বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
চলছে মুহাররম মাস। আরবি চান্দ্র বর্ষের প্রথম মাস। পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত অগণিত ঘটনার সাক্ষী হয়েছে এ মাসের ১০ তারিখ। হাদীসে আছে মুহাররম মাসের ১০ তারিখ পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে, আবার সেই ১০ তারিখই পৃথিবী ধ্বংস হবে। এছড়া ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে অনেক ঘটনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ইনকিলাবের পাঠকের জন্য কিছু ঘটনার উল্লেখ করা হলো।
হযরত আদম (আ.) এর তাওবা কবুল: আশুরার দিনে আল্লাহ তায়ালা বান্দার তওবা কবুল করে থাকেন। হাদীসে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে। হযরত আদম আ. এবং মা হাওয়া আ. যখন বেহেশত থেকে বের হয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন। অনিচ্ছাকৃত একটি ভুলের কারণে তারা দুনিয়াতে আসেন। তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহর কাছে বছরের পর বছর অনুশোচনায় পুড়তে থাকেন। আল্লাহর কাছে তওবা করতে থাকেন। আত-তাগরিব ওয়াত-তারহিব নামক কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, মুহাররম মাসের ১০ তারিখ হযরত আদম আ. এর তওবা কবুল করা হয়। এ ঘটনা থেকেও অনুধাবন করা যায় যে, আশুরার দিনে দুয়া কবুল করা হয়। তাই সকলের উচিত, এই দিনে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তওবা ইস্তেগফার করা।
হযরত নূহ (আ.) এর নৌকা জুদি পাহাড়ে নোঙর : আল্লাহর অবাধ্যতার কারণে নূহ আ. এর সময় পৃথিবীব্যাপী বন্যা হয়। সে বন্যায় ঈমানদাররা ব্যতীত সবাই ডুবে মারা যায়। আল্লাহর আদেশে হযরত নূহ আ. তার উম্মতদের নিয়ে একটি নৌকায় আরোহণ করেন। ৪০ দিন পর্যন্ত সেই নৌকায় ঈমানদার-মুসলমানরা ভাসতে থাকেন। অবশেষে আল্লাহর কুদরতে বন্যার প্লাবণ শেষ হলে, মুহাররমের ১০ তারিখে হযরত নূহ আ. তার উম্মতদের নিয়ে জুদি পাহাড়ে নোঙর করেন। (মুসনাদে আহমাদ)।
হজরত ঈসা (আ.) এর অলৌকিক জন্ম : পৃথিবীর ইতিহাসে এক অভাবনীয় ঘটনার জন্ম দেয় হযরত ঈসা আ. এর পৃথিবীতে আগমন। কোনো পুরুষের সংস্পর্শ ছাড়া কুমারী মাতা হযরত মরিয়াম আ. এর কোলে আসেন এক অলৌকিক সন্তান। ইতিহাস বলে, সেই দিনটিও ছিল মুহাররমের ১০ তারিখ। (আত-তাগরিব ওয়াত-তারহিব)।
হযরত মুসা (আ.) এর কওমের মুক্তি : এইদিনে অত্যাচারী জালিম শাসক ফেরাউনের হাত থেকে আল্লাহ তায়ালা বনী ইসরাঈলকে রক্ষা করেন। ফেরাউনের ওপর বিজয় দান করেন। এজন্য এ দিনটিকে মুসলিম মিল্লাতের বিজয়ের দিনও বলা হয়। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, আর বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করিয়ে নিলাম। আর ফেরাউন ও তার সৈন্যবাহিনী ঔদ্ধত্য প্রকাশ ও সীমালঙ্গনকারী হয়ে তাদের পিছু নিলো। অবশেষে যখন সে ডুবে যেতে লাগল, তখন বলল, আমি ঈমান এনেছি যে, সে সত্তা ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। যার প্রতি বনী ইসরাঈল ঈমান এনেছে। আর আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত। অথচ ইতঃপূর্বে তুমি নাফরমানী করেছ, আর তুমি ছিলে ফাসাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং আজ আমি তোমার দেহটি রক্ষা করব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাক। আর নিশ্চয়ই অনেক মানুষ আমার নিদর্শনসমূহের ব্যাপারে গাফেল। (সূরা ইউনুস : ৯০-৯২)।
এ বিজয়ের শোকরিয়াস্বরূপ হযরত মুসা আ. ও তার অনুসারীরা আশুরার দিনে রোজা রাখতেন। হযরত আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করিম সা. যখন মদীনায় আগমন করলেন, দেখলেন এদিনে ইহুদীরা রোজা রাখে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এটা কোন দিন যে, তোমরা রোজা রাখছ? তারা বলল, এটা এমন এক মহান দিন, যেদিন আল্লাহ মুসা আ. ও তার সম্প্রদায়কে মুক্তি দিয়েছিলেন ও ফেরআউনকে তার দলবলসহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।