয়া করে বলবেন কি এটা কত পার্সেন্ট সত্য?
    Total Reply(0) Reply
  • MD. HABIBUR RAHMAN ২৯ আগস্ট, ২০২০, ৮:১৪ এএম says : 0
    bipod !
    Total Reply(0) Reply
  • Monjur Rashed ২৯ আগস্ট, ২০২০, ৭:১১ পিএম says : 0
    Dear Author, please write something about the injustice & brutality committed to Ahle Bait E Rasul (sm) during Omayyad dynasty. Every action has an equal & opposite reaction. Every act of sin must suffer in the long run.
    Total Reply(0) Reply
  • Abir Hasan ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৮:৫১ পিএম says : 0
    অনেক ভালোবাসা
    Total Reply(0) Reply
  • Abir Hasan ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৮:৫১ পিএম says : 0
    অনেক ভালোবাসা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন