বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মুহাররাম মাসের হেলাল উদিত হওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় আরবি চান্দ্রবর্ষ। ইসলামি পরিভাষায় যা হিজরি সাল হিসেবে গণনা হয়। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে এই মুহাররাম মাস অনেক ঘটন-অঘটনের সাক্ষী। বিশেষ করে মুহাররামের ১০ তারিখটি ইতিহাসে জ্বল জ্বল করছে। ইসলামি পরিভাষায় যে দিনটি আশুরা নামে পরিচিত। এই তারিখে যেমন অনেক আনন্দময় ঘটনা ঘটেছে, তেমনিভাবে ইতিহাসের সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনাও এই দিনে সংঘঠিত হয়েছে। এ দিন অন্যায়ের প্রতিবাদ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মত্যাগের এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত গড়েছেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কলিজার টুকরা হজরত ইমাম হোসাইন বিন আলী (রা.)। ঐতিহাসিক আশুরার মহিমান্বিত এই দিনে সংগঠিত হয় কারবালার শোকাবহ, মর্মস্পর্শী, হৃদয়বিদারক ও বিষাদময় এক ঘটনা।
৬৮০ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৬১ হিজরি সালের ১০ মহররম আশুরার দিনে ইরাকের প্রসিদ্ধ নগরী কুফা’র অদূরে ফোরাত নদীর তীরবর্তী কারবালা প্রান্তরে অত্যাচারী শাসক ইয়াজিদের বর্বর সেনাবাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পরিবার-পরিজন এবং ৭২ জন সঙ্গীসহ হযরত হোসাইন (রা.) নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন। তৃষ্ণার্ত নারী-পুরুষ, এমনকি শিশু সদস্যদেরও এক ফোটা পানি পান করতে দেয়নি নিষ্ঠুর সেই বাহিনী।
নাগালের মধ্যে পানি থাকার পরও তা থেকে বঞ্চিত হয়ে কারাবলার প্রান্তরে সেই অন্যায় ও অসম যুদ্ধে হযরত হোসাইন (রা.) এর কোলেই তার প্রিয় শিশুপুত্র শত্রুর নিক্ষিপ্ত তিরের আঘাতে মর্মান্তিকভাবে শহীদ হন। যা শুধু অমানবিকই ছিল না, যুদ্ধ আইনেরও পরিপন্থি ছিল। হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) তাতেও বিন্দুমাত্র ঘাবড়ে না গিয়ে একাকী শত্রুবাহিনীর ওপর বীর বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েন। জীবনের শেষ শক্তি অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যান। এক সময় তিনি অসীম সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করতে করতে শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেন। রেখে যান আধিপত্যবাদ, অত্যাচারী, অন্যায়কারী জালিমের কাছে মাথানত না করে অকাতরে জীবন বিলিয়ে দেয়ার সুমহান আদর্শ। আত্মত্যাগের এক বেদনাবিধুর ইতিহাস।
ঘটনাবহুল ঐতিহাসিক ১০ মুহাররাম কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীর অবহেলিত, নির্যাতিত ও বঞ্চিত মানুষের সাথে করা অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াবার শক্তি জোগায়। অনুপ্রেরণা জোগায় ন্যায়ের পক্ষে সোচ্চার হয়ে প্রয়োজনে জীবন বিলিয়ে দেয়ার। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় হযরত হোসাইন (রা.) এর শাহাদাত পৃথিবীর ইতিহাসে অনুকরণীয়, অনুসরণীয় ও অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আছে।
কারবালার প্রান্তরের এ ঐতিহাসিক ট্র্যাজেডি ইসলামের সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে প্রয়োজনে জীবন বিলিয়ে দেয়ার এক অনুপম উদাহারণ। নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে জালিমের বিরুদ্ধে, অত্যাচারীর বিরুদ্ধে সীনা টান করে ঘুরে দাঁড়াবার শিক্ষাই আমাদের দিয়ে গেছেন হযরত হোসাইন (রা.)। আশুরার এ দিনে নবী করিম সা.-এর আদরের দৌহিত্র বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন, ন্যায়ের জন্য, মজলুমের জন্য, সর্বোপরী ইসলামের জন্য শাহাদাত বরণ করা গৌরবের। ইতিহাস বলে, কারবালার আদর্শেই বার বার ইসলামের পুনরুজ্জীবন ঘটেছে। তাই তো কবি বলেছেন, ‘ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হর কারবালা কে বাদ’ অর্থাৎ ইসলাম জীবিত হয় প্রতি কারবালার পর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।