Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

যেভাবে স্বৈরশাসক হলেন বেলারুশের লুকাশেঙ্কো : নিউইয়র্ক টাইমস প্রতিবেদন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০২০, ৭:৫০ পিএম

জনগণের নেতা থেকে যেভাবে স্বৈরশাসক হয়েছেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো, তার উপর প্রতিবেদন করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। ২৬ বছর ধরে বেলারুশকে কঠোর হাতে শাসন করা প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো তার জেনারেলদের নিজের ১৫ বছরের ছেলেকে স্যালুট জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। বিরোধীদের গুম করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করেছেন।

প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে, লুকাশেঙ্কো কোভিড-১৯ মহামারীরর সময় জনগণকে হকি খেলতে, ট্র্যাক্টর চালাতে বলেছেন এবং এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। লুকাশেঙ্কো বেলারুশকে এক দলের রাষ্ট্র থেকে এক ব্যক্তির রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। তার দীর্ঘ প্রেসিডেন্সিতে বেলারুশ রাশিয়া এবং ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাফার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিয়েছে। লুকাশেঙ্কো খুব সচেতনভাবেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অনুকরণ করে গিয়েছেন। গত মাসে মস্কোর বিরুদ্ধে তাকে উৎখাতের অভিযোগ আনার পর নির্বাচন নিয়ে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে এখন মস্কোতেই আশা খুঁজছেন।
১৯৯৩ সালে আইনসভার সদস্য হওয়ার ৬ মাসের মাথায় জনগণের সমর্থন নিয়ে প্রেসিডেন্ট হন লুকাশেঙ্কো। বেলারুশে তৎকালীন মার্কিন কূটনৈতিক জর্জ ক্রোল বলেন, তিনি জনসাধারণের নেতা, একজন বহিরাগত, যিনি জনগণের জন্য কথা বলেন, যিনি মনে করেন জনগণ গণতন্ত্র, বাজার অর্থনীতি এবং পুরনো কমিউনিস্ট পার্টির এলিটদের শিকার হয়েছে। ক্রোল জানান, আজকের বেলারুশ উত্তর কোরিয়া নয়। কিন্তু যদি আপনি লুকাশেঙ্কোকে অতিক্রম করেন তবে আপনাকে এমন শিক্ষা দেয়া হবে যে আপনি আর কখনোই সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবেন না। ১৯৯৪ সালে লুকাশেঙ্কোর নির্বাচনি প্রচারণার ম্যানেজার আলেক্সান্ডা ফেদুতা বলেন, ‘তিনি যখন শুরু করেছিলেন তিনি বিশ্বাস করতেন তিনি জনগণের জন্য করছেন। জনগণ এমন একজনকে চাইতো যে এলিটদের শাস্তি দিতে পারবে। লুকাশেঙ্কো পদ্ধতিগত শোষণ বন্ধ করেছিলেন। কিন্তু আজ তিনি নিজেই তা হয়ে উঠেছেন।’

৯ আগস্টের বিতর্কিত নির্বাচনের পর থেকে রাজপথে লুকাশেঙ্কোর পদত্যাগের দাবি করছে লাখ লাখ মানুষ। গত রোববার লিথুয়ানিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়া বিরোধী দলীয় নেত্রী শ্বেতলানা তিখানোভস্কায়ার ডাকে রোববার প্রায় ১ লাখ বিক্ষোভকারী রাজধানী মিনস্কে জমায়েত হয়। তাদের একটাই দাবি ‘লুকাশেঙ্কো পদত্যাগ করো’। তবে লুকাশেঙ্কো রোববার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রসজ্জিত সামরিক পোশাকে পুলিশ অফিসারদের দাঙ্গা দমনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং সম্ভাব্য ন্যাটো হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। লুকাশেঙ্কোর সরকার প্রতিনিয়ত সমালোচকদের হয়রানি, কারারুদ্ধ এবং নির্যাতন করে আসছে। অনেককে গুম করা হয়েছে। সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের গলা চেপে ধরা হয়েছে। গত কয়েকদিনের বিক্ষোভে ২ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছেন শত শত, আটক হয়েছেন প্রায় ৭ হাজার। গত সপ্তাহে মিনস্কে আন্দোলনরতদের প্রতি লুকাশেঙ্কো বলেছেন, আমি ফেরেশতা নই। আপনারা আমার কঠোরতা জানেন। কঠোরতা না থাকলে দেশ চালানো যায় না।

সম্প্রতি নির্বাচনী প্রচারণায় শ্বেতলানাকে দুর্বল প্রার্থী বলে মন্তব্য করে লুকাশেঙ্কো বলেছেন, বেলারুশের সংবিধান প্রেসিডেন্টকে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দিয়েছে। যা এক নারীর জন্য নয়। আমাদের সমাজ এক নারীকে ভোট দিতে তৈরি নয়। লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজের প্রফেসর অ্যান্ডু উইলসন বলেন, শ্বেতলানা সুষ্ঠু নির্বাচনে জয় পেলে তা লুকাশেঙ্কোর জন্য একটি বড় ধাক্কা হতো। যিনি কিনা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন নারীর স্থান রান্নাঘরে। লুকাশেঙ্কোর জীবনি লেখক ভেলেরি কার্ভালেভিচ বলেন, সে নিষ্ঠুর। তার কোনো পারিবারিক এবং বন্ধু জীবন নেই। এমনকি তিনি এমন জীবনের কথা কখনোই ভাবতে পারেন না, যেখানে তিনি প্রেসিডেন্ট থাকবেন না। বেলারুশের সাবেক ব্রিটিশ কূটনৈতিক নাইজেল ডেভিড বলেন, লুকাশেঙ্কো নিজের পুত্রকে উত্তরাধীকার হিসেবে দেখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ