পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের সক্ষমতা ২০৮১৩ মেগাওয়াট : বসিয়ে রাখা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি বেশ কিছু কেন্দ্র
দেশে চাহিদার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ২০ হাজার ৮১৩ মেগাওয়াট। গত জুনে সর্বোচ্চ উৎপাদন করা হয় ১২ হাজার ৭০ মেগাওয়াট। চাহিদা না থাকায় সরকারি ও বেসরকারি খাতে স্থাপিত বেশকিছু কেন্দ্র বসিয়ে রাখা হচ্ছে। তারপরেও ভারত থেকে নিয়মিত বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। পিডিবির তথ্যমতে, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে গড়ে খরচ পড়ে সাড়ে ৪ থেকে পাঁচ টাকা। এর মধ্যে ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ কিনতে খরচ হয় সবচেয়ে বেশি, যা প্রতি ইউনিটে ৭ টাকার বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদন ব্যয় বেশি পড়লেও গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোয় তা তিন টাকার কাছাকাছি। তাই গ্যাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলে ব্যয় অনেকটাই সাশ্রয় করা সম্ভব। আর জ্বালানির অভাবে গ্যাসভিত্তিক বেশকিছু কেন্দ্র বসেও আছে। এছাড়া নেপাল-ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা গেলে খরচ পড়বে তিন টাকার কম। তাই ভারতের পরিবর্তে নেপাল-ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, ভারতের সাথে যখন চুক্তি করা হয়েছিল তখন বাংলাদেশে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল। এখন আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বেড়েছে। তিনি বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো টেকসই হওয়ার পর চুক্তিগুলো বাতিল করা হবে। এমনকি বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত হলে তা অন্য কোনো দেশে আমরা রফতানিও করতে পারবো। বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. সুলতান আহমেদ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হন নি।
তিনি এ ব্যাপারে বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রীর সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, স্বাভাবিকভাবে গ্রীষ্মকালীন সময়ে ১১ থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। তবে করোনাকালে তা আট হাজার মেগাওয়াটের নিচে নেমে গিয়েছিল। এছাড়া শীত মৌসুমেও সাত থেকে আট হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। অথচ ভারত থেকে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য চারটি পৃথক চুক্তি করা হয়েছে ১৫ থেকে ২৫ বছর মেয়াদি।
পিডিবির তথ্যমতে, বর্তমানে ভারত থেকে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনটিপিসির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এনভিভিএন (বিদ্যুৎ ব্যাপার নিগম লিমিটেড) থেকে দুই ফেজে যথাক্রমে ২৫০ ও ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনা হয়। এছাড়া সেম্বকপ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট, পিটিসি থেকে ২০০ মেগাওয়াট ও ত্রিপুরা থেকে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়।
প্রথম ২০১৪ সালে জিটুজি ভিত্তিতে এনভিভিএনের ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। এ চুক্তির মেয়াদ ২৫ বছর। অর্থাৎ ২০৩৯ সালে এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। আর এনভিভিএনের বাকি ৩০০ মেগওয়াট, পিটিসির ২০০ ও সেম্বকপের ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করা হয় ২০১৮ সালে। এ তিন চুক্তির মেয়াদ ১৫ বছর। অর্থাৎ ২০৩৩ সালে এ তিন চুক্তি শেষ হবে। আর ত্রিপুরা থেকে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানিতে চুক্তি করা হয় ২০১৬ সালে। পাঁচ বছর মেয়াদি এ চুক্তি শেষ হবে ২০২১ সালে। এর মধ্যে ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ কিনতে খরচ হয় সবচেয়ে বেশি, যা প্রতি ইউনিটে ৭ টাকার বেশি। বাকি উৎসগুলো থেকে বিদ্যুৎ আনতে খরচ পড়ে গড়ে সাড়ে চার থেকে পাঁচ টাকা।
এদিকে শুধু সক্ষমতাই নয়, দেশে নিট সরবরাহকৃত বিদ্যুতেরও প্রায় ১০ শতাংশ আসছে ভারত থেকে। পিডিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে নিট বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৯৬৪ কোটি ৯ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এর মধ্যে পিডিবির নিজস্ব উৎপাদন ৩ হাজার ৪৮৫ কোটি আট লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বা ৫০ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ। এ সময় বেসরকারি খাত থেকে কেনা হয়েছে দুই হাজার ৮১১ কোটি ৬১ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বা ৪০ দশমিক ৩৭ শতাংশ বিদ্যুৎ। আর ভারত থেকে আমদানি করা হয় ৬৬৭ কোটি ৩৯ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। অর্থাৎ গত অর্থবছর ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ বিদ্যুৎ।
এদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে নিট বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৮৬১ কোটি ৬৩ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এর মধ্যে পিডিবির নিজস্ব উৎপাদন ছিল ৩ হাজার ৫১০ কোটি ৬৯ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বা ৫১ দশমিক ১৬ শতাংশ বিদ্যুৎ। বেসরকারি খাত থেকে কেনা হয় দুই হাজার ৬৭২ কোটি ২৯ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বা ৩৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ বিদ্যুৎ। আর ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল ৬৭৮ কোটি ৬০ বা ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
এ বিষয়ে পিডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে দৈনিকভিত্তিক মেরিট অর্ডার ডেসপাচ অনুসরণ করা হয়। এক্ষেত্রে কম ব্যয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। আর দেশের তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর চেয়ে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি সাশ্রয়ী। এক্ষেত্রে মোট খরচ পড়ে পাঁচ টাকার মতো। যদিও দেশের ফার্নেস অয়েলচালিত কেন্দ্রে শুধু জ্বালানি ব্যয়ই পড়ে পাঁচ টাকার বেশি। এর সঙ্গে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট যোগ করলে ৮-৯ টাকা খরচ পড়ে। তাই নিজস্ব সক্ষমতা থাকার পরও ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের সাশ্রয় হচ্ছে, তবে ভারতও বিদ্যুৎ বিক্রি করে মুনাফা করছে।
পিডিবির তথ্য মতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছর দেশে সার্বিক বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৭৯ কোটি ৬০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। ওই বছর বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কেনার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৯৩ কোটি ১০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। আর সরকারি খাতে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ বেড়ে হয় ৩ হাজার ১০৮ কোটি ২০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এছাড়া ভারত থেকে আমদানি করা হয় ৪৭৮ কোটি ৩০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ। ২০১৬-১৭ অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৫৩৪ কোটি ৭০ লাখ ঘণ্ট। ওই সময় বেসরকারি খাত থেকে কেনার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪০৯ কোটি ৪০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। আর সরকারি খাতে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৫৯ কোটি ৭০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। ওই বছর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ ছিল ৪৬৫ কোটি ৬০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ১৯ কোটি ৪ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এর মধ্যে বেসরকারি খাত থেকে কেনা হয় ২ হাজার ৩৭৮ কোটি ৬০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। আর সরকারি খাতে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২৫৮ কোটি ৬০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। আর ভারত থেকে আমদানি করা হয় ৩৮২ কোটি ২০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা।
এতে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি হয় নিট সরবরাহের সাত দশমিক ৬১ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আট দশমিক ৪১ শতাংশ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ হিসাবে গত দুই (২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০) অর্থবছর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বেড়েছে। যদিও বাংলাদেশের নিজস্ব বেশকিছু কেন্দ্র বসিয়ে রাখা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।