পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অবশেষে চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাক বায়োটেক লিমিটেডের তৈরি ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল বাংলাদেশে করার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এই টিকার ট্রায়াল বাংলাদেশে করার অনুমোদনের বিষয়টি বেশ কিছুদিন ঝুলে থাকার পর গতকাল চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বেঠকের পর সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ট্রায়াল অনুমোদনের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চায়নার সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তাদের সিনোভ্যাক কোম্পানি বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন দেবে। বাংলাদেশে তারা কিছু পরীক্ষাও করতে চায়, ট্রায়াল করতে চায়। সেই বিষয়ে আমরা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করেছি। ভ্যাকসিনের সমস্ত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি।
ভারত, চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের টিকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, প্রধানমন্ত্রী চিন্তা-ভাবনা করে একটা নির্দেশনা দিয়েছেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা যেহেতু চাই দেশে ভ্যাকসিন আসুক, তাহলে তার তো ট্রায়াল লাগবেই। সেই ট্রায়ালটা কাদের উপরে করব? প্রপোজাল হল ডাক্তার, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের ওপর আগে (ট্রায়াল) করা হবে। নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ট্রায়াল করতে দেব। যারা স্বেচ্ছায় আসবে, তাদের ওপরই শুধু ট্রায়াল হবে। ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত এবং সিনোভ্যাক কোম্পানিকেও এ কথা জানিয়ে দিয়েছি। একই সঙ্গে যত দ্রæত ভ্যাকসিন ট্রায়াল সম্পন্ন হবে ততো দ্রæত দেশ ভ্যাকসিন পাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ট্রায়াল শেষে টিকা পেতে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
ভ্যাকসিন ট্রায়ালের অনুমোদন প্রদান প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চীনের এই কোম্পানিটি গত কয়েক মাস থেকেই আইসিডিডিআর,বি এর মাধ্যমে ট্রায়ালের ব্যাপারে অনুরোধ করে আসছিল। সরকার তাদের ভ্যাকসিনের ব্যাপারে সব ধরণের যাচাই-বাছাই করেছে। কোম্পানিটি ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় ট্রায়াল শুরু করেছে। তুরস্কসহ বেশ কিছু দেশে ট্রায়াল শুরুর পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে। বাংলাদেশকে তারা (চীনা কোম্পানি) পছন্দের শীর্ষে রেখেছে শুরু থেকেই। বাংলাদেশ এই ট্রায়ালে অংশ নিলে এক লাখ পিস টিকা সামগ্রী ফ্রি লাভ করার পাশাপাশি আরো প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভ্যাকসিন ক্রয় করতে অগ্রাধিকার পাবে বলে সরকার মনে করছে। তাছাড়া চীনা সরকারের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অনেক দৃঢ়। সবকিছু বিবেচনা করেই চীনা ভ্যাকসিন কোম্পানিটিকে ট্রায়ালে অংশ নেবার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
অন্য কোনো দেশের ট্রায়াল বাংলাদেশে হবে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমানে বিশ্বের ৮টি কোম্পানি ভ্যাকসিন ট্রায়ালের চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে ট্রায়ালের আগ্রাহ দেখালে বাংলাদেশ তা বিবেচনা করবে। ভ্যাকসিন ক্রয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আগ্রহ কতটুকু এমন প্রশ্নের উত্তরে জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশে মাথাপিছু আয়ের অনুপাতে কিছু ভ্যাকসিন ফ্রি পাবে। তবে সরকার কেবল ফ্রি ভ্যাকসিন পেতেই বসে থাকবে না। সরকার ভ্যাকসিন ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই পিছিয়ে থাকবে না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, চীনের কাছ থেকে আমরা জানতে পেরেছি, বাংলাদেশে তাদের যে কর্মীরা রয়েছে এবং দূতাবাসের লোকজন রয়েছে, তাদের ওপরও এ কোম্পানি ট্রায়াল করবে। সভায় এ বিষয়ে ডিটেইল আলোচনা হয়েছে। অফিসিয়ালি জানিয়ে দিয়েছি, ট্রায়ালের ব্যবস্থা করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং আইসিডিডিআর,বি সহযোগিতায়। চীনের রাষ্ট্রদূতের সাথে আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। বাংলাদেশে সিনোভ্যাকের ওই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সব খরচ চীন বহন করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূত চীনের সরকারের সাথে আলোচনা করে যত দ্রæত সম্ভব তা শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা বলেছি আমাদের দেশে ট্রায়াল করার সুযোগ দেব, তবে আমরা যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিনটা পাই, সে কথাটার উপর জোর দিয়েছি।
এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, চীনের কাছ থেকে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন কেনা ও বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করতে দেয়া হবে কি না সে বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এরই ধারাবাহিকতায় আইসিডিডিআর,বি ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে গতকাল বৈঠক করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। গত ২২ জুলাই ঢাকায় চীন দূতাবাসের ডেপুটি হেড ইয়ান হুয়ালং জানিয়েছিলেন, ভ্যাকসিনের তৃতীয় এবং শেষ পর্যায়ের ট্রায়ালে বাংলাদেশে প্রথম স্বেচ্ছাসেবক হবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।
গত ১৯ জুলাই চীনা কোম্পানির তৈরি করা করোনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের হিউম্যান ট্রায়াল পরিচালনার জন্য আইসিডিডিআর,বিকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ সেন্টার (বিএমআরসি)। ওই দিন বিএমআরসি’র পরিচালক ডা. মাহমুদ-উজ-জাহান বলেন, প্রায় এক মাস আগে, আইসিডিডিআর,বি করোনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা করার অনুমতি চেয়ে বিএমআরসির কাছে আবেদন করেছিল। সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অনুমোদন পাওয়া গেছে।
আইসিডিডিআর,বি ও চীনের ভ্যাকসিন উদ্ভাবক কোম্পানি যৌথভাবে ট্রায়াল পরিচালনা করবে। মুগদা জেনারেল হাসপাতালের দুটি ইউনিট (ইউনিট ১ ও ২), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল এবং মহানগর জেনারেল হাসপাতালে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলবে।
এর আগে ১৭ জুন আইসিডিডিআর,বি অ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিসাইক্লিন বা ইভারমেকটিনের সংমিশ্রণে অ্যান্টি-প্যারাসিটিক ওষুধ আইভারমেকটিনের সুরক্ষা ও কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য র্যান্ডমাইজ, ডাবল-বøাইন্ড, প্লেসিবো-নিয়ন্ত্রিত ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান, আইডিসিআর,বি’র পরিচালক, ইপিআই’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার, আইসিডিডিআর,বি এর সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফিরদৌসি কাদেরী, ড. খালিকুজ্জামান, ড. তাজুল ইসলাম বারী প্রমূখ। সভায় অনলাইন ‘জুম’ এর মাধ্যমে অংশ নেন চীনা রাষ্ট্রদূত লি কিমিং।
উল্লেখ্য, কোনো টিকার চ‚ড়ান্ত অনুমোদনের আগে তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে মানুষের শরীরে প্রয়োগ করে তার ফলাফল দেখতে হয়। পরীক্ষায় নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত হলেই সেই টিকা অনুমোদন পায়। চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের করোনাভাইরাসের টিকা এখন তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।