Inqilab Logo

সোমবার, ১০ জুন ২০২৪, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দুর্গত এলাকায় ছড়াচ্ছে- পানিবাহিত রোগ বন্যার্তদের দুর্ভোগ বাড়ছে

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০২০, ১২:০২ এএম

বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও দুর্গত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। প্রায় দুই মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকা ঘরের ভিটে এখনো কাদা মাখা। সেই কাদামাখা ভিটেতে কষ্টে বসবাস করতে হচ্ছে। বানভাসিদের অনেকের ঘরে খাবার নেই। বন্যাকবলিত এলাকায় নেই সুপেয় পানি। দফায় দফায় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অনেক টিউবওয়েল নষ্ট হয়ে গেছে। পুকুরেও ঢুকেছে দূষিত পানি। খালে বিলে নদীতে হাওরে পানি থৈ থৈ করলেও খাবারযোগ্য বিশুদ্ধ পানি মিলছে না। ফলে বাধ্য হয়ে দূষিত পানি খেয়ে মানুষ রোগাক্রান্ত হচ্ছে। ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিসসহ নানা ধরনের পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া বন্যার্তদের জন্য যেন ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’। নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বন্যার্তরা এখন দিশেহারা। আমাদের জেলা সংবাদদাতাদের মাধ্যমে বানভাসিদের সাথে কথা বলে তাদের এ দুর্ভোগের কথা জানা যায়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (এনডিআরসিসি) সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত বন্যাকবলিত ৩৩ জেলার ৭ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৮ পরিবারের ৪৯ লাখ ৫২ হাজার ৪৩৭ জন মানুষ বানভাসি। প্রায় এই ৮ লাখ পরিবারের ৫০ লাখ মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। বন্যার পানিতে ঘর-বাড়ি ভেঙে গেছে, আয় নেই, রোজগারের পথ নাই, ঘরে খাবার নেই এমন অবস্থায় নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বানভাসিরা চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয় হাসপাতালেও চিকিৎসা মিলছে না বলে তাদের অভিযোগ।

টাঙ্গাইলের ভ‚ঞাপুর উপজেলার ফলদা ইউনিয়নের বাসিন্দা দিনমজুর আলি হোসেন বলেন, এবারের বন্যায় যে কী পরিমাণ দুর্ভোগ হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এতো লম্বা সময় বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা ঘরবাড়িতে এখন আর বসবাসের উপায় নাই। ঘরের চাল থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে ঘর-দুয়ারের সবকিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। পানিতে পচে গেছে সব। এর মধ্যে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ পানিবাহিত নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থায় থাকার ঘর ঠিক করবো নাকি চিকিৎসা করাবো ভেবে ক‚লকিনারা পাচ্ছি না।

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার রোকন উদ্দিন জানান, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে ঠিকই কিন্তু ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে আছে আমাশয় এবং জন্ডিস। সরকারি হাসপাতালে সব রোগের একই চিকিৎসা দেয়। সরকারি হাসপাতালে জ্বর আর জন্ডিসের একই ওষুধ। ডায়রিয়ার স্যালাইন মাঝেমধ্যে পাওয়া যায়, বেশিরভাগ সময় পাওয়া যায় না। তখন বাইরের দোকান থেকে কিনতে হয়। একইভাবে গাইবান্ধার সাঘাটা, কুড়িগ্রামের রৌমারী, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলায়ও বন্যার পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার বানভাসি মানুষরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এম তাহের জানান, ডায়রিয়া বা অন্যান্য রোগের প্রকোপ খুব একটা বেশি নয়। এখনও তেমন মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। তবে আমাদের প্রস্তুতি আছে। মেডিক্যাল টিম গঠন করা আছে। যেকোনও জরুরি প্রয়োজনে বা পরিস্থিতিতে আমরা চিকিৎসা সেবা দিতে পারবো।

এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করায় বিভিন্ন স্থানে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে। এ বিষয়ে বন্যাদুর্গত এলাকায় দিক নির্দেশনা দেয়া আছে। মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা আছে। বন্যা উপদ্রæত এলাকায় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্ভোগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ